খেলা
কলম্বোয় ইনিংস ব্যবধানে হার টাইগারদের
স্পোর্টস রিপোর্টার (কলম্বো) শ্রীলঙ্কা থেকে
২৯ জুন ২০২৫, রবিবার
কলম্বো টেস্টের তৃতীয় দিন বিকালেই হারটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। শুধু অপেক্ষা ছিল আনুষ্ঠানিকতার। তবে একটা আশাও ছিল। লিটন দাস কি পারবেন চতুর্থ দিনে দলের অন্তত ইনিংস হার বাঁচাতে! হাতে ছিল চার উইকেট। যাকে ঘিরে বাংলাদেশের লড়াইয়ের ক্ষীণ আশা ছিল, তিনিই চতুর্থ দিন সকালে সবার আগে আউট হলেন। দিনের পঞ্চম বলেই বাঁহাতি স্পিনার প্রবাত জয়সুরিয়ার বলে কট বিহাইন্ড হন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। ৪৩ বলে তার সংগ্রহ ছিল ১৪ রান। লিটন আউট হওয়ার পরই বাংলাদেশের ইনিংস আর কতক্ষণ টেকে, সেই প্রশ্নই কেবল বাকি ছিল, কারণ হার তখন একরকম নিশ্চিত হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে ইনিংস ও ৭৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। মাত্র ৩৪ বল টিকে চতুর্থ দিনের সকালে নিদারুণ ব্যাটিং ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে স্বাগতিকদের কাছে নবমবারের মতো ইনিংস ব্যবধানে হারলো টাইগাররা। এর ফলে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-০ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার দল। এমন হারে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বেশ হতাশ। নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণার আগে তা অকপটেই জানান তিনি। শান্ত বলেন, ‘খুবই হতাশাজনক’। এই মাঠে ২০০১ সালে ইনিংস ও ১৩৭ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। পরের বছর এখানে ২৮৮ রানে হার দেখে টাইগাররা। দুই যুগ পরও এখানে ভাগ্য বদলায়নি। বলার অপেক্ষা রাখে না, ২৫ বছরে টাইগারদের টেস্টে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।
গতকাল চতুর্থ দিনের সকালে আগের দিনের ৬ উইকেটে ১১৫ রান নিয়ে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু লঙ্কান স্পিনার প্রবাত জয়সুরিয়ার সামনে সফরকারীরা টিকতে পারলো মাত্র ৩০ মিনিট। বাকি ৪ উইকেট হারিয়ে তারা যোগ করতে পারল কেবল ১৮ রান, দ্বিতীয় ইনিংস থামল ১৩৩ রানে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ২৪৭ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা করেছিল ৪৫৮ রান। লিটন আউট হলে প্রভাতের পরের শিকার হন নাঈম হাসান। পা বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে ক্রিজের বাইরে চলে যান তিনি। দ্রুততার সঙ্গে বল লুফে স্টাম্প ভেঙে দেন উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিস। ৮ বল খেলে নাঈম করেন ৫ রান। এরপর টানা ৩ ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন লঙ্কান এই স্পিনার। ফিরতি ক্যাচ দিয়ে তাইজুল ইসলাম মাঠ ছাড়েন ১৫ বলে ৬ রানে। বাংলাদেশের দুর্দশার ইতি ঘটান আরেক স্পিনার থারিন্দু রত্নায়েকে। ৭ বলে ৬ রান করে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন ইবাদত হোসেন। রিভিউ নিলেও মাঠের আম্পায়ারের দেওয়া আউটের সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি। অন্যপ্রান্তে অপরাজিত থেকে যান নাহিদ রানা। টাইগারদের গুঁড়িয়ে দিতে ৫৬ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন প্রবাত জয়সুরিয়া। এই সিরিজে আগের তিন ইনিংসে স্রেফ ১ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু এই ম্যাচে তার ঘূর্ণি সামলাতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ম্যাচসেরা হন শ্রীলঙ্কার একমাত্র ইনিংসে ১৫৮ রান করা ওপেনার পাতুম নিশাঙ্কা। আগের টেস্টেও তিনি দুর্দান্ত ১৮৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। সিরিজসেরার পুরস্কারও তারই হাতে ওঠে।
অথচ গল টেস্ট ড্র করে দারুণ আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে কেন দলের এমন পরিণতি? এ নিয়ে শান্ত বলেন, ‘গল টেস্টে আমরা যেভাবে খেলেছি, তা অসাধারণ ছিল, কিন্তু এই টেস্ট ম্যাচে দল হিসেবে খুবই হতাশাজনক পারফরম্যান্স, বিশেষ করে ব্যাটিংয়ের দিক থেকে।’ তার মতে, ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণেই দল ম্যাচটি হেরেছে। নতুন কন্ডিশন ও উইকেট দলের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলে তিনি মনে করেন। এর আগে গলে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্ট বৃষ্টিবিঘ্নিত হয়ে ড্র হয়েছিল। কলম্বো টেস্ট জিতে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভুক্ত দুই ম্যাচের সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। টেস্ট ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের নবম ইনিংস ব্যবধানে হার এবং সব মিলিয়ে ৪৭তম ইনিংস ব্যবধানে হার। বাংলাদেশের নিদারুণ ব্যাটিং ব্যর্থতা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, টেস্ট ক্রিকেটে তাদের কতটা পথ পাড়ি দিতে হবে।
পাঠকের মতামত
বাংলাদেশ এর ক্রিকেট শেষ হয়ে গেসে, এখন আর আমরা ক্রিকেট খেলি না দেখি ও না। এর জন্য দায়ী রাজনীতি, খেলোয়াড় দের রাজনীতির লোভ। এর জন্য দায়ী সাকিব এর জন্য দায়ী মাশরাফি এন্ড গুতিবাজ তামিম।