দেশ বিদেশ
পঞ্চদশ সংশোধনীর রুল শুনানি কেউ যেন বলতে না পারে যে ন্যায়বিচার পাইনি: হাইকোর্ট
স্টাফ রিপোর্টার
৮ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবারতত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, কেউ যেন বলতে না পারে যে, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। গতকাল বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রুলের তৃতীয় দিনের শুনানিতে এ মন্তব্য করেন তিনি। একপর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, এই রায়টি আমরা কলমের মাধ্যমেই লিখবো। মানুষ এটি ৫০ বছর বা আরও বেশিদিন মনে রাখবে। কেউ যেন বলতে না পারে যে, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। এরপর আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেন।
এদিন বিএনপি’র পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সকালে শুনানি করেন। বিকালে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শাহরিয়ার কবির। তিনি সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং অনুচ্ছেদ ৭ (বি) সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু অনুচ্ছেদ নিয়ে যুক্তি তুলে ধরেন। শুনানির বিষয়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধান অনুযায়ী করা হয়নি। এটা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান বিরোধী। এখানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়নি। জনগণ যাতে ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে না পারে সেজন্য পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত ১৩তম সংশোধনী মামলায় আপিল বিভাগের রায়ের সময় প্রধান বিচারপতি নিজের মুখে বলেছিলেন আগামী দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। পরবর্তীতে সাতদিন পরে সংবিধান সংশোধন হয়ে গেল। এ মামলার লিখিত রায় প্রকাশের আগেই সংবিধান সংশোধন হয়ে যায়। অপরদিকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার ১৬ মাস পরে লিখিত রায় দিলেন। তখন আমি সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি হিসেবে বলেছিলাম এই রায়কে কোনো রায় বলা যায় না। যে পঞ্চদশ সংশোধনী হয়েছে সেটা সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে। এইসব দিক আমরা আদালতে তুলে ধরে বলেছি যে, এই সংবিধান সংশোধনী যেটা করা হয়েছে। সেটা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান বিরোধী। তবে কিছু কিছু বিধান রয়েছে যেগুলো থাকা দরকার। এ বিষয়ে পরবর্তীতে আমরা লিস্ট করে আদালতে প্লেস করবো। এখানে মূল বিষয় হলো- পঞ্চদশ সংশোধনীর সংবিধান মোতাবেক হয়নি। এটা সংবিধানবিরোধী হয়েছে।
আদালতে বদিউল আলম সুজনসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপি’র পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। জামায়াতের পক্ষে ছিলেন এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তামিম খান। এর আগে গত ৩০শে অক্টোবর প্রথম দিন এবং ৬ই নভেম্বর দ্বিতীয় দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ দুইদিন শুনানি করেছেন ড. শরিফ ভূঁইয়া।
গত ১৯শে আগস্ট জনস্বার্থে পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তির করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। পরে আবেদনকারী পক্ষ রুলটি শুনানির জন্য বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন কোর্টে উপস্থাপন করেন। এরপর আদালত রুল শুনানির জন্য ৩০শে অক্টোবর দিন রেখেছিলেন।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। অন্য চারজন হলেন- তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। এরপর এ রুলের ওপর মতামত দিতে বিএনপি, জামায়াত, গণফোরাম ও আইনজীবী মোস্তফা আসগর শরিফী প্রমুখ যুক্ত হন।