শেষের পাতা
শোলাকিয়ায় সকাল ৯টায় ঈদ জামাত
স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে
৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবারপবিত্র ঈদুল আজহার জামাতের জন্য এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দান। শোলাকিয়ার ঐতিহ্যবাহী এই ঈদগাহে শনিবার সকাল ৯টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এবারের ১৯৮তম ঈদুল আজহার জামাতে ইমামতি করবেন গ্র্যান্ড ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। এছাড়া বিকল্প ইমামের দায়িত্বে রয়েছেন হয়বতনগর এইউ কামিল মাদ্রাসার তাফসির বিভাগের প্রভাষক যোবায়ের ইব্নে আব্দুল হাই। গত ঈদুল ফিতরের মতো এবারের ঈদুল আজহার জামাতেও সর্বোচ্চসংখ্যক মুসল্লির সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঈদ জামাতকে ঘিরে শোলাকিয়া ময়দানে গড়ে তোলা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরবচ্ছিন্ন নজরদারির জন্য পুলিশের ৮টি ড্রোন উড়বে শোলাকিয়ার আকাশে। বিজিবি, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, আরআরএফসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে শোলাকিয়া ঈদগাহ্ ময়দানকে। ঈদগাহ্ ময়দানের বাইরে-ভেতরে ও প্রবেশ পথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
বুধবার সকালে ঈদগাহ্ ময়দানের সর্বশেষ প্রস্তুতি পরিদর্শনে গিয়ে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান এসব তথ্য জানিয়েছেন। এ ছাড়া শোলাকিয়া ঈদগাহ্ মাঠে ঈদের জামাতের নিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেছেন ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কাজেম উদ্দিন ও র্যাব-১৪, কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশরাফুল কবির। তারা জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে মাঠের বাইরে, মাঠের ভেতরে ও প্রবেশ পথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি করা হবে শোলাকিয়া ময়দান ও আশপাশের এলাকা। মাঠের ভিতর-বাহিরে সাদা পোশাকেও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে থাকবেন। এছাড়া মুসল্লিদের সুবিধার্থে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা নেই। এখানে জামাত আদায় শেষে নিরাপদে মুসল্লিগণ বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন বলে তারা জানান।
জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতে দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ঈদের দিন বাংলাদেশ রেলওয়ে ২টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে। ঈদুল আজহার দিন ‘শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল’- নামের ২টি বিশেষ ট্রেনের একটি সকাল ৬টায় ভৈরব বাজার থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে এবং অপরটি সকাল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে। জামাত শেষে দু’টি ট্রেনই আবার ভৈরব ও ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে কিশোরগঞ্জ ছেড়ে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শোলাকিয়ার ঐহিত্যবাহী জামাতে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য প্রতিবারই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিগণ ছুটে আসেন। তবে কোরবানির ব্যস্ততার কারণে ঈদুল আজহার জামাতে ঈদুল ফিতরের তুলনায় মুসল্লির সংখ্যা অনেক কম হয়ে থাকে।
১৮২৮ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৭ একর জমির উপর এ মাঠের গোড়াপত্তন হয়। ওই বছর স্থানীয় সাহেব বাড়ির ঊর্র্ধ্বতন পুরুষ সৈয়দ আহমদ (র.) এর ইমামতিতে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সে ঈদের জামাতে মুসল্লির সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ। এই সোয়া লাখ থেকেই উচ্চারণ বিবর্তনে বর্তমানে ‘শোলাকিয়া’- নামকরণ হয়েছে।