খেলা
শূন্য থেকে শুরুর লড়াই মিরাজের
ইশতিয়াক পারভেজ, কলম্বো শ্রীলঙ্কা থেকে
৩০ জুন ২০২৫, সোমবার
কলম্বোর টিম হোটেল জুড়ে এক মিশ্র অনুভূতি। এনামুল হক বিজয়, তাইজুল ইসলাম, ও মুমিনুল হককে দেখা গেল হোটেলের পাশেই একটি অভিজাত শপিং কমপ্লেক্সে ঘুরে বেড়াতে। আজ সকালেই দেশে ফিরছেন তারা। অথচ সবকিছু ঠিক থাকলে গতকাল সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব (এসএসসি) মাঠে কলম্বো টেস্টের পঞ্চম দিনের খেলা চলতো। তারা সেখানেই ব্যস্ত সময় কাটাতেন। কিন্তু একদিন আগেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইনিংস ও ৭৮ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। পাঁচ উইকেট নেওয়া স্পিনার তাইজুল ইসলাম দেখা হতেই হাসলেন বটে, তবে সেই হাসিতে বিষন্নতার ছোঁয়া ছিল স্পষ্ট। তবে, লঙ্কা মিশন এখনো শেষ হয়নি। ২রা জুন থেকে শুরু হচ্ছে ওয়ানডে সিরিজের লড়াই। দুপুর ১টায় টিম হোটেল থেকে ওয়ানডে দলের ক্রিকেটাররা অনুশীলনের জন্য বের হলেন। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে হবে প্রথম দুটি ওয়ানডে ম্যাচ। তবে দল অনুশীলন শুরু করেছে সিংহলিজ স্পোর্টস গ্রাউন্ডেই (এসএসসি)। এই নতুন অধ্যায়ে নেতৃত্ব দেবেন নয়া ওয়ানডে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। শ্রীলঙ্কায় তার নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে, যা একরকম শূন্য থেকেই শুরু করতে হবে।
কেন শূন্য থেকে শুরু- প্রশ্নটা আসতেই পারে। ২০২৩ বিশ্বকাপের পর থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ফরম্যাট ওয়ানডেতে টাইগারদের নিম্নমুখী যাত্রা শুরু হয়েছে। আইসিসি র?্যাঙ্কিংয়ে ৬ থেকে দল নেমে গেছে দশম স্থানে। ঠিক এই সময় নয়া অধিনায়ককে শুরু করতে হবে শূন্য থেকেই। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ ড্র করেছিল। সেই সময় থেকেই এই ফরম্যাটে টাইগারদের এক দারুণ যাত্রা শুরু হয়েছিল, যা ২০২২ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কিন্তু গেল দু’বছরে একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্য যাত্রা নড়বড়ে হয়ে গেছে। বিদেশের মাটিতে শেষ তিনটি সিরিজ হেরেছে দল। ২০২৩ বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ আবারও পিছিয়ে পড়েছে। দেশের বাইরে আফগানিস্তানের কাছে ১-২ ব্যবধানে হেরে যায় দল, যা বড় ধাক্কা বলা যায়। এছাড়াও নিউজিল্যান্ডের কাছে ০-২ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১-২ ব্যবধানে হারে দল। এই পরিসংখ্যানগুলো স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, নয়া অধিনায়কের যাত্রা কঠিন চ্যালেঞ্জের সময়ে।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে মেহেদী হাসান মিরাজের কাঁধে অধিনায়কত্বের ভার। তার নেতৃত্বে তরুণ ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত এই দল আত্মবিশ্বাসী। এই সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য কেবল একটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নয়, এটি বিশ্ব ক্রিকেটে তাদের অবস্থান ফের দৃঢ় করার একটি সুযোগ। নতুন কৌশল, নতুন পরিকল্পনা এবং মিরাজের নেতৃত্ব সব মিলিয়ে বাংলাদেশ একটি নতুন শুরুর অপেক্ষায়। ভক্তরা আশা করছেন, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং অতীতের পারফরম্যান্সের চেয়েও ভালো কিছু উপহার দেবে। ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের লড়াইয়ে খুব বেশি সুখস্মৃতি নেই। তবে দেশের মাটিতে সাম্প্রতিক সময়ে টাইগাররা তাদের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে। ২০১৩ শ্রীলঙ্কা বনাম বাংলাদেশ এই ওয়ানডে সিরিজটি ছিল ১-১ ড্র। যা লঙ্কার মাটিতে প্রথম সাফল্য বললেও ভুল হবে না। সেবার ২৩শে মার্চ, হাম্বানটোটার মহিন্দা রাজাপক্ষ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কা ডি/এল (ডার্কওয়ার্থ-লুইস) পদ্ধতিতে ৮ উইকেটে জয় দিয়ে শুরু করেছিল। দ্বিতীয় ম্যাচটি একই মাঠে বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। এরপর, ২৮শে মার্চ পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ডি/এল পদ্ধতিতে ৩ উইকেটে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সিরিজ ১-১ ড্র করে। এরপর ২০১৭ সালেও শ্রীলঙ্কার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ ড্র করেছিল টাইগাররা। তবে, এখনো পর্যন্ত লঙ্কার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সবশেষ ২০১৯ সালে তামিম ইকবালের নেতৃত্বে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় টাইগাররা। ৬ বছর পর ফের লঙ্কায় রঙিন পোশাকে লড়াই। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে মিরাজের দুর্দান্ত নেতৃত্ব এবং অলরাউন্ড পারফরম্যান্সই তার জন্য জাতীয় দলের দরজা খুলে দিয়েছিল। সেই টুর্নামেন্টের পরেই তিনি দ্রুত জাতীয় দলে সুযোগ পান এবং টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক হয়। সেই পারফরম্যান্স তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে মিরাজ যেমন শূন্য থেকে দলের নেতৃত্বভার নিয়েছিলেন, তেমনি জাতীয় দলেও তার সামনে এখন একই চ্যালেঞ্জ। সবমিলিয়ে, বাংলাদেশ ৯১ ওয়ানডে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে খেলে ৩৫ জয়, ৪ ড্র এবং ৫২টি পরাজয়। এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশের ক্রিকেট যাত্রার এক পূর্ণাঙ্গ চিত্র, যেখানে রয়েছে শুরুর দিকের সংগ্রাম, মাঝের দিকের ধারাবাহিক উন্নতি, অভাবনীয় সাফল্য এবং সাম্প্রতিক সময়ের ফের ব্যর্থতার গল্প। অন্যদিকে, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ মোট ৪১টি দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে, যেখানে টাইগাররা ৯টি জয়, ৪টি ড্র এবং ২৮টি পরাজয় বরণ করেছে।