দেশ বিদেশ
ভারতীয় পানিনীতি ২৪ কোটি মানুষের অস্তিত্ব হুমকিতে ফেলছে- জাতিসংঘে পাকিস্তান
মানবজমিন ডেস্ক
২৬ মে ২০২৫, সোমবার
পাকিস্তান জাতিসংঘকে সতর্ক করেছে। বলেছে, ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তে সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিত করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং এটি একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর ফলে ২৪ কোটি মানুষের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন। শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘে ‘সশস্ত্র সংঘাতে পানিসম্পদ রক্ষা’ বিষয়ক আলোচনায় পাকিস্তানের ডেপুটি স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত উসমান জাদুন এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এটি মানবাধিকার আইন, চুক্তি আইন ও প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। ভারত এই চুক্তি স্থগিত করে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে। তিনি ভারতের এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং যুদ্ধকালীন আচরণের পরিপন্থি হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন, ভারত যদি নদীর প্রবাহ বন্ধ করে, ঘুরিয়ে দেয়া বা সীমিত করার চেষ্টা করে, তা হলে আমরা তা কখনোই মেনে নেবো না। এসব নদী পাকিস্তানের ২৪ কোটি মানুষের প্রাণ। রাষ্ট্রদূত জাদুন ভারতের কিছু রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যকে ‘ভয়ঙ্কর ও বিকৃত মানসিকতার প্রকাশ’ বলে মন্তব্য করেন এবং উল্লেখ করেন, পাকিস্তানিদের অনাহারে মারার মতো বক্তব্য একটি বিপজ্জনক মানসিকতা প্রতিফলিত করে। তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে এ বিষয়ে নজরদারি চালানো ও প্রয়োজনীয় পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান। বলেন, যেসব পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে মানবিক বিপর্যয় ঘটাতে পারে, সেগুলোর দিকে নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি দেয়া জরুরি। পাকিস্তানের বক্তব্যে তিনটি মূল বিষয় তুলে ধরা হয়। তা হলো- আইনি বাধ্যবাধকতা ও নিষেধাজ্ঞা, সংঘাতরত পক্ষগুলোর দায়িত্ব এবং পানির সামরিকীকরণ রোধ। জাদুন বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, একটি রাষ্ট্র তার দূরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য পানিকে অস্ত্র বানানোর চেষ্টা করছে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, যেন জলসম্পদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বা সামরিক কৌশলের অংশ হিসেবে ব্যবহার না করার বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ ও নীতিনিষ্ঠ অবস্থান নেয়া হয়।
এই আলোচনা ছাড়াও, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘সশস্ত্র সংঘাতে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা’ বিষয়ক এক অধিবেশনে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলের মধ্যে তীব্র বাক্যবিনিময় ঘটে। পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার আহমেদ অভিযোগ করেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী সম্প্রতি পাকিস্তানে বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। জবাবে ভারতের প্রতিনিধি পারভথানেনি হরিশ বরাবরের মতো পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ সমর্থনের অভিযোগ এনে বলেন, সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করে পাকিস্তান কোনোভাবেই বেসামরিক সুরক্ষা নিয়ে কথা বলার অধিকার রাখে না। এর জবাবে পাকিস্তানি প্রতিনিধি সাইমা সেলিম পাল্টা বক্তব্যে বলেন, ভারত তথ্য গোপন, বিভ্রান্তি ছড়ানো ও অস্বীকারনীতির আশ্রয় নিচ্ছে। বাস্তবতা হলো, ভারত কাশ্মীরে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, পাকিস্তানে সন্ত্রাস ও গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি খুজদারে স্কুলবাসে হামলা চালিয়ে স্কুলশিশুদের হত্যা ও আহত করার ঘটনায় ভারতের জড়িত থাকা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এই হামলা ভারতীয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কাজ। সাইমা সেলিম বলেন, যদি ভারত সত্যিই শান্তি ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক চায়, তাহলে তাকে কাশ্মীরে দমননীতি বন্ধ করতে হবে, আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে চলতে হবে এবং কাশ্মীর ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধানে আন্তরিক আলোচনায় আসতে হবে।