ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বাংলারজমিন

ঘড়ির মেকানিক থেকে যেভাবে শতকোটি টাকার মালিক আব্দুর রহমান

ওমর ফারুক সুমন, হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) থেকে
১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
mzamin

মো. আব্দুর রহমান শেখ (৫২)। বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার আকনপাড়া গ্রামে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট প্রমোদ মানকিন এমপি’র এপিএস ছিলেন। পরবর্তীতে প্রমোদ মানকিন মারা গেলে তার পুত্র জুয়েল আরেং এমপি’র পি.এস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সবমিলিয়ে ১৯৯১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩০ বছর সময়কাল একক ক্ষমতার দাপটে ময়মনসিংহ-১, হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া আসনে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল আব্দুর রহমানের। গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। নিজ উপজেলা, জেলা ও রাজধানীতে নির্মাণ করেন কোটি কোটি টাকার স্থাপনা। ক্রয় করেন নামে-বেনামে শত কোটি টাকার সম্পদ।
স্থানীয়দের তথ্যমতে আব্দুর রহমানের শৈশব ছিল খুবই করুণ। হালুয়াঘাট সোনালী ব্যাংক সংলগ্ন গোপাল পোর্দার নামে এক ভদ্রলোকের দোকানে ঘড়ির কাজ শিখেন। পরবর্তীতে ঘড়ির মিস্ত্রি হিসেবে দোকান ছিল তার। সকলের নিকট আব্দুর রহমানের পরিচিতি ছিল ঘড়ির মেকার হিসেবে। সংসারের আয় রোজগারের অন্য কোনো মাধ্যম ছিল না। ঘড়ির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এমতাবস্থায় ১৯৯০ সালের দিকে আব্দুর রহমানের বয়স যখন ২০ বছর, তখন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা প্রমোদ মানকিনকে পিতা ডেকে তার কাছে ভিড়েন। ১৯৯১ সালে প্রমোদ মানকিন এমপি হওয়ার পর থেকেই তার ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। রাতারাতি কোটিপতি বনে যান আব্দুর রহমান। দ্বিতীয় ধাপে প্রমোদ মানকিন যখন মন্ত্রী হন তখনই রাতারাতি ভাগ্য ঘুরে যায় তার। নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, বালু মহাল দখল, হাট-বাজার নিয়ন্ত্রণ, কমিশন বাণিজ্য, এলজিইডি, এলজিএসপি, টি.আর কাবিখা, উপজেলার উন্নয়নমূলক সকল কাজেই ছিল আব্দুর রহমানের নিয়ন্ত্রণে। চোখের পলকে শত কোটি টাকার মালিক হন তিনি। অনেক সম্পদ দৃশ্যমান থাকলেও চোখের আড়ালেও রয়েছে অঢেল সম্পত্তি। উপজেলার উত্তর বাজার হালুয়াঘাট মৌজায় এক কোটি টাকা মূল্যের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের ১৫ শতাংশ জায়গা ক্রয় করেন। আকনপাড়া মৌজায় কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ৪-৫ একর জমি ও স্থাপনা রয়েছে। গোবড়াকুড়া মৌজায় স্থলবন্দরের ভেতরে ৮-১০ কোটি টাকা মূল্যের দেড় একর জমি ক্রয় করেন। হালুয়াঘাট পৌর শহরের পুরাতন বাস টার্মিনাল এলাকা ও থানার দক্ষিণ পাশে ক্রয় করেন ১০-১২ কোটি টাকার অট্টালিকা। ঢাকার আব্দুল্লাহপুর এলাকায় রয়েছে ৫০ কোটি টাকার স্থাপনা ও জায়গা। শ্বশুরবাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর এলাকায় স্ত্রী-সন্তান ও নিজ নামে ক্রয় করেন শত কোটি টাকার স্থাপনা, মার্কেট। সবমিলিয়ে হাজার কোটি টাকার মালিক হন গত ১৭ বছরে। ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আত্মগোপনে চলে যান। ওইদিন বিকালে বিক্ষুব্ধ জনতা আব্দুর রহমানের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। নিয়ে যায় কোটি টাকার সম্পদ আর নগদ টাকাও। হালুয়াঘাট দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে যে কয়জন দুর্নীতিবাজ রয়েছে তাদের মধ্যে আব্দুর রহমান অন্যতম। তিনি এত টাকার মালিক হয়েছেন যা অনেকেরই অজানা। শত কোটি টাকার মালিক এতে কোনো সন্দেহ নেই বলে তিনি জানান। আব্দুর রহমানকে ঘড়ির কাজ শিখিয়েছেন গোপাল পোর্দার। গোপাল পোর্দার বলেন, ঠিকমতো ভাত খেতে পারতো না রহমান। প্রমোদ মানকিনের পা ধরে  শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বিএনপি নেতা কাজী ফরিদ আহমেদ পলাশ বলেন, আব্দুর রহমান দেশের প্রথম শ্রেণির একজন দুর্নীতিবাজ। দুদক বহুবার হামলা দিলেও তার বিচার হয়নি। ৫ই আগস্টের পর তার সম্পদের হিসাব নেয়া উচিত। দুদকের হস্তক্ষেপ চান বিএনপি’র এই নেতা। ইতিমধ্যে আব্দুর রহমানের নামে একাধিক মামলা থাকায় পলাতক তিনি।

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status