বাংলারজমিন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে অধরা ‘মাদক সিন্ডিকেট’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত। মাদকের কারবারে অনেকেই রাতারাতি হয়েছেন কোটিপতি। বিশেষ করে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ ইউনিয়ন ঘিরে মাদকের একাধিক সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। যার জাল বিস্তার করে সারা দেশে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছে ১০ মাস হয়ে গেল। কিন্তু এই ইউনিয়নে মাদক কারবারের চিত্র পাল্টায়নি। মাদকের সেই সিন্ডিকেট আগের মতোই সক্রিয়। এখনো অধরাই রয়ে গেছে মাদক সিন্ডিকেট। গতকাল সকালে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম হেরোইনসহ ফ্যাসিস্ট আমলে গড়ে ওঠা মাদক সিন্ডিকেটের গডফাদার জুয়েল রানার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
জানা গেছে, অভ্যুত্থানের পরও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসররা নিরাপদে থেকে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। মাদক সিন্ডিকেটের হোতারা নানাভাবে খোলস বদলে নতুন আধিপত্যের জাল বিস্তার করেছে। কেউ নাম লেখাচ্ছেন বিএনপি’র তালিকায়। কেউবা শীর্ষ নেতাদের প্রশ্রয়ে সচল রাখতে চান মাদক সিন্ডিকেট। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে মাদক সিন্ডিকেটের পুরো নিয়ন্ত্রণ এখন সদর উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য নুরুল ইসলামের হাতে। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে মাদক কারবারের ৩টি মামলা রয়েছে। ২০১৮ সালের গোদাগাড়ী থানার একটি মাদক মামলা রাজশাহীর আদালতে বিচারাধীন। তার সঙ্গে আছেন আরেক ইউপি সদস্য মো. জুয়েল রানা। মাদক সম্রাট নুরুল ইসলামের ভাতিজা আলমগীর হোসেন। এদের সবার নামে মাদকের একাধিক মামলা আছে। মাদক সিন্ডিকেটের হোতারা সদর আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ হেরোইনসহ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএনসি। এ অভিযানে বাড়িটি তল্লাশি করে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম হেরোইন ও নগদ আড়াই লাখ টাকা উদ্ধার করেছে। এ সময় মাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য সাখাওয়াত হোসেন শাখানকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় মাদক সম্রাট জুয়েল রানা ও তার বোনজামাই আব্দুল্লাহকে পলাতক আসামি করে মামলা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকার মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন মো. জুয়েল রানা। তিনি চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। তিনি ভারত থেকে হেরোইন-ইয়াবা বাংলাদেশে আনেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন তার সহযোগীরা। জুয়েল এলাকায় মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত। দু’দেশেই তার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, নুরুল ইসলাম ও জুয়েল রানা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তাদের বিরুদ্ধে মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে। একটি অভিযানের বিবরণে এক কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩ সালের ১৪ই অক্টোবর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল বালুবাগানে অভিযান চালিয়ে ৭৫০ গ্রাম হেরোইনসহ ববিতা নামে নারীকে গ্রেপ্তার করে। ওই হেরোইনের মালিক ছিলেন জুয়েল রানা। পরে ববিতার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জুয়েলের বেলেপুকুরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আরও ২০০ গ্রাম হেরোইনসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলা আদালতে বিচারাধীন। এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) এএনএম ওয়াসিম ফিরোজ বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান আমাদের সবসময়ই আছে। মাদক উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার আমাদের প্রচেষ্টা অব্যহত আছে।