বাংলারজমিন
সৈয়দপুরে রেল কোয়ার্টার বহিরাগতদের দখলে
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার
নীলফামারীর সৈয়দপুর রেল বিভাগের আওতাধীন রেলের প্রায় হাজার খানিক আবাসিক কোয়ার্টার ও দ্বিতল ভবন দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হয়ে আছে। রেলওয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি দিনদিন হাতছাড়া হলেও অদৃশ্য কারণে নীরব রয়েছে রেলওয়ে প্রশাসন। অনেক ভবনের ছাদ ও দেয়ালে ফাটল থাকলেও আগাছাভর্তি ঝুঁকিপূর্ণ ওইসব ভবন ও কোয়ার্টারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন অনেকে। মাঝে মধ্যে সন্ধ্যার পর ভবনের পাশের রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে গা শিউরে ওঠে। দেখে মনে হয় যেন ভুতুড়ে বাড়ি।
এসব ভুতুড়ে পরিত্যক্ত ও বিধ্বস্ত কোয়ার্টারগুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন কিছু অসহায় পরিবার। আবার কিছু ভবন মাদকসেবিদের দখলে। সন্ধ্যা হলেই কিছু পরিত্যক্ত ভবনের পাশে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের আড্ডা। শুধু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবে রেলওয়ের অধিকাংশ আবাসিক ভবন ও কোয়ার্টারের এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের।
রেলওয়ের শহর হিসেবে পরিচিত সৈয়দপুর। রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বসবাসের জন্য রেল বিভাগের ৭৯৮ দশমিক ৯ একর ভূ-সম্পত্তির ২০০ একরে দ্বিতল ভবন ও কোয়ার্টারগুলো তৈরি করা হয়। এ ছাড়া ৩১টি বাংলো ও ১৩৯টি সাব-বাংলো নির্মাণ করা হয়। দুই কক্ষবিশিষ্ট বাসা ৭১১টি ও এক কক্ষবিশিষ্ট বাসা নির্মাণ করা হয় ১ হাজার ৬০৭টি। এরমধ্যে সিংহভাগ ভবন ও কোয়ার্টার রেলের বেদখলে। পুরনো ও জীর্ণ অধিকাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তা ঘোষণা করা হয়নি পরিত্যক্ত হিসেবে। এমনকি রেলওয়ের ঐতিহ্য রক্ষায় সংস্কারও করা হয়নি যুগের পর যুগ।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, আবাসিক দ্বিতল ভবনগুলোতে কর্মকর্তা ও আবাসিক কোয়ার্টারগুলোতে স্টেশন মাস্টারসহ কর্মচারীর বসবাসের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগ সেগুলো তৈরি করে। কিন্তু সৈয়দপুর রেল বিভাগের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও তদারকির অভাবে কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রেল বিভাগ আর সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। যার ফলে অধিকাংশ কোয়ার্টার রয়েছে বহিরাগতদের দখলে।
জানা যায়, ১৮৭০ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের তৈরি করা লাল রংয়ের ভবনগুলোর অধিকাংশ জরাজীর্ণ এবং বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে ওই ভবনগুলোতে রেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা না থাকায় সাধারণ মানুষ দখল করে নিয়েছে। ভবনগুলো ধসে পড়ার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে বসবাস করছেন বহিরাগতরা। সেই সঙ্গে চুরি হয়ে যাচ্ছে ভবনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। ওইসব বহিরাগতদের অনেকেই মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত। বৃটিশ আমলে সৈয়দপুর শহরে রেলওয়ে কারখানা স্থাপিত হওয়ার কারণেই রেলের শহর হিসেবে পরিচিত হয় এ শহর। ১৮৭০ সাল থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত এ শহর রেলওয়ের খ্যাতি ও সুনাম থাকলেও বর্তমানে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বেদখল হয়ে গেছে রেলওয়ের একাধিক বহুতল ভবন ও কোয়ার্টার। কেউ কেউ এসব সরকারি ভবন ও কোয়াটার দখল করে ভাড়াও দিয়েছেন।
রেলওয়ে কোয়ার্টারগুলোর রক্ষণা-বেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সৈয়দপুর রেল বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। এ ছাড়া রেলওয়ে মন্ত্রণালয় বা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ না দিলে কিছুই করা সম্ভব নয় বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, গত কয়েকদিন আগে শহরের ১নং রেল ঘুমটি এলাকায় রেলওয়ের জমিতে মার্কেট নির্মাণকারীকে বাধা দিতে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি মিলেছে। এ কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছু করা সম্ভব হয় না।
সৈয়দপুর রেল বিভাগের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মোরছালিন বলেন, আমরা রেলওয়ের জমি, ভবন ও কোয়ার্টার দখলকারীদের বিরুদ্ধে নোটিশ করতে পারি। উচ্ছেদ বা দখলমুক্ত করার এখতিয়ার আমাদের নেই। যারা দখলমুক্ত করতে পারবেন, তারা যদি না করে তাহলে কি আর করার থাকতে পারে।