বাংলারজমিন
খানসামায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৭ মাস ধরে নেই ওষুধ, সেবা ব্যাহত
চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবারদিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধ ও জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। এতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে পরিবার পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নারী-কিশোরীসহ সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বসবাস। এসব মানুষের সেবায় উপজেলায় একটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং ৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। যেগুলোতে সরকারি ছুটি ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, প্রসবপূর্ব সেবা, প্রসবকালীন সেবা, নবজাতকের পরিচর্যা, ০ থেকে ৫ বছরের শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, সাধারণ রোগের চিকিৎসা কার্যক্রমসহ ২৫ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করার কথা। কিন্তু জনবল ও ওষুধ সংকটের কারণে এর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সরজমিন দেখা গেছে, উপজেলার অধিকাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকট রয়েছে। যারা কর্মরত রয়েছেন তারাও অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারছেন না। এর মধ্যে গত ৭ মাস ধরে ওষুধ সরবরাহ না থাকায় চিকিৎসাসেবায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ও ওষুধের ঘাটতির কারণে স্বাস্থ্য সহকারীও সেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছেন। এতে মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে এবং বৃদ্ধি পাচ্ছে অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণের ঝুঁকি।
জানা গেছে, খানসামা ১০ শয্যা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে মোট অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১৩টি। সেখানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৬ জন। এখানে ২ জন মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ফলে স্বাস্থ্যকর্মীরা কোনো রকমে সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে, আল্ট্রাসনোগ্রাম সেবা বন্ধ থাকায় গর্ভবতী নারীরা বিপাকে পড়েছেন।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) পদে একজন কর্মরত থাকলেও যন্ত্রপাতি না থাকায় প্যাথলজি সেবা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। অন্যদিকে, উপজেলার ভেড়ভেড়ী পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ৫ পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ২ জন, খামারপাড়ায় ৫ পদের বিপরীতে ৩ জন এবং গোয়ালডিহি মডেল পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ৯ পদের বিপরীতে ৪ জন কর্মী কর্মরত রয়েছেন। নিরাপদ প্রসবের জন্য ৪ জন মিডওয়াইফের পদ থাকলেও তা শূন্য রয়েছে।
খানসামা ১০ শয্যা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা গ্রহণ করতে আসা গোবিন্দপুর গ্রামের সুফিয়া খাতুন, হোসনে আরা বেগমসহ একাধিক নারী বলেন, চিকিৎসক নেই, ওষুধও পাওয়া যায় না- তাহলে এসব হাসপাতাল চালু রেখে কী লাভ?
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটির ফার্মাসিস্ট ফারজানা মলি বলেন, প্রায় ৭ মাস ধরে এখানে ওষুধ সরবরাহ নেই। শুধুমাত্র শিশুদের পুষ্টিসমৃদ্ধ কিছু ওষুধ রয়েছে। সেবা নিতে আসা রোগীরা ওষুধ না পেয়ে আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। খানসামা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি) হাফিজুর রহমান হারুন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবল ও ওষুধ সরবরাহ করার বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এর প্রভাবে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রায়শই সেবাগ্রহীতাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তবে ওষুধ সরবরাহের বিষয়টি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে সাময়িক জটিলতার কারণে বন্ধ রয়েছে। আশা করছি, জুলাই মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুজ্জামান সরকার বলেন, এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অবহিত করবো।