শেষের পাতা
সিলেটে হার্ডলাইনে বিএনপি
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবারসিলেটে মামলায় ব্যক্তি আক্রোশে আসামিসহ নানা ঘটনায় হার্ডলাইনে বিএনপি। যারাই এসব ঘটনায় জড়িত হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে সিনিয়র নেতারা ইতিমধ্যে কয়েক দফা সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। ৫ই আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত সিলেটে অন্তত ৩০টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা ও নগর বিএনপি’র পক্ষ থেকে হাতে গোনা কয়েকটি মামলা মনিটরিং করা হয়েছে। অন্য মামলাগুলো আহত ও নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। কিন্তু এসব মামলায় দেখা যাচ্ছে- অনেক নিরীহ ও নিরাপরাধ মানুষদের আসামি করা হয়েছে। বাদ যাচ্ছেন না দলীয় নেতাকর্মীসহ সাংবাদিকরাও। পেশাজীবী সংগঠনেরও অনেকে আসামি হচ্ছে। এতে করে এক ধরনের অস্বস্তি বিরাজ করছে সিলেটে। একইসঙ্গে অনেকেই আবার মামলা নিয়ে বাণিজ্যও চালাচ্ছে। মামলার ভয় দেখিয়ে করা হচ্ছে ব্ল্যাকমেইল। হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকাও। এসব ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন সিলেট বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। নেতাদের কথা হচ্ছে- ৫ই আগস্টের আগের ঘটনায় আক্রান্ত কেউ বা তার পরিবারের তরফ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার যৌক্তিকতা রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে নির্দোষ মানুষজনকে হয়রানি, মামলা বাণিজ্য করা যাবে না। যারাই এসব ঘটনায় জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলা ঘেটে দেখা গেছে; কয়েক দিন আগে নগরের ৫নং ওয়ার্ডের ছাত্রদল পরিচয়ধারী একজনের মামলায় আসামি করা হয়েছে এক সাংবাদিককে। আরেক মামলায় বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আব্দুস শুকুর ও তার ভাইকে আসামি করা হয়েছে। সিলেটে সাংবাদিক দেবাশীষ দেবুকে ইতিমধ্যে কয়েকটি মামলায় আসামি করা হয়েছে। এভাবে সিলেটে অন্তত ১০-১২ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। ব্যক্তি আক্রোশ থেকে এসব মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাংবাদিকরা। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক দেবু নিজেও বিব্রত। জানিয়েছেন, কে, কীভাবে আমাকে আসামি করছে কিছুই জানি না। হঠাৎ হঠাৎ এজাহারে তার নাম দেখছেন। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত সাংবাদিক সংগঠনের নেতারাও। সিলেট নগরের একটি ঘটনায় জাফলংয়ের ব্যবসায়ী আলিম উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। আলিম উদ্দিন জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে কয়েক দফা তাকে ফোন করে মামলার আসামি করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ চাচ্ছেন টাকাও। লন্ডনে বসে মামলার আসামি হয়েছে ইসলামী বক্তা মুফতি শাহীদুর রহমান মাহমুদাবাদী। এ নিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে তিনি ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। এ নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে সিলেটে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, ভুক্তভোগী কেউ আইনের আশ্রয় নিতেই পারেন। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে আসামির তালিকায় যেন শুধুমাত্র প্রকৃত অপরাধীদের নাম থাকে। নতুবা পরবর্তীতে এসব মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী ও জেলার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ভুয়া আসামি দেয়ার ব্যাপারে ইতিমধ্যে সিলেট বিএনপি’র তরফ থেকে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। ভুয়া আসামি করার কোনো প্রমাণ পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এদিকে- দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও ব্যক্তি আক্রোশে নির্দোষ ব্যক্তিকে মামলার আসামি করার অভিযোগে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক এডভোকেট শাহাজাহান সিদ্দিকীকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জেলা যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। জেলা যুবদলের সভাপতি এডভোকেট মোমিনুল ইসলাম মোমিন ও সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমেদ স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও ব্যক্তি আক্রোশে চলমান দায়েরকৃত মামলায় নির্দোষ ব্যক্তিকে আসামি করা সংক্রান্ত ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকায় দলের ভাবমূর্তি বিনষ্টের সুস্পষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যুবদল গোয়াইনঘাট উপজেলা শাখার আহ্বায়ক পদ থেকে আপনাকে অব্যাহতি প্রদান ও একইসঙ্গে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।’ সিলেট জেলা যুবদলের সভাপতি এডভোকেট মোমিনুল ইসলাম মোমিন মানবজমিনকে জানয়িেছেন, নিরপরাধ মানুষ কোনো ধরনের মামলা-হয়রানির শিকার হলে আমাদের অবগত করার অনুরোধ করছি। আমরা তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।’
যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত : যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ছাত্রদল জেলা ও মহানগর শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক ও সদস্য সচিববৃন্দের এক জরুরি সভা শুক্রবার রাতে নগরীর একটি হোটেলের হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা যুবদলের সভাপতি এডভোকেট মোমিনুল ইসলাম মুমিন, সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ, মহানগর যুবদলের সভাপতি শাহ নেওয়াজ বক্ত তারেক, সাধারণ সম্পাদক মির্জা সম্রাট, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল, সদস্য সচিব শাকিল মুর্শেদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী, সদস্য সচিব আফসর খান, জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুবের আহমদ, সাধারণ সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন দিনার, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সুদীপ জ্যোতি এষ, সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি আহসান। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয় এমন কর্মকাণ্ডে কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে। সভায় কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়; অর্জিত বিজয়কে কোনো অবস্থায় প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেয়া হবে না। কারও ব্যক্তিগত অপকর্মের দায় সংগঠন নেবে না।