বিশ্বজমিন
সিরিয়ায় নিখোঁজ মার্কিন সাংবাদিককে কারাগারে বন্দি করেছিলেন আসাদ: গোয়েন্দা তথ্য
মানবজমিন ডেস্ক
(১ দিন আগে) ২ জুন ২০২৫, সোমবার, ৭:০৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৫ অপরাহ্ন

সিরিয়ায় নিখোঁজ হওয়া মার্কিন সাংবাদিক অস্টিন টাইসকে কারাগারে বন্দি করেছিলেন দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। প্রথমবারের মতো চাঞ্চল্যকর এই তথ্য সামনে এনেছে বিবিসি। সিরিয়ার একাধিক গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমটি। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র বারবার অস্টিনের আটকের বিষয়টি উত্থাপন করলেও তা অস্বীকার করেছে আসাদ সরকার। তারা বলেছে অস্টিনের আটকের বিষয়ে তারা কিছুই জানে না। তবে গোয়েন্দা নথিতে ওই সাংবাদিকের সঙ্গে কি কি ঘটেছে তার সকল বিবরণ উঠে এসেছে।
২০১২ সালের আগস্টে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে নিঁখোজ হন অস্টিন টাইস। তার ৩১তম জন্মবার্ষিকীর কিছুদিন পরেই ঘটে এই ঘটনা। তিনি একজন ফ্রিল্যান্সিং সাংবাদিক ছিলেন। নিঁখোজ হওয়ার সাত সপ্তাহ পর একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। যেখানে তাকে চোখ ও হাত বাধা অবস্থায় দেখা যায়। আরও দেখা যায়, একদল সশস্ত্র ব্যক্তি তাকে জোরপূর্বক কালেমা পড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে অস্টিনের অপহরণকারীদের জিহাদিস্ট মনে হলেও মার্কিন বিশ্লেষকরা এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, হয়তবা এটা সাজানো কোনো ঘটনা। কোনো গোষ্ঠী বা সরকার তার গুম হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেনি। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজও পাওয়া যায়নি। তবে এ নিয়ে শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা।
বছর খানেক আগে রেডিও ৪ এর একটি পডকাস্টের জন্য চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে এই তথ্যটি প্রকাশ করেছে বিবিসি। তখন সিরিয়ার একজন তদন্তকারীকে গোয়েন্দাদের দ্বারস্থ করা হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাশার আল আসাদের পতনের পর গোয়েন্দাদের নথির মাধ্যমে প্রথম অস্টিনকে কারাগারে বন্দি করার বিষয়টি সামনে আসে। সিরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন শাখায় ‘অস্টিন টাইস’ নামের নথি পাওয়া গেছে। যেগুলোর সত্যতা যাচাই করেছে বিবিসি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। ‘অতি গোপন’ হিসেবে চিহ্নিত এক নথি থেকে জানা যায়, অস্টিনকে ২০১২ সালে রাজধানী দামেস্কের একটি কারাগারে আটক রাখা হয়। তাকে তাহুনেহ নামের একটি কারাগারে রাখা হয়েছিল বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া সিরিয়ার উচ্চ পর্যায়ের সাবেক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছে যে, অস্টিনকে দামেস্কের আধাসামরিক বাহিনী দিয়ে আটক করা হয়। সিরিয়ার পতিত সরকার বারবার ওই সাংবাদিকের অপহরণের বিষয়টি অস্বীকার করলেও বিবিসির অনুসন্ধানে তাদের দাবি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, অস্টিন টাইসকে দামেস্কের দারাইয়া থেকে আটক করা হয়েছে। এরপর তাকে প্রেসিডেন্ট আসাদের অনুগত একটি আধাসামরিক বাহিনীর কাছে দেয়া হয়। যারা জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী বা এনডিএফ নামে পরিচিত। অস্টিন এই বাহিনীর কাছে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আটক ছিলেন বলে বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে সিরিয়ার এক কর্মকর্তা। তখন পেটের সমস্যার কারণে অস্টিনকে দুবার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে জানা গেছে সেসময় সংক্রমক কোনো রোগে ভুগছিলেন মার্কিন ওই সাংবাদিক।
এনডিএফ-এর এক সদস্যও অস্টিনকে কারাগারে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেছেন মার্কিন এই সাংবাদিককে কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন আসাদ। যেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক বিষয়ে খেলা যায়। অস্টিন একবার জানালা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে তিনি ধরা পড়ে যান। তাকে দুইবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন সিরিয়ার এক কর্মকর্তা।
আসাদ সরকারের পতনের পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে অস্টিন এখনও বেঁচে আছেন। তার দুইদিন আগে অস্টিনের মা ডেবরা টাইস বলেন, তাকে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে তার সন্তান এখনও বেঁচে আছেন। তবে আসাদ পালিয়ে যাওয়ার পর কারাগারগুলো যখন উন্মুক্ত করা হয়, তখন অস্টিনের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তিনি কোথায় আছেন সে বিষয়টি এখনও অজানা। যদিও সিরিয়ার বর্তমান সরকারের সঙ্গে আসাদ সরকারের নানা কর্মকাণ্ড তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এখনও ওই সাংবাদিকের কোনো খোঁজ পাইনি তারা।