বিশ্বজমিন
‘দ. এশিয়া চিরস্থায়ী সংঘাত সহ্য করতে পারে না’
ভারত-পাকিস্তান অন্যরকম ‘যুদ্ধ’ চালাচ্ছে
মানবজমিন ডেস্ক
(২ দিন আগে) ৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:১৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৬:১৩ অপরাহ্ন

আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অন্যরকম এক যুদ্ধে লিপ্ত ভারত ও পাকিস্তান। পেহেলগাম হামলা ও তার ফলশ্রুতিতে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাতের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করতে, তদবির করতে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে উভয় দেশ। কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নেতৃত্বে ভারতের প্রতিনিধি দল তার দেশের পক্ষে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলে প্রচারণা চালাচ্ছে। অন্যদিকে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বে পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা বিদেশ সফর করছেন।
জাতিসংঘে পাকিস্তানের উচ্চপর্যায়ের সংসদীয় এই প্রতিনিধি দল এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছে মার্কিন প্রতিনিধি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যে, দক্ষিণ এশিয়া চিরস্থায়ী সংঘাত সহ্য করতে পারে না। টেকসই শান্তির জন্য প্রয়োজন সংলাপ, সহযোগিতা এবং ন্যায়বিচারভিত্তিক কূটনীতি।
অনলাইন জিও নিউজ এ খবর দিয়ে বলছে, পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বে নয় সদস্যের এই প্রতিনিধি দল সম্প্রতি দুই দিনের সফরে নিউইয়র্কে পৌঁছায়। সফরের মূল উদ্দেশ্য ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরা এবং ভারতের প্রচারকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চ্যালেঞ্জ করা। দলটি জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি অ্যাম্বাসাডর ডরোথি শিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে তারা দক্ষিণ এশিয়ার ভঙ্গুর নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব, সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা করেন।
বিলাওয়াল বলেন, আমরা শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে আমাদের সার্বভৌমত্বে হামলার জবাবে আমরা সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত। পাকিস্তানি দলটি ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে। সেখানে তারা ভারতের ইসলামবিদ্বেষ, দখলীকৃত কাশ্মীরে দমন-পীড়ন, মিথ্যা প্রচারণা ও কাশ্মীরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নস্যাৎ করার প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে।
তারা বলেন, মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং সত্য ও ন্যায়বিচারের পক্ষে সোচ্চার হতে হবে। জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি ফু কং-এর সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তান-চীন যৌথভাবে ভারতের একতরফা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তারা জাতিসংঘ সনদের মূলনীতি, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে শান্তি রক্ষার ওপর জোর দেন। চীনের পাশাপাশি রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও পাকিস্তানি সংসদীয় দল বৈঠক করে। তারা ভারতের পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার, বেসামরিক জনগণের উপর হামলা এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ জানান।
তারা রাশিয়াকে আহ্বান জানান, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা নিতে। পাকিস্তানি প্রতিনিধি দল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে। এর মধ্যে আছে ডেনমার্ক, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্লোভেনিয়া, আলজেরিয়া, সোমালিয়া ও গায়ানা। পাকিস্তান ভারতের ‘অসত্য প্রচার’ খণ্ডন করে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয় এবং জানায় যে, সিন্ধু নদের পানিচুক্তি স্থগিত করা হলে পাকিস্তানে পানির সংকট, খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে এবং একটি পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। তারা বলেন, এই অঞ্চল আর কোনো সংঘাত সামাল দিতে পারবে না। এখন সময় এসেছে সংঘাত ব্যবস্থাপনা নয়, বরং সংঘাত নিরসনের পথে হাঁটার।
প্রতিনিধি দলটি সকল আলোচনায় বারবার কাশ্মীর সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে জানায়, টেকসই শান্তির জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাব এবং কাশ্মীরি জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান অত্যাবশ্যক। তারা জানান, ভারতের তরফে চালানো অপারেশন সিঁদুরের মতো আগ্রাসী পদক্ষেপগুলো শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
ভারতও পাল্টা কূটনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে ৩৩টি দেশে সাতটি বহুদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। তারা পাকিস্তানকে জঙ্গি সংগঠনের সমর্থক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে এবং অপারেশন সিঁদুুরকে আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরছে। উল্লেখ্য, এই অভিযানে বহু নিরীহ বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারান।