বিশ্বজমিন
ভারতীয় ২ জন মেজর, পরকীয়া সম্পর্ক ও আদালতের মন্তব্য
মানবজমিন ডেস্ক
(১ দিন আগে) ২৪ মে ২০২৫, শনিবার, ৪:৫৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১:০০ অপরাহ্ন

দুইজন ভারতীয় সেনা কর্মকর্তার কথিত পরকীয়া সম্পর্কের মামলায় ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার রক্ষা করে দিল্লির একটি আদালত এক হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়ার আবেদন খারিজ করেছে। আবেদনটি করেন ভারতীয় একজন মেজর। তিনি অভিযোগ করেন, তার স্ত্রী আরেকজন সেনা অফিসারের (মেজর) সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ওই কথিত যুগল হোটেলে তাদের গোপনীয়তার অধিকার উপভোগ করতে পারেন এবং তাদের ডেটা ও বুকিং সংক্রান্ত তথ্য তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে সুরক্ষিত রাখা উচিত। সিভিল জজ বৈভব প্রতাপ সিং বলেন, হোটেল কর্তৃপক্ষের উচিত অতিথিদের গোপনীয়তা রক্ষা করা।
বিচারক আরও বলেন, হোটেলে একজন অতিথির গোপনীয়তার অধিকার শুধু কক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সাধারণ এলাকাতেও তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে তা বজায় থাকে, যদি সেই তৃতীয় পক্ষ সেখানে উপস্থিত না থাকে এবং তার কোনো আইনগত অধিকার না থাকে। এই একই যুক্তি বুকিং তথ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আবেদনকারী মেজরের পক্ষ থেকে স্ত্রী ও কথিত প্রেমিকের শুনানির অধিকার নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কারণ মামলায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্তই করা হয়নি, যদিও তারা মামলার কেন্দ্রীয় চরিত্র। আদালত মন্তব্য করে যে- যে ব্যক্তি মামলার পক্ষ নয়, তার ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা তার গোপনীয়তা ও স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের অধিকারের লঙ্ঘন হবে এবং এর ফলে সম্ভাব্য সুনামের ক্ষতি হতে পারে। বিচারক আরও স্পষ্ট করেন যে, আদালত কোনো ব্যক্তিগত বিবাদের তদন্তকারী সংস্থা নয় এবং আদালতকে ব্যক্তিগত অভিযোগ প্রমাণের অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রমাণ সংগ্রহের চ্যানেল হিসেবে ব্যবহার করা যায় না।
বিচারক বলেন, আবেদনকারীকে ১৯৫০ সালের সেনা আইন ও বিদ্যমান বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিকার খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বেসামরিক আদালতের মাধ্যমে সেনার অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাকে পাশ কাটানো বা সম্পূরক হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। বিচারক তার আদেশে গ্রাহাম গ্রিনের উপন্যাস ‘দ্য এন্ড অব দ্য অ্যাফেয়ার’ থেকে একটি উক্তি তুলে ধরেন- ‘বিশ্বস্ততার বোঝা থাকে সেই ব্যক্তির উপর, যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সম্পর্ক ভেঙেছে সেই ব্যক্তি, যে বিয়ের শপথ নিয়েছে ও তা ভেঙেছে। বহিরাগত ব্যক্তি কোনো প্রতিশ্রুতির অধীন ছিল না।’ তিনি ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ২০১৮ সালের জোসেফ শাইন বনাম ভারত সরকার মামলার রায়ের কথা উল্লেখ করেন। সেখানে আদালত বলেছিল, একজন পুরুষ আরেকজনের স্ত্রীর ভালোবাসা ‘চুরি’ করেছে এই ধারণা ভুল এবং পুরনো। নারী যেন তার নিজে থেকে ভালোবাসা বেছে নিতে না পারে এমন ধারণা অমানবিক ও লিঙ্গ বৈষম্যমূলক। বিচারক মনে করিয়ে দেন যে ভারতীয় সংসদও পরকীয়ার আইন (অ্যাডাল্টারি ধারা) বাতিল করেছে এবং ‘ভারতীয় ন্যায় সনহিতা’ প্রণয়নের সময় এ ধরনের পিতৃতান্ত্রিক ও লিঙ্গ বৈষম্যমূলক ধ্যানধারণার কোনো স্থান রাখেনি।