বিশ্বজমিন
ইসরাইল-ইরান ‘যুদ্ধ’
তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, তেহরানের মেহরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর জ্বলছে, বিস্ফোরণ
মানবজমিন ডেস্ক
(২ সপ্তাহ আগে) ১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ৭:২৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৩:৫৬ অপরাহ্ন

তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবন
ইসরাইলে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে সেখানে বিভিন্ন ভবনের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। তেল আবিবের ঠিক পুবে রামাত গান শহরে একটি ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করে শুক্রবার দিবাগত রাতে। সেখান থেকে জীবিতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়। তবে এতে কেউ নিহত হয়েছে কিনা তা পরিষ্কার জানা যায়নি। পক্ষান্তরে ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি বিমানবন্দরে আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে। বার্তা সংস্থা এএফপি একজন সাংবাদিকের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে বলছে, মেহরাবাদ বিমানবন্দরে এই আগুন লেগেছে। সেখান থেকে গাঢ় ধোঁয়া আকাশে উঠে যাচ্ছিল। ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা মেহর বলেছে, বিমানবন্দর এলাকায় একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। তাতে সেখানকার ঘন ধোয়ার কুণ্ডলি আকাশে ছড়িয়ে পড়ার ছবি শেয়ার করা হয়। তবে কিভাবে এই আগুন লেগেছে, সে বিষয়টি জানা যায়নি। এর মধ্য দিয়ে ক্রমশ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে এই ‘যুদ্ধ’। এ অবস্থায় উভয় পক্ষকে উত্তেজনা বৃদ্ধির পথ পরিত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধের এখনই সময়। এক্সে দেয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন— ইসরাইলি বোমাবর্ষণ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায়। তেল আবিবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। যথেষ্ট হয়েছে। এখন থামার সময়। শান্তি ও কূটনীতি জয়ী হোক। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন জানান, তিনি ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট ইসহাক হারজকের সঙ্গে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি এক্সে লিখেছেন— আমি আবারও ইসরাইলের আত্মরক্ষা ও জনগণকে রক্ষার অধিকারকে সমর্থন জানিয়েছি। একই সঙ্গে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সকল পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর এবং উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন। ওদিকে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) জনগণকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলেছে। জেরুজালেম থেকে বিবিসির সাংবাদিক আয়ন ওয়েলস বলছেন, জেরুজালেমে বিস্ফোরণ হয়েছে। আকাশে ড্রোন উড়তে দেখা গেছে। তিনি লিখেছেন— কিছুক্ষণ আগে জেরুজালেমে আবারও কয়েক মিনিটের জন্য সাইরেন বেজে ওঠে। এখন স্থানীয় সময় রাত প্রায় ১টা ৩০ মিনিট। ঠিক প্রায় ২৪ ঘণ্টা আগে আগের রাতে প্রথম সাইরেন বেজেছিল। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আমি আকাশে একাধিক ড্রোন উড়তে দেখেছি। কাছাকাছি বেশ জোরালো ও বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি। বিস্ফোরণের তীব্রতায় জানালার কাঁচ কেঁপে উঠেছিল। ইসরাইলে বহুল ব্যবহৃত একটি সাইরেন অ্যাপে এখন পুরো দেশজুড়ে ‘রেড অ্যালার্ট’ দেখাচ্ছে। আমরা আগেও জানিয়েছি, এই শব্দগুলো ইরানের পাল্টা হামলার অংশ নাকি ইসরাইলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থেকে ছোড়া প্রতিরোধমূলক হামলা— তা নিশ্চিতভাবে বোঝা যাচ্ছে না। ইসরাইল আগে জানিয়েছিল, ইরানের ছোড়া অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথেই পড়ে গেছে বা প্রতিহত করা হয়েছে। ইসরাইল ও ইরান— উভয় দেশই শুক্রবার রাতের ইসরাইলি হামলার পর থেকে একচুলও পিছু হটছে না। তারা একে একটি ‘যুদ্ধ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। উভয় পক্ষ থেকেই আরও হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ওদিকে ইরানি কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, একটি ইসরাইলি যুদ্ধবিমানের নারী পাইলটকে আটক করেছে তারা। তবে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী এই দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। ইরানের সংবাদ সংস্থার তাসনিম বলেছে, ইরানি আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী দুটি ইসরাইলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এই যুদ্ধবিমানগুলোর একটির নারী পাইলটকে আটক করা হয়েছে। তবে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর আরবি ভাষার মুখপাত্র আভিচাই আদ্রায়ি বলেছেন— ইরানি ভুয়া সংবাদমাধ্যম। ইরানি মিডিয়ায় যে খবর ছড়ানো হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। পক্ষান্তরে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাতজ বলেছেন, ইরান শুক্রবার বেসামরিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে রেড লাইন বা সীমা অতিক্রম করেছে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ইরান বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে রেড লাইন অতিক্রম করেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ইসরাইলের নাগরিকদের রক্ষা করতে থাকব। নিশ্চিত করব যে আয়াতুল্লাহ খামেনির শাসন ব্যবস্থাকে এই জঘন্য কাজের জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। এর আগে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড জানায়, তারা ইসরাইলে ডজনখানেক লক্ষ্যবস্তু, সামরিক ঘাঁটি এবং বিমানঘাঁটিতে হামলা চালাচ্ছে।