বাংলারজমিন
চাকরি দিতে না পেরে ঘুষের টাকা ফেরত দিলেন প্রধান শিক্ষক
নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
২৫ মে ২০২৫, রবিবার
নেছারাবাদে বলদিয়া সেন্ট্রাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়া পদে নিয়োগের নামে একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুল্লাহ বাহাদুরের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া একই পদে একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে বিদ্যালয় উন্নয়নের কথা বলে টাকা নিয়ে কাউকেই চাকরি দিতে না পেরে স্থানীয়দের তোপের মুখে ঘুষের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষক। বিষয়টি জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার বিকালে স্থানীয়রা ওই প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। জানা যায়, গত ২৭শে নভেম্বর ২০২২ সালে বিধিমোতাবেক বিদ্যালয়ে একজন করে ৪টি পদে অফিস সহকারী, নৈশপ্রহরী, দপ্তরি ও আয়া পদে নিয়োগ দেয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষক। প্রত্যেকটি পদের বিপরীতে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ হাঁকান প্রধান শিক্ষক হাবিবুল্লাহ বাহাদুর এবং বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ মিয়ার পিতা বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর। এরইমধ্যে বিদ্যালয়ের নিয়োগ নিয়ে একটু ঝামেলা দেখা দেয়। পরে ওই চারটি নিয়োগের দুইটি পদের নিয়োগ বন্ধ রেখে আয়া এবং নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগের জন্য ১২ লাখ টাকা ঘুষের রেট ধরেন অভিযুক্ত শিক্ষক। তারই ধারাবাহিকতায় বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী এবং আয়া পদে স্থানীয় ইসরাত জাহান নামে দুই জন আবেদন করেন।
নৈশপ্রহরী পদে মো. মামুন মিয়া চার লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি পাকা করেন। আয়া পদে ইশরাত জাহানের বিপরীতে স্থানীয় অপর এক নারী ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে আবেদন করেন। তখন ইশরাতের স্বামী বিষয়টি জানতে পেরে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে ওই পদে আট লাখ টাকা জমা দেন। একটি পদে একাধিক লোকের কাছে টাকা নিয়ে চাকরি দিতে বেকায়দায় পড়েন প্রধান শিক্ষক। এভাবে ঝুলে থাকে আয়া পদের চাকরি। পরে তারা টাকা ফেরত চাইলে মাসের পর মাস সময়ক্ষেপণ করেন প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্য জানাজানি হলে তোপের মুখে উভয়ের টাকা ফেরত দেন ওই শিক্ষক। আয়া পদে নিয়োগপ্রত্যাশী ভুক্তভোগীর স্বামী মো. তানভীর আহমেদ অভিযোগ করেন, আমি সামান্য একজন মুদি-মনোহরি দোকানদার। প্রধান শিক্ষক চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। বহু কষ্টে ধারদেনা ও স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে তাকে দিয়েছি। চাকরি দিতে না পেরে কিছুদিন আগে বিদ্যালয়ের যৌথ অ্যাকাউন্টের একটি চেকের পৃষ্ঠায় সই দিয়ে তিনি আমাকে চেক দিয়েছেন। ব্যাংকে গিয়ে দেখি টাকা নেই। পরে স্থানীয়দের জানালে তাদের মাধ্যমে ৭ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
তিনি বাকি এক লাখ টাকাও ফেরত চান। বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত নৈশপ্রহরী মো. মামুন বলেন, নিয়োগের সময় তাকে ৪ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। শুনেছি আয়া পদে একাধিক লোক টাকা জমা দিয়েছিল। যে কারণে ওই পদে কারও চাকরি হয়নি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার স্কুলে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার হাজিরা খাতায় বর্তমান মাসের তিনদিনের স্বাক্ষর পাওয়া গেছে। পরে মুঠোফোনে তিনি জানান, আমি জরুরি কাজে ব্যস্ত আছি। ঘুষ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্কুল উন্নয়নের জন্য টাকা নেয়া হয়েছে। যাদের চাকরি হয়নি তাদের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির লোক টাকা নিয়ে থাকলে আমার কিছু করার নেই। এ বিষয়ে বলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান সাঈদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. আশরাফুল ইসলাম রাসেল বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আমি সদ্য এই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি সভাপতি হয়েছি। পরবর্তী মিটিংয়ে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল আলম বলেন, বিদ্যালয়ের উন্নয়ন দেখিয়ে পরোক্ষভাবে ঘুষ বাণিজ্যের কোনো সুযোগ নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
পাঠকের মতামত
Not arrested yet?Proved case.