ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বিশ্বজমিন

হারেৎস পত্রিকার কলাম

আব্রাহাম চুক্তি সম্প্রসারণে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা থেমে যাচ্ছে জটিল বাধার মুখে!

জিভ বার'এল

(৭ ঘন্টা আগে) ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন

mzamin

আব্রাহাম চুক্তি এখন এমন এক স্বপ্ন, যা নাকি মধ্যপ্রাচ্যের সব সংঘাতের চূড়ান্ত সমাধান দিতে পারে- অন্তত ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতে। এটি সেই ‘বিগ ডিল’, যার অপেক্ষায় হোয়াইট হাউসে বসে আছেন এই ‘ডিলের রাজা’। অথচ ক্ষমতা গ্রহণের পর এখনো পর্যন্ত একটিও কূটনৈতিক সাফল্য তিনি অর্জন করতে পারেননি। ট্রাম্প মনে করেন ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশসহ বহু মুসলিম দেশ এবং কাছের সিরিয়া, লেবানন ও সৌদি আরব বুঝি তাদের রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন স্বাগত জানাতে। ইসরাইলিরা যেন এরই মধ্যে দামেস্কের ভাজা তেলের গন্ধ আর জেদ্দা-রিয়াদের হোটেল ভাড়া খুঁজে দেখা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু এই স্বপ্নের পথে রয়েছে বিপজ্জনক মাইনক্ষেত্র- এবং সে সবই এখন ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

লেবানন: হিজবুল্লাহ নিরস্ত্রীকরণে কঠিন সমীকরণ
আগামী দিনগুলোতে লেবাননের সরকার আসবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে। মার্কিন দূত টম ব্যারাক গত সপ্তাহে বৈরুতে গিয়ে যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তার মূল কথা হলো- হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে হবে। লেবাননের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন ও প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম ইতিমধ্যেই এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। লেবানন সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে লিটানি নদীর দক্ষিণে হিজবুল্লাহর ঘাঁটিগুলোর ৮০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে দাবি প্রেসিডেন্ট আউনের। এমনকি প্যালেস্টাইন শরণার্থী শিবিরগুলোতেও অস্ত্র নিষিদ্ধে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সম্মতি মিলেছে। তবু আউন বলছেন, যেকোনো নিরস্ত্রীকরণ হতে হবে সংলাপের মাধ্যমে, যাতে গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি না থাকে। কিন্তু ওয়াশিংটন সংলাপের সময় দিতে চায় না। ব্যারাকের মতে, যদি সংলাপ হয়ও, তা এখনই শুরু করতে হবে এবং হিজবুল্লাহকে আনুষ্ঠানিকভাবে এতে রাজি হতে হবে।

আউন পাল্টা শর্ত দিয়েছেন- ইসরাইলকে কিছু এলাকা ছাড়তে হবে। কাজেই এই চুক্তি বাস্তবায়নের শর্ত হলো- প্রথমে ইসরাইল ৫টি নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে কিছুটা পিছু হটবে। পরে পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের বিনিময়ে পুরোপুরি সরে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি লেবানন রাজি না হয়, তারা শান্তিচুক্তি পর্যবেক্ষণ কমিটি থেকে বেরিয়ে আসবে, জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআইএফআইএলের সেনা তুলে নেয়া হবে এবং দেশটি কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

ইরান কি কৌশল বদলাবে?
হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণ ইরানের জন্য বিশাল বিষয়। এই সিদ্ধান্তে বোঝা যাবে, ইরান তার প্রভাব বলয়ের ভবিষ্যৎ কৌশল কীভাবে নির্ধারণ করছে। তারা কি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্র গঠন করবে, না কি সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়বে অস্ত্রের হুমকি ছাড়াই? উল্লেখ্য, ইরাকে ইতিমধ্যে ইরান শিয়া মিলিশিয়াদের জাতীয় বাহিনীতে একীভূত করতে রাজি হয়েছে। কিন্তু লেবানন হলো ইরানের ভূ-রাজনৈতিক হীরক খণ্ড, যেখান থেকে তাদের প্রভাব ছড়িয়েছে সিরিয়া, গাজা এবং ইয়েমেনেও।

সিরিয়া: আব্রাহাম চুক্তিতে সম্ভাবনা ও গোলান সংকট
সিরিয়ায় চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। নতুন প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারাআ ইরানের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব রোধে সফল হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাত চান না এবং উপযুক্ত পরিস্থিতিতে আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত হতে পারেন। এই অবস্থানের পুরস্কারস্বরূপ তিনি পেয়েছেন ট্রাম্পের উষ্ণ স্বাগত, সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। কিন্তু মূল বাধা রয়ে গেছে গোলান মালভূমি। ট্রাম্প নিজেই এর ওপর ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব স্বীকৃতি দিয়েছেন। ফলে আলোচনা কঠিন হয়ে পড়েছে। ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডেওন সা’র বলেছেন, দামেস্ক যদি গোলান ছাড়তে রাজি হয়, তাহলে চুক্তি সম্ভব। অথচ কিছুদিন আগেও আল-শারাআকে একজন ‘জিহাদি নেতা’ হিসেবেই বিবেচনা করা হতো।

সৌদি আরব: কূটনৈতিক ‘বড় পুরস্কার’ কিন্তু শর্ত আছে
গাজা যুদ্ধের ঠিক আগমুহূর্তে ইসরাইলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল সৌদি আরব। তখন তাদের শর্ত ছিল-  ফিলিস্তিনিদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন। কিন্তু যুদ্ধের পর তারা বলছে- দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের স্বীকৃতি ও বাস্তব পদক্ষেপ ছাড়া কোনো সম্পর্ক নয়। তবে সৌদি আরব ট্রাম্পের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে। কারণ তারা এক ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আমেরিকায়। যদিও এই বিনিয়োগ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়, কিন্তু কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে তা গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট।

চূড়ান্ত প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে: ট্রাম্প কি পারবেন?
তিনি এখনো নেতানিয়াহুকে গাজা যুদ্ধ থামাতে রাজি করাতে পারেননি। তাহলে সৌদি আরবকে কীভাবে বোঝাবেন যে মানবিক ত্রাণই যথেষ্ট, রাষ্ট্র না হলেও চলবে? ইসরাইলের উগ্র ডানপন্থী নেতৃত্বের কাছে নোবেল শান্তি পুরস্কার কিংবা ট্রাম্পের কূটনৈতিক বিজয় কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয় যদি তারা গাজা ফিরে পেতে চায়। আব্রাহাম চুক্তির ‘সুবাসিত ফলাফল’ এখনো বহু দূর, আর পথে রয়েছে বিস্ফোরক বাস্তবতা।
(হারেৎস পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ থেকে অনুবাদ) 
 

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান/ একাধিক দেশ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত

নেতানিয়াহুর ভূয়সী প্রশংসা করলেন ট্রাম্প/ ইরানের ৩ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ইসরাইলের, প্রত্যাখ্যান তেহরানের/ ইরানে তীব্র হামলা চালানোর নির্দেশ

১০

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে ইরান/ সকল বিকল্প উন্মুক্ত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status