ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

ব্যাকফুটে চুন্নু, গ্রেপ্তার নাকি পুনর্বাসন!

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবারmzamin

বাংলাদেশের রাজনীতির এক আলোচিত-সমালোচিত চরিত্র জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। অন্য একটি রাজনৈতিক দলের নেতা হয়েও বিগত ১৫ বছরেরও বেশি সময়ে আওয়ামী শাসনামলে ছিলেন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। এমপি থেকে শুরু করে মন্ত্রিত্ব পর্যন্ত সব স্বাদই নিয়েছেন। আলোচনা রয়েছে, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন থেকে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো যখন নির্বাচন বয়কট বা বর্জনের পথে হাঁটে, তখন জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে নেয়ার ক্ষেত্রে কৌশলী ভূমিকা রাখেন মুজিবুল হক চুন্নু। মহাজোটের অংশীদার হিসেবে তখন তিনি হাসিনা সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে চুন্নু তার নিজ আসন কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) এর প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে আওয়ামী লীগকে সরিয়ে দেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত ড. মিজানুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে সরকারি দলের সহযোগিতায় ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির মাধ্যমে তাকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হন মুজিবুল হক চুন্নু। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর পুরস্কার হিসেবে মুজিবুল হক চুন্নু মন্ত্রিসভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এরপর ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর রাতের ভোটের নির্বাচনেও মুজিবুল হক চুন্নুর কৌশলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের সঙ্গী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি।

 মহাজোট প্রার্থী হিসেবে চুন্নু ‘লাঙ্গল’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। সে নির্বাচনে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরার স্বীকারোক্তি তিনি নিজেই দিয়েছেন। ২০২২ সালের ৩১শে জুলাই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে জাতীয় পার্টির সংলাপে তিনি বলেছিলেন, ‘রাতে কিন্তু কাজটা (ভোট দেয়া) হয়। হয় মানে কী, আমরাই করাইছি। কী বলবো এটা হয়। এটা হয় না, ঠিক না।’ এর আগে ২০২১ সালের ৯ই অক্টোবর জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান থেকে মুজিবুল হক চুন্নুকে মহাসচিব করা হয়। তাকে মহাসচিব করার ব্যাপারেও সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তদবির ছিল বলে গুঞ্জন রয়েছে। জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র বলছে, সর্বশেষ গত ৭ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে মহাসচিব হিসেবে প্রায় একক সিদ্ধান্তে চুন্নু জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে নিয়ে যান। এমনকি গত ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় মুজিবুল হক চুন্নু তার নির্বাচনী পোস্টারে নিজেকে ‘জাতীয় পার্টি মনোনীত ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত’ প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেন। সে সময় বিষয়টি বেশ সমালোচিত হয়। এদিকে গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শুরুর দিকে বেশ স্বস্তিতেই ছিলেন মুজিবুল হক চুন্নু। ৫ই আগস্ট সেনাপ্রধানের সঙ্গে জাতীয় পার্টির বৈঠক এবং ৩১শে আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলে ছিলেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের বিরোধিতার মুখে পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে ডাক পায়নি জাতীয় পার্টি। এতে জাতীয় পার্টির পাশাপাশি দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বিপাকে পড়েন। এ রকম পরিস্থিতির মধ্যেই গত ৬ই অক্টোবর রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায় মুজিবুল হক চুন্নুকে আসামি করা হয়।

 বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিকে ঘিরে গত ৫ই আগস্ট রাজধানীর আজমপুর এলাকায় গুলিতে নিহত আলমগীর হোসেন (৩৪) এর মা মোসা. আলেয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে করা এ মামলায় ৬নং আসামি করা হয়েছে মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে। ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে এটি মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া প্রথম ও একমাত্র মামলা। এরপর থেকেই অনেকটা ব্যাকফুটে রয়েছেন মুজিবুল হক চুন্নু। তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়টি তার নিজ জেলা কিশোরগঞ্জে জানাজানি হওয়ার পর সেখানে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া তার নিজ এলাকার মানুষ মুজিবুল হক চুন্নুকে এ মামলায় অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। এ পরিস্থিতি চুন্নু কীভাবে সামাল দিবেন, সেটিই এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে শনিবার (১২ই অক্টোবর) জাতীয় পার্টি আয়োজিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সকল থানা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ বরাবরই আমাদের অনৈতিকভাবে বিভিন্ন চাপে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করেছে। তাদের কাছে অনেক সময় আমরা জিম্মিও ছিলাম। 

এখন কোনো চাপ নেই তাই আমরা স্বাধীনভাবে আমাদের রাজনৈতিক কর্মকৌশল প্রণয়ন করে জনগণকে প্রকৃত সেবা দেয়ার লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হবো। জনগণ আমাদেরকেই সমর্থন করবে। এজন্য ধৈর্য্য ধারণ করে কারও কোনো উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হয়ে পার্টির সকল সাংগঠনিক কার্যক্রমে একাগ্রতার সহিত অংশগ্রহণ করতে হবে এবং জনগণকেও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দলীয় ফোরামে চুন্নু যাই বলেন না কেন, আওয়ামী লীগকে সর্বগ্রাসী হয়ে উঠতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল জাতীয় পার্টি এবং এক্ষেত্রে প্রভাবকের ভূমিকায় ছিলেন মুজিবুল হক চুন্নু। তাই বর্তমান পরিস্থিতি জাতীয় পার্টি কিংবা চুন্নু কারওরই অনুকূলে নয়।
বিশেষ করে চুন্নুর বিরুদ্ধে বেশি সরব আলোচনা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হবেন কি-না, সেটি নিয়েও নানা আলোচনা রয়েছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে তিনি পুনর্বাসিত হন কি-না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

পাঠকের মতামত

আওয়ামীলীগের অপশাসনের সবচেয়ে বড় দোসর জাতীয় পার্টি। তাই জাতীয় পার্টির বিচার ও নিশ্চিত করতে হবে।

মো সাধু খোকন
১ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৮:৫৬ পূর্বাহ্ন

২০২৪ সালের নির্বাচনে তার পোষ্টারে লেখা ছিল,"জাতীয় পার্টি মনোনীত" এবং "আওয়ামী লীগ সমর্থিত" প্রার্থী মুজিবুল হক চুন্নু। এই আওয়ামী দোসরকে আইনের আওতায় আনা হোক।

Andalib
২৫ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১:৩৮ অপরাহ্ন

AT least this person should be arrested.

Sulaiman
১৪ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৭:৪৮ পূর্বাহ্ন

এদের নীতি-নৈতিকতার বালাই নেই। এধরনের লোক রাজনীতিতে না থাকাই উত্তম। তাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে সোপর্দ করা হউক।

Shad
১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১২:০২ অপরাহ্ন

এদের মত ধান্দাবাজদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।

AA
৩১ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৮:৫৩ পূর্বাহ্ন

আওয়ামীলীগ দানব ও হিংস্র হওয়ার পেছে এদের অসীম দায় রয়েছে। তাই এদেরকেও আইনের আওতায় আনা উচিৎ।

তাজাম্মল হোসেন
৩০ অক্টোবর ২০২৪, বুধবার, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন

স্বৈরাচার কে সহযোগিতা করার জন্য চুন্নুর মত রাজনীতিবিদদের বিচার করা উচিত এবং জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা উচিত

Mosaddeque
৩০ অক্টোবর ২০২৪, বুধবার, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন

জাতীয় পার্টিতে নিষিদ্ধ করা হোক। ওরা মরনাস্ত্র ওরা ঘৃণিত ওরা দেশদ্রোহী ওরা চাটুকার ওরা স্বার্থপর ওরা দালাল ওরা অন্ধকারের শিয়াল ওরা ওরা ক্ষুধার্ত।

কামরুজ্জামান বাবলু
২৮ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ৯:৫৩ পূর্বাহ্ন

এদের নীতি-নৈতিকতার বালাই নেই। এধরনের লোক রাজনীতিতে না থাকাই উত্তম। তাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে সোপর্দ করা হউক।

Md. Jahirul Islam
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ১১:৫২ অপরাহ্ন

এরা ফ্যাসিস্ট থেকেও ভয়ংকর...

Sk
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ১১:২৭ অপরাহ্ন

এই চুন্নু এবং রওসন এরশাদের সুবিধাজনক ডিগবাজির কারনেই হাসিনা তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে পেরেছেন কাজেই হাসিনার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

ডাঃ মীর মাহমুদ হোসেন
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ১০:৩৮ অপরাহ্ন

জাতীয় পার্টিতে চুন্নু একটা পাক্কা আওয়ামী লীগ। এটা বহু বসর আগে থেকেই জানি

Md.ABDUL BAREK
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ৯:৪৮ অপরাহ্ন

বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী দু শাসনের দোশর হিসেবে কাজ করেছে জাতীয় পার্টি। তাই দল হিসেবে এবং ব্যক্তি হিসেবে মুজিবর হক চুন্নু এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং এরশাদের স্ত্রী ডাইনি মহিলা রওশন এরশাদের বিচার করতে হবে এই জাতীয় পার্টি যদি আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতো তাহলে এই ফ্যাসিস্ট হাসিনা কখনোই ক্ষমতার মসনদে টিকিয়ে থাকতে পারত না

Kamrul Hassan
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ৬:২৬ অপরাহ্ন

এক নম্বর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা হলে দ্বিতীয় হবেন মুজিবুল হক চুন্নু ।

হাসান সোহরাব
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ৫:১১ অপরাহ্ন

জনাব মজিবুল হক চুন্নু একজন তস্কর রাজনৈতিক ব্যক্তি। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের এত প্রসার হতো না যদি জাতীয় পার্টি তাদের দালালী না করত।

এম,এইচ, বারী
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ৪:৩৬ অপরাহ্ন

চুন্নুর আচার আচরন একজন রাজনীতিবিদের মত মনে হয় না, তাকে সব সময় একজন সুবিধাবাদী টাউট বাটপারই মনে হয়।

Alam
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ২:৫০ অপরাহ্ন

চুন্নু হল এ দেশের বাটপারি রাজনীতির গডফাদার। এইসব রাজনৈতিক ক্ষমতা লিপ্সু আবর্জনাকে সমূলে ধ্বংস করে এ দেশে ন্যায়ের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বীর বাংগালী
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ১:১৭ অপরাহ্ন

আওয়ামীলীগের অপশাসনের সবচেয়ে বড় দোসর জাতীয় পার্টি। তাই নতুন বাংলাদেশ গড়তে জাতীয় পার্টির বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

Sohag Ahmed
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন

সকল অপরাধীকে গ্রেফতার করে ন্যায়বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক অবিলম্বে। যত দেরি হচ্ছে তত আমরা ন্যায়বিচার থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।

ইরফান
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ৯:২৯ পূর্বাহ্ন

স্বৈরাচারের দোসর

sadek
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ৪:০২ পূর্বাহ্ন

এইসব গৃহপালিত, ধান্দাবাজরা গণতন্ত্র ও জনগণের জন্য ক্ষতিকর। মানুষের ভোটাধিকার হরণের অভিযোগে এদের সর্বোচ্ছ শাস্তি হউয়া উচিত।

AA
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status