খেলা
বাহরাইনকে ৭-০ গোলে হারালো বাংলাদেশ
স্পোর্টস রিপোর্টার
৩০ জুন ২০২৫, সোমবার
র্যাঙ্কিংয়ে ৩৬ ধাপ এগিয়ে বাহরাইন। তবে মাঠের খেলায় তা বোঝা গেল থোরাই। এএফসি উইমেন’স এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে দুর্দান্ত শুরু করলো বাংলাদেশ। গতকাল বাছাইয়ের ‘সি’ গ্রুপের খেলায় বাহরাইনকে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করে বাংলাদেশের মেয়েরা। ইয়াংগুনে ম্যাচের প্রথমার্ধেই ৫-০ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচে জোড়া গোল করেন তহুরা খাতুন।
প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগেই আত্মবিশ্বাস ঝরছিল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলে ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের কণ্ঠে। জানান মেয়েদের সাম্প্রতিক নৈপুণ্য দেখেই আত্মবিশ্বাস বেড়েছে তার। তিনি বলেন, বাছাই উতরে এশিয়ান কাপের মূল মঞ্চে খেলাই তার লক্ষ্য। এজন্য বাহরাইনের বিপক্ষে জয় দিয়ে একটা ভালো শুরু চেয়েছিলেন তিনি। আফঈদা-ঋতুপর্ণারা শক্তিধর দলের বিপক্ষে দাপুটে এক জয় দিয়ে আশা বাড়ালেন ভক্ত সমর্থকদেরও।
গতকাল র্যাঙ্কিংয়ে বিস্তর এগিয়ে থাকা বাহরাইন এদিন খেলতে নামে ৪-৩-২-১ কৌশলে। আর বাংলাদেশের ইংলিশ কোচ পিটার বাটলার সাজান আক্রমণাত্মক ৩-৫-২ কৌশল। এতে ম্যাচের শুরুতেই নিয়ন্ত্রণ নেয় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। ১০ম মিনিটে প্রথম গোল আদায় করে বাংলাদেশ। দারুণ গোল পান শামসুনন্নাহার। ১৫তম মিনিটে দলকে দ্বিতীয় গোল এনে দেন ঋতুপর্ণা চাকমা। প্রথমার্ধের শেষ দিকে প্রতিপক্ষের অর্ধে ঝড় তোলে বাংলাদেশ। ৪০তম মিনিটে গোল আদায় করেন কোহাতি কিসকু। আর প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে জোড়া গোল করে ম্যাচ থেকে বাহরাইনকে ছিটকে দেন তুহরা খাতুন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটাও ছিল বাংলাদেশের। ৬১ ও ৭৪ মিনিটে আরও দুই গোল করে ‘সেভেন আপ’ পূর্ণ করেন বাংলাদেশের মেয়েরা।
উইমেন’স এশিয়া কাপ ফুটবলের মূল পর্বে কখনো খেলেনি বাংলাদেশ। তবে এবার বাছাইপর্ব উতরাতে পারবে বলে বিশ্বাস বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার জেমস বাটলারের। গ্রুপের তিন দলের মধ্যে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের (১২৮তম) পেছনে কেবল তুর্কমেনিস্তান (১৪১তম)। বাহরাইন ৯২তম এবং মিয়ানমারের অবস্থান ৫৫তম। ২রা জুলাই স্বাগতিক মিয়ানমারের বিপক্ষে খেলতে নামবে আফঈদারা। আর তুর্কমেনিস্তানের বিপেক্ষ ম্যাচ আগামী ৫ই জুলাই। বাছাইয়ের আট গ্রুপের সেরা আট দল পাবে মূল পর্বে খেলার টিকিট। কঠিন লক্ষ্যে বাটলার আত্মবিশ্বাস খুঁজে নিচ্ছেন দলের গত কয়েক মাসের পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে। সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে দুই ম্যাচ হারলেও আফঈদা-রিপারা শিখেছেন অনেক কিছু। র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা দুই দল ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানের সঙ্গে ড্রয়ে মেয়েদের খেলায় উন্নতির ছাপ দেখেন কোচ। আর গতকাল বাহরাইনের বিপক্ষে মেয়েরা দেখালো আরও চমক। আগের দিনসংবাদ সম্মেলনে বাটরার বলেন, ‘আমরা একটা প্রকল্পের মধ্যেই তিনটা কার্যক্রম চালাচ্ছি। জাতীয় দল, অনূর্ধ্ব-১৭ ও ২০ দল। আমাদের ফ্যাসিলিটিজ কম। এ কারণে তিনটা গ্রুপের কার্যক্রম একসাথে চলছে। সিনিয়র দলে ৫০ শতাংশ খেলোয়াড়ই অনূর্ধ্ব-২০ বছর বয়সী। ফলে আমাদের পাইপলাইনটা ভালো আছে, বয়সভিত্তিক দলের মেয়েরাও খেলতে পারে জাতীয় দলে। ফ্যাসিলিটিজ কম থাকলেও আমরা ইতিবাচক।’ বাংলাদেশ দলে ইংলিশ কোচ বলেন, ‘সীমিত সুবিধার মধ্যেই ফেডারেশন র্যাঙ্কিংয়ে উপরে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে ম্যাচের আয়োজন করেছিল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানের বিপক্ষে। সব মিলিয়ে এই টুর্নামেন্ট সবাই পুরোপুরি আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে শুরু করতে চায়।’
বাটলার বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমরা পেশাদার মনোভাব নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি। নিজেদের কাজগুলো করেছি। আমাদের ভিডিও অ্যানালিস্ট সব প্রতিপক্ষ নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে। আমি মনে করি, ফুটবল যে কোনো সময় আপনাকে বিস্মিত করতে পারে।’
বাছাই পেরিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার বিস্ময় মেয়েরা জন্ম দিতে পারবে কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে বাটলার বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতে একেবারেই তরুণদের নিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। সেখানে অনেক কিছু শিখেছে মেয়েরা। ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানের বিপক্ষে ড্র আমাদের জন্য একটা বেঞ্চমার্ক। এই সফরগুলো আমাদের দেখিয়েছে, আমরা কোথায় আছি, আমরা কী করতে পারি।’
বাটলার বলেন ‘আমাদের যে বাছাই পেরুনোর সুযোগ আছে- সেটা আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না। বাংলাদেশ কখনই কোয়ালিফাই করেনি, তবে আমরা একটা সফরে আছি। ইতিবাচক আছি। নতুনদের দারুণ উন্নতিতে আমি খুবই ইতিবাচক। আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে। একটার পর একটা ধাপ পেরুনো দিয়েই ভিত তৈরি হয়। সত্যি বলতে, যদি মেয়েরা তাদের সেরাটা দিতে পারে, তাহলে আমরা কোয়ালিফাই করতে পারি।’