শেষের পাতা
ছয় মাসে ১০ হাজার মুরগির খামার বন্ধ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবারবাজারে ডিম ও মুরগির দাম না থাকায় গত ছয় মাসে দেশের প্রান্তিক খামারিদের কমপক্ষে ২ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন (বিপিএ)। এসময় দেশে প্রায় ১০ হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে বলেও জানানো হয়। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
এসময় সংগঠনটি সংকট মোকাবিলায় ডিম ও মুরগির ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের উৎপাদনে ধরে রাখতে এক হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করার দাবি জানায়। একই সঙ্গে করপোরেট কোম্পানির নিজস্ব উৎপাদন ও কন্টাক্ট ফার্মিং সুষ্ঠু নীতিমালা এবং পোল্ট্রি ডেভেলপমেন্ট উন্নয়ন বোর্ড গঠনে দাবি জানানো হয়।
এসময় সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, বাংলাদেশের পোল্ট্রি বাজার নিয়ন্ত্রণ হয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। তারা চাইলে দাম বাড়াতে-কমাতে পারে। মুরগি বা ডিমের দাম বাড়লে সরকারও হইচই করে, নানাভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু দাম কমলে, প্রান্তিক খামারিরা লোকসানে সরকার ঘুমিয়ে থাকে।
এখন মুরগি ও ডিমের দাম হঠাৎ করে কমে গেছে, তখন সাধারণ ভোক্তা হয়তো খুশি হন। কিন্তু আমরা প্রশ্ন করবো, এই স্বস্তি কী আসলেই স্বস্তি না কি একটা সময় অস্বস্তির মূল কারণ হবে। প্রান্তিক খামারিদের পুঁজি, শ্রম ও স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয়া হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ গড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা হচ্ছে, অথচ খামার পর্যায়ে বিক্রি করতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।
সোনালি মুরগি প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ ২৩০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, যা খামার পর্যায়ে বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকার ভেতর। একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা, যা খামার পর্যায়ে বিক্রয় করতে হচ্ছে ৬ টাকা থেকে ৮ টাকা।
তিনি বলেন, এ দেশে প্রতিদিন ব্রয়লার, সোনালি, লেয়ার মুরগির উৎপাদন ৫ হাজার ২০০ টন, প্রতিদিন ডিমের উৎপাদন ৪ থেকে সাড়ে ৪ কোটি পিস। এর ভেতর যদি প্রান্তিক খামারিরা ৩ হাজার টন মুরগি এবং প্রতিদিন ৩ কোটি পিস ডিম উৎপাদন করে থাকেন। প্রতি কেজি মুরগিতে গড়ে ৩০ টাকা লোকসান ধরলে প্রতি টনে ৩০ হাজার টাকা, ৩ হাজার টন মুরগিতে প্রতিদিন লোকসান দাঁড়ায় ৯ কোটি টাকা এবং তিন কোটি পিস ডিমে প্রতিদিন ২ টাকা গড়ে লোকসান ধরলে প্রতিদিন ৬ কোটি টাকা দাঁড়ায়। ডিম এবং মুরগিতে প্রতিদিন লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ কোটি টাকা। যা গত ৫ থেকে ৬ মাসে ডিম এবং মুরগিতে প্রান্তিক খামারিদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।
এ লোকসান হওয়ার প্রধান কারণ কোম্পানি ও তাদের কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে উৎপাদিত ডিম ও মুরগি এবং প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচের সঙ্গে বৈষম্য থাকায় এ সুবিধা নিচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী অসাধু চক্র। খামারিরা কম দামে বিক্রি করলেও ভোক্তারা ঠিকই বেশি দামে খাচ্ছে। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন চলতে থাকলে প্রান্তিক খামারি আর থাকবে না।
দুর্ভাগ্যবশত, প্রতিদিন শত শত খামার বন্ধ হচ্ছে। গত ছয় মাসে অন্তত ১০ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামার বন্ধ হয়েছে। একটি খামার বন্ধ মানে শুধু মুরগি বা ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়া নয়, বরং একটি পরিবার আয় হারাচ্ছে, একজন যুবক বেকার হয়ে যাচ্ছে, একটি সংসার ঋণের নিচে ডুবে যাচ্ছে।
এসময় বিপিএ ১০ দফা দাবি তুলে ধরে। সেগুলো হলো- জাতীয় পোল্ট্রি শুমারি ও ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি। সব ডিলার ও খামারি ব্যবসায়ীকে উদ্যোক্তা আইডি কার্ড দেয়া। নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, প্রশিক্ষণ ও নীতিনির্ধারণী সরকারি মিটিং প্রান্তিক খামারিদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ। প্রান্তিকদের জন্য সরকারি সব ধরনের নীতিগত সহায়তা ও জামানতবিহীন স্বল্প-সুদের ঋণ ব্যবস্থা। ফিড, ভ্যাকসিন ও ওষুধের দামে স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারিভাবে ফিডমিল ও হ্যাচারি স্থাপনের উদ্যোগ। বাজার ধসসহ বিভিন্ন সংকটকালীন প্রতিকূলতায় সময় প্রান্তিক খামারিদের জন্য প্রণোদনা ও ভর্তুকি ব্যবস্থা করতে হবে। সুষ্ঠু কন্ট্রাক্ট ফার্মিং নীতিমালা প্রণয়ন ও জাতীয় পোল্ট্রি উন্নয়ন ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গঠন।
এ সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মেজবাউল হক মারুফি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাউসার আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।