ঢাকা, ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বাংলারজমিন

লালপুরে ছড়িয়ে পড়েছে বিষাক্ত পার্থেনিয়াম

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার
mzamin

পার্থেনিয়াম। একটি ভয়ঙ্কর বিষাক্ত আগাছার নাম। বৈজ্ঞানিক নাম পার্থেনিয়াম হিসটেরোফরাস। চন্দ্রমল্লিকা ফুল গাছের ন্যায় পাতা ও ধনিয়া ফুলের মতো ছোট সাদা ফুল বিশিষ্ট ক্ষতিকর বিষাক্ত এই আগাছাটি নাটোরের লালপুরে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। রাস্তা ও রেললাইনের দু’পাশে, বাড়ির আঙিনা, পুকুর পাড়, আম বাগান, স্কুল-কলেজের আঙিনায় এমন কোনো পতিত জমি নেই, যেখানে পার্থেনিয়াম জন্মেনি। এসব স্থানে আগাছাটির ফুল আপাতদৃষ্টিতে নয়নাভিরাম হলেও পরিবেশ ও প্রাণীকুলের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব অধিকাংশ মানুষের অজানা।
মানুষের ওপর পার্থেনিয়ামের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মুনজুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, পার্থেনিয়ামের ফুলের রেণুতে ‘সেস্কুটার্পিন ল্যাকটোন’ জাতীয় বিষাক্ত পার্থেনিন থাকে যা ক্ষতস্থানে রক্তের সঙ্গে মিশে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ (এক্সিমা, স্ক্যাবিক্স, এলার্জি) হতে পারে। ফুলের রেণু বা বীজ নাকে প্রবেশ করলে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও মাথাব্যথা হতে পারে। যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তাদের শরীরে এর রস লাগলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল্লাহ বলেন, পার্থেনিয়াম এতটাই বিষাক্ত যে গরু-ছাগলের মতো গবাদিপশু এ আগাছা খেলে মুখে ও অন্ত্রে ঘা, ডায়রিয়া ও যকৃতে পচন রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। দুধ উৎপাদন কমে যায়।
রাজশাহী কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শরিফুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশে যে ১৭টি আগ্রাসী ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উদ্ভিদ রয়েছে তার মধ্যে পার্থেনিয়াম অন্যতম। ফসলের ক্ষেতে জন্মালে ফসলের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা ৪০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। বিষাক্ত এ আগাছাটি দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে। একটি পার্থেনিয়াম ৪ মাসের জীবনচক্রে প্রায় ৩০ হাজার বীজ উৎপাদন করতে সক্ষম। এর বীজ বাতাসে ১০ কি.মি এলাকা পর্যন্ত ছড়াতে পারে।
স্থানীয়রা জানান, রাস্তা ও পতিত জমিতে প্রচুর পরিমাণে এ আগাছা জন্মে। তবে এটা যে পার্থেনিয়াম নামক বিষাক্ত আগাছা সেটি তারা জানেন না। তারা সেখানে গরু, মহিষ ও ছাগল চরান। অনেক সময় গবাদিপশুর ডায়রিয়া ও মুখে ঘা হয়। তাদের শরীরে চুলকানি ও এলার্জি হয়। কিন্তু তার কারণ জানা ছিল না।
এ বিষয়ে উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক আলাউদ্দিন জালাল বলেন, ৬-৭ বছর আগে উপজেলার কোথাও পার্থেনিয়াম গাছ চোখে না পড়লেও বর্তমানে সর্বত্র এই আগাছাটি ছড়িয়ে পড়েছে। আগাছাটি দমনে কৃষি অফিসকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জানা যায়, ২০০৮ সালে পার্থেনিয়ামের তথ্য অনুসন্ধানে বাংলাদেশে আসেন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভ এডকিনস। তার সঙ্গে ছিলেন দেশের একদল কৃষিবিজ্ঞানী। সে সময় তারা যশোরে এ আগাছাটি প্রথম শনাক্ত করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় মানবজমিনকে বলেন, কৃষকদের এ বিষয়ে সচেতন করার কাজ চলছে। হাতে গ্লাভস, চোখে চশমা, গায়ে মোটা কাপড় ও পায়ে জুতা পরে আগাছাটি কেটে পুড়িয়ে অথবা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। এ ছাড়া প্রতি হেক্টর জমিতে ১-১.৫ কেজি আগাছানাশক মেট্রিবুজিন প্রয়োগ করা যায়। তবে এ সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status