বাংলারজমিন
বিয়ানীবাজারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস অকার্যকর
বিয়ানীবাজার (সিলেট) প্রতিনিধি
১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবারবিয়ানীবাজারের ১৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ কোনো কাজে আসছে না। প্রযুক্তি ব্যবহার করে বড় পর্দায় (প্রজেক্টর) কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য এ প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এ ছাড়াও মনোযোগ আকর্ষণ ও সহজে পাঠ রপ্ত করানো এবং স্কুলের যাবতীয় তথ্য ই-প্রাইমারি স্কুল সিস্টেমে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে সরকার পিইডিপি প্রকল্পের আওতায় উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ সরবরাহ করা হয়েছে। স্কুলগুলোর একজন করে শিক্ষককে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি ট্রেনিং)-বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ স্কুলের ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, মডেম শিক্ষক ও নৈশপ্রহরীরা রেখেছেন নিজের বাড়িতে। ফলে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি ৩-৪) আওতায় বিয়ানীবাজারের ১৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেয়া হয়েছে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, মডেম-সিম, ওয়াই-ফাই রাউটারসহ নানা সরঞ্জাম। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ওয়াই-ফাই রাউটারের জন্য প্রতি মাসে ৪শ’ টাকার প্যাকেজে ২০ জিবি ডেটাও সরবরাহ করা হচ্ছে। একটি ওয়াই-ফাই রাউটারের মাধ্যমে এ ইন্টারনেট সংযোগ সর্বোচ্চ ১০ জন শেয়ার করে ব্যবহার করতে পারে। আবার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি থাকায় দু’টি করে ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে। তবে বিতরণের আগে এসব বিদ্যালয়ের একজন করে শিক্ষককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি ট্রেনিং) দেয়া হয়েছে। কিন্তু এসব শিক্ষাসামগ্রী অনেক শিক্ষক রেখেছেন নিজের বাড়িতে। এতে করে বিদ্যালয়ের শিখন-শেখানো কার্যক্রমের বাইরে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইউটিউব ব্যক্তিগত ডিভাইসে ব্যবহার করে শেষ হচ্ছে সরকারি টাকায় কেনা ডেটা।
সরজমিন দেখা গেছে, কোনো বিদ্যালয় ল্যাপটপ পেয়েছে, কোনো বিদ্যালয় ল্যাপটপ পেলেও প্রজেক্টর দেখা যায়নি। প্রজেক্টর পেলেও ল্যাপটপ নেই, এমন বিদ্যালয়ও আছে। কি-বোর্ড অকেজো, ব্যাটারি ও সাউন্ডে সমস্যার কথা জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা। বিতরণ করা ল্যাপটপ, প্রজেক্টরের মধ্যে কতোটি বর্তমানে সচল আছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি বিয়ানীবাজার উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মোতালেব।
বিভিন্ন বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, ওয়াই-ফাই রাউটার বিদ্যালয়ের চেয়ারের নিচে কিংবা টেবিলে লাগানো রয়েছে। বন্ধের দিন রাউটার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। ল্যাপটপ, প্রজেক্টর ও মডেম অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। শিক্ষকদের দাবি, স্কুলে চুরির ভয়ে তারা বাড়িতে নিয়ে রাখেন।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পারভেজ তালুকদার বলেন, বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ক্লাসে শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। তবে উপজেলার সবক’টি নয়, এখনো ১২-১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ডিজিটাল ক্লাসের আওতায় আসেনি। সরকারি ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, রাউটার ও মডেম বিদ্যালয়ে থাকা বাধ্যতামূলক। প্রধান শিক্ষক ও নৈশপ্রহরীর বাড়িতে থাকার বিষয়ে কিছু জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস বাধ্যতামূলক। কেন নেয়া হচ্ছে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।