শেষের পাতা
স্বস্তি নিয়েই বাড়ি ফিরছে মানুষ
স্টাফ রিপোর্টার
৪ জুন ২০২৫, বুধবার
দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। আর এই উৎসবকে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে যে যেমন পারছেন তাতে চেপেই যানজট, বৃষ্টি উপেক্ষা করে গন্তব্যে রওনা করছেন। এখন পর্যন্ত স্বস্তি নিয়েই বাড়ি ফিরছে মানুষ।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর গাবতলী টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, যানজট ও ভোগান্তির ভয়ে ছুটি শুরু হওয়ার আগেই বাড়ির পথে রওনা করছে অনেকে। কেউ আবার ঝক্কি এড়াতে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদেরকে আগে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আর এখন যারা বাস কাউন্টারে আসছেন তাদের বেশির ভাগই আগে থেকে টিকিট সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। বেসরকারি চাকরিজীবী মো. সাইফুল ইসলাম। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে বাসে উঠিয়ে দিতে গাবতলীতে এসেছিলেন তিনি। সাইফুল বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে আমার অফিসের ছুটি শুরু হবে। কিন্তু ওইদিনে যাত্রীর অনেক চাপ থাকবে। অনেক চেষ্টার পরও বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের কোনো টিকিট পাইনি। বাচ্চাদের নিয়ে তখন যেতে খুব কষ্ট হবে। তাই চিন্তা করলাম পরিবারের সদস্যদের আগে বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। তারপর আমি একা যেকোনোভাবে চলে যেতে পারবো। এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমা আক্তার, ভাই রুবায়েত, তানভীরও গতকাল রয়েল এক্সপ্রেসের বাসে চেপে গাবতলী থেকে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশ্যে রওনা হন। নাজমা বলেন, বৃষ্টি, ভোগান্তি, যানজট সবই থাকবে। এর মাঝেই আমাদেরকে যেতে হবে। ঈদে বাড়িতে যাচ্ছি- এটাই আনন্দের, আর কিছু বুঝি না। তবে এখনো টার্মিনালে যাত্রীদের চাপ কিছুটা হলেও কম রয়েছে। মূল চাপ শুরু হবে বুধবার রাত থেকে। পলাশ মাহমুদ নামে আরেক যাত্রী বলেন, বুধবার অফিস করে ছুটি শুরু। কিন্তু পরিবার নিয়ে একটু স্বাচ্ছন্দ্যে যেতে আমি একদিন আগেই রওনা হয়েছি। বাড়িতে মা-বাবা, ভাই-বোনেরা আছে। অনেক দিন পর এই ঈদের ছুটিতে সকলের সঙ্গে দেখা হবে, আনন্দ হবে। তিনি বলেন, প্রতিবারই এই ঈদ যাত্রার সময় বিভিন্ন বাহিনী, সংস্থা কাউন্টারে কাউন্টারে অভিযান চালায়। বলে- বেশি ভাড়া যেন না নেয়া হয়, ফিটনেসহীন লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি রাস্তায় চলবে না। কিন্তু আমরা তো ঠিকই অন্য সময়ের তুলনায় বেশি ভাড়া দিয়ে যাচ্ছি। আর ভাঙা টিনের মোয়ার মতো লক্কড়-ঝক্কড় বাস নতুন রং করে রাস্তায় চালানো হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন আমার পকেট কাটা হচ্ছে অন্যদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এই ঈদের সময় বিরামহীনভাবে চালকদের দিয়ে গাড়ি চালানো হয়। একজন চালক রাত জেগে একটি ট্রিপ নিয়ে ঢাকা থেকে দর্শনা যাচ্ছেন। সেখান থেকে আবার সে ঢাকায় ফিরছেন। কিছু সময় বিরতি দিয়ে তাকে আবারো বাস নিয়ে এই লম্বা পথ অতিক্রম করতে হয়। অনেক সময় চালকদের চোখে ঘুম-ক্লান্তি থাকে। এতে যেকোনো সময় প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটে। এসব দিকে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়া উচিত। এদিকে অনেকে আবার আগাম টিকিট না পেয়ে চাঁদ রাতের টিকিট খুঁজতে গাবতলীতে আসছেন। কিন্তু যাত্রীর চাপে নির্ধারিত দিনের টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। গাবতলীর রয়েল এক্সপ্রেস বাস কাউন্টারের ম্যানেজার শান্ত বলেন, এইবার সকল চাকরিজীবীর ঈদের ছুটি একসঙ্গে পড়েছে। একই সঙ্গে সপ্তাহের শেষদিন। তাই বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের গাড়ির টিকিট যাত্রীদের চাহিদার শীর্ষে। অনেক আগেই এই দুইদিনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ছুটি বেশি থাকায় ও উপায় না পেয়ে অনেকেই ঈদের দিনের টিকিটও কেটে নিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে কমলাপুর রেল স্টেশন থেকেও ট্রেনে চেপে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করছেন হাজার হাজার মানুষ। টিকিট ছাড়া এবার ঈদ যাত্রায় এখন পর্যন্ত কেউই ট্রেনে চাপতে পারছেন না। তবে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগও তুলেছেন অনেকে। গতকাল কমলাপুর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া মো. নাজমুল হাসান পাভেল বলেন, আমি একটি বেসরকারি সফ্টওয়্যার ফার্মে চাকরি করি। ঈদের অগ্রিম টিকিট ছাড়ার দিনই আমি অনেক চেষ্টা করে আমার ও আমার স্ত্রীর জন্য দুইটা টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছি। সেই টিকিটেই বাড়ি ফিরছি। অনেকদিন বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা হয় না। এবার অনেকদিন ছুটি পেয়েছি। আশা করছি, আত্মীয়-স্বজন সকলের সঙ্গে দেখা হবে, মজা হবে। কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, দুই একটা ট্রেন বাদে আমাদের বেশির ভাগ ট্রেনই নির্দিষ্ট সময়ে প্ল্যাটফরম ছেড়ে যাচ্ছে। তবে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে কিছু কিছু ট্রেনের শিডিউলে একটু বিঘ্ন ঘটতে পারে। তিনি বলেন, ট্রেনের টিকিট ছাড়া স্টেশনের ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। একই সঙ্গে যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণে নিষেধ, টিকিট কালোবাজারির দিকেও আমাদের নজর রয়েছে। আমরা শতভাগ ট্রেন টিকিট অনলাইন করে দিয়েছি। যাত্রীসেবায় ঈদের দিনও আমাদের দুইটা মেইল ট্রেন চালু থাকবে। ৮ তারিখ থেকে ফিরতি কিছু ট্রেন চালু করা হবে। তবে ৯ তারিখ থেকে পুরোপুরি ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
পাঠকের মতামত
১০ দিন ছুটি হলে মহা স্বস্তি নিয়ে যেতে পারবে, এটা বলার মতো ণা