শেষের পাতা
ফ্যাসিবাদী চক্রের পতনে জনগণ স্বস্তির পরিবেশে ঈদ করবে
স্টাফ রিপোর্টার
৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
৫ই আগস্টে ফ্যাসিবাদী চক্রের পতনের পর দেশে জনগণ কিছুটা স্বস্তির পরিবেশে এবার ঈদুল আজহা উদ্যাপন করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বুধবার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দ্রব্যমূল্য, সামাজিক অনাচার ও নানামুখী সংকটের অভিঘাত সত্ত্বেও দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মন ঈদের অমলিন আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ। দেশের জনগণ দেড় দশক ধরে ফ্যাসিবাদের এক কঠিন সময় পার করেছে। গত বছর ৫ই আগস্টে ফ্যাসিবাদী চক্রের পতনের পর দেশে কিছুটা স্বস্তির পরিবেশে এবার মানুষ ঈদুল আজহা উদ্যাপন করবে। ফ্যাসিবাদী আমলে তাঁবেদার অপশক্তির অবৈধ ক্ষমতা লোভের কারণে রাষ্ট্র ও সমাজে নীতি, নৈতিকতা, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের চূড়ান্ত অবক্ষয় ঘটে। এখন সকলে মিলে বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শান্তি, সমপ্রীতি, উন্নত নৈতিকতা ও পাহাড়সম বৈষম্য দূরীভূত করতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে হবে সর্বত্র। যেন বেপরোয়া লুটপাট, দুর্নীতি ও টাকা পাচারের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না হয়।
তিনি বলেন, ত্যাগের উৎসব হলো ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহার উৎসবের একটি অঙ্গ হচ্ছে কোরবানি। পশু কোরবানি হলো চিত্তশুদ্ধি ও পবিত্রতার একটি মাধ্যম। ধৈর্য ও বিশ্বাসের পরীক্ষার ঐতিহ্যের ধারা বেয়েই কোরবানি মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য করা হয়েছে। ঈদুল আজহার ত্যাগের চেতনা সমাজে ঐক্য, সংহতি ও সমপ্রীতির মেলবন্ধন সৃষ্টি করে। কোরবানির যে মূল শিক্ষা তা আমরা যদি নিজ জীবনে প্রতিফলিত করে মানবকল্যাণে ব্রতী হই তাহলে নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ করতে পারবো। বিশ্বাসীদের সে চেষ্টায় আত্মনিবেদিত থাকতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সকলের পক্ষে ঈদের আনন্দ যথাযথভাবে উপভোগ করা কঠিন হবে। মূল্যস্ফীতির তীব্রতা, খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, গৃহস্থালিতে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের তীব্র সংকটে জনজীবন সীমাহীন দুর্দশায় নিপতিত। স্বল্প আয়ের মানুষরা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় দিনযাপন করছে। ঈদের আনন্দের দিনে কেউ যাতে অভুক্ত না থাকে-সেদিকে আমাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। ঈদের আনন্দের উৎসব ভাগ করে নিতে হবে এক কাতারে সবাইকে।
অপর এক বাণীতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, বাংলাদেশ ২০২৫ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসকে বিভিন্ন তাৎপর্যপূর্ণ কর্মসূচি ও কার্যক্রমের মাধ্যমে পালন করছে। এমন এক সময়ে যখন অপরিণামদর্শী শিল্পায়নের পাশাপাশি অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিশ্ব জুড়ে পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান হুমকির মুখে ফেলছে, তখন এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই জীবনের প্রয়োজনীয়তা কতোটা জরুরি।
তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশগত বৈচিত্র্যে অনন্য। অতএব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই সমৃদ্ধ অনন্য পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের পবিত্র কর্তব্য। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিএনপি পরিবেশ সচেতন একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত। আমরা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, খাল খনন ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প এবং ক্ষতিকর পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপে সচেতনতা সৃষ্টিসহ নানা উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছি।
তারেক রহমান আরও বলেন, ১৯৭৭ সালে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প চালু করেন, যা পরবর্তীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ (ডিপার্টমেন্ট) হিসেবে রূপ নেয়। তার এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৫ সালে “বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন” প্রণয়ন করেন এবং দেশের প্রথম পরিবেশ আদালত প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরিবেশ সুরক্ষায় আইনি কাঠামোর পথপ্রদর্শক। আমাদের লক্ষ্য সবসময়ই একটি সবুজ ও পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান চরম অবনতিশীল জলবায়ু সংকট ও শিল্পদূষণের প্রেক্ষাপটে এখন একটি বাস্তবমুখী ও দূরদর্শী জাতীয় কৌশল আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি প্রয়োজন। বিএনপি যদি নির্বাচিত হয়ে দেশ শাসনের সুযোগ পায়, তাহলে আমরা নিস্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নেয়ার অঙ্গীকার করছি, যাতে বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষা করা যায়- পুনর্বনায়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং টেকসই কৃষিকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি জাতীয় গ্রিন রিকভারি প্ল্যান প্রণয়ন করা, ক্ষতিকর প্লাস্টিক ও বিষাক্ত রাসায়নিক নিষিদ্ধ করে শিল্প ও গৃহস্থালির জন্য পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার উৎসাহিত করা, জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় ও জলজ প্রতিবেশ রক্ষায় নদী-খালের পূর্ণাঙ্গ খনন ও পুনরুদ্ধার কর্মসূচি গ্রহণ করা, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ঝুঁঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে জলবায়ু সহনশীল কৃষি ও অবকাঠামো গড়ে তুলতে সহায়তা প্রদান করা এবং পরিবেশ সচেতন নাগরিকদের একটি প্রজন্ম গড়ে তুলতে স্কুল পাঠ্যক্রমে পরিবেশ সম্পর্কিত শিক্ষাকে একীভূত করা।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ কোনো বিলাসিতা নয়, এটা একটা অতীব জরুরি কাজ। আসুন, আমরা সামগ্রিক রাজনৈতিক ও সামাজিক সীমানায় একটি টেকসই বাংলাদেশ গড়ে তুলতে একত্রিত হই, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সবুজ, বাসযোগ্য এবং টেকসই বাংলাদেশের উত্তরাধিকারী হয়। এই বিশ্ব পরিবেশ দিবসে, আসুন আমরা আশার বীজ বুনি, আমাদের বায়ু, পানি ও মাটি রক্ষা করি এবং সকলের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করি।
অন্য এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পরম ত্যাগের নির্দেশনা স্বরূপ কোরবানি বা ঈদুল আজহা পালন করা হয় আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। ঈদুল আজহার তাৎপর্য হচ্ছে আল্লাহ’র নৈকট্য লাভ করা। সেজন্য বিশ্বমুসলিম ঈদুল আজহার উৎসবে মিলিত হয়। মনের অশুভ অন্ধকার দূর করে সহজ-সরল-অনাড়াম্বর জীবনযাপনের মাধ্যমে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের মূল শিক্ষার উৎসই হচ্ছে পশু কোরবানি। কোরবানির মহিমান্বিত শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আল্লাহ’র নিকট নিজেকে সমর্পণ করা এবং মানবকল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। দেড় দশকের দানবীয় দুঃশাসনের যাঁতাকল থেকে জনগণ খানিকটা স্বস্তি পেলেও চূড়ান্ত মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদেরকে এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। নানা ধরনের কুটিল চক্রান্তের আশ্রয় নিয়ে মহল বিশেষ ক্রমাগত জনগণকে বিভ্রান্ত করছে, এ বিষয়ে আমাদের সকলকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।