খেলা
বোলিং কোচের চোখে হোয়াইটওয়াশের কারণ
টি-টোয়েন্টিতে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ
স্পোর্টস রিপোর্টার
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবারওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডকে দাপটের সঙ্গেই হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ নারী দল। ধারণা করা হচ্ছিল টি-টোয়েন্টি সিরিজেও নারী দল থাকবে একই ধারাবাহিকতায়। কিন্তু এ যেন বুমেরাং! সিলেটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টানা তিন ম্যাচ হেরে হোয়াইটওয়াশ নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। ফরম্যাট পরিবর্তন হতেই কেন এমন শোচনীয় হার? অধিনায়ক ম্যাচ শেষে অকপটে জানিয়েছেন তারা ব্যর্থ! ব্যাটিং, বোলিং এমনকি ফিল্ডিং, তিন বিভাগেই দুর্বলতা আর টি-টোয়েন্টি চাপ নিতে না পারাকে নিজেদের ভুল বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে দলের বোলিং কোচ রবিউল ইসলাম শিবলু দৈনিক মানজমিনকে বলেন, বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি নারী দল এখনো অনেকটা পিছিয়ে। যে কারণে ওয়ানডে ফরম্যাটে তাদের সফলতার পরও ২০ ওভারের ম্যাচে ব্যর্থতাগুলো বেশি চোখে পড়েছে। আর ছোট ছোট ভুলগুলোতেই দিতে হয়েছে বড় খেসারত। তিনি বলেন, ‘দেখেন আমরা তিনটা ম্যাচেই জিততে জিততে হেরেছি। প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতা, শেষ দিকে এসে খেই হারিয়ে ফেলে ব্যাটাররা। ১৯তম ওভারে মেডেন দিয়েছে সেটিও বড় বিষয় না, পরপর উইকেট হারানোর পরই ওরা আর চাপটা নিতে পারেনি। শেষ ম্যাচেও একই অবস্থা, ক্যাচ ফেলে দিয়েছে দুটি। নয়তো ম্যাচটা জিতে যেতো। তবে আমার কাছে যা মনে হয়েছে ছোট ছোট ভুলগুলো থেকে বের হতে না পারা একটি সমস্যা। আর টি-টোয়েন্টিতে আমরা পিছিয়ে আছি। যে কারণে ফরম্যাট বদলের পর দলের দুর্বলতাগুলোও চোখে পড়েছে।’
রবিউল ইসলাম শিবলুকে পেস বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে আইরিশদের বিপক্ষে সিরিজের জন্য। তিনি দলের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজও যাবেন সফরে। সেখানে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ওয়ানডে সিরিজ। সেখানে দুটি ম্যাচ জিততে পারলে বাংলাদেশ ভারতে নারী বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগ পাবে। দলের সঙ্গে খুব বেশি কাজ করার সুযোগ না পেলেও এই কোচ নারী দলে ঘাটতিগুলো ঠিক ধরতে পেরেছেন। ব্যাটিং ব্যর্থতাকে যেমন তিনি যেমন কারণ হিসেবে দেখছেন তেমনি দলের মানসিক শক্তির দুর্বলতাও খুঁজে পেয়েছেন তিনি। জাতীয় দলের সাবেক এই বোলার বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি দলের বেশ ঘাটতি আছে। যেমন এখনো ফিল্ডিংয়ে দলের উন্নতির প্রয়োজন। দলের ফিটনেসে উন্নতি হলেও ফিল্ডিংয়ে আরো মনোযোগ দিতে হবে। এছাড়াও আমি বলবো মানসিকভাবে আরো শক্ত হতে হবে। এখানে বেশ ঘাটতি আছে।’ এছড়াও পেস বোলারদেরও নিয়মিত একজন কোচ প্রয়োজন বলেও মনে করেন শিবলু। তিনি বলেন, ‘আমাদের দলে জাহানারা আলম বেশ অভিজ্ঞ, মারুফাও বেশ ভালো বল করে। কিন্তু ওদের উন্নতির বেশ কিছু জায়গা আছে। আমি দলের সঙ্গে যোগ দেয়ার পর ছোট ছোট সেই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি। এটি খুব জরুরি যে একজন পেস বোলিং কোচ সঙ্গে থাকা। আমাদের খুব বেশি পেসার নেই। মাত্র ৬ বা ৭ জন। তাদেরকে গ্রুমিং করতে হবে। আর যারা নতুন আসবে তাদের পথ দেখাতে হবে। তাহলে বোলিং ইউনিটেও শক্তি বাড়বে।’ প্রথম ম্যাচে ১১ ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল ১০৩ কোনো উইকেট না হারিয়ে। আস্কিং রানরেট ধরাছোঁয়ার মধ্যে। এরপর টাইগ্রেসরা উইকেট হারায় নিয়মিত বিরতিতে। ৩৫ বলে ৪৬ করে প্রেন্ডারগেস্টের শিকার হন সোবহানা মুস্তারি। ৪১ বলে ৪৯ করে আউট হন দিলারা আক্তার। দুই সেট ব্যাটার আউট হয়ে যাওয়ায় রান রেট বাড়ছিল তরতর করে। শেষ তিন ওভারে চাই ৩৩। আঠারতম ওভারে এলো ১৫ রান। শেষ দুইয়ে প্রয়োজন ১৮ রান। ঐ সময় জোড়া উইকেট মেডেন প্রেন্ডারগেস্টের। আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি স্বাগতিকরা। শেষ ম্যাচে গতকাল টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি। সোবহানা মোস্তারি ও শারমিন আক্তার সুপ্তার ব্যাটে ৭ উইকেটে ১২৩ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে বিপদেই পড়েছিল আইরিশরা। শেষ ওভারে জেতার জন্য প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। স্বর্ণা আক্তারের করা ওভারের প্রথম বল থেকে একটি রান নিলেও উইকেট হারাতে হয় তাদের। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে আউট হন আর্লেন কেলি। স্বর্ণার করা দ্বিতীয় ডেলিভারিটি ছিল ফুলটস, ঠিকমতো টাইমিং না হওয়ায় ক্যাচ যায় লং অফে। কিন্তু সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন রিতু মনি। উল্টো ২ রান পায় স্বাগতিকরা। এরপর টানা দুই চার মারেন জীবন পাওয়া ডেলানি। এরপরও সুযোগ পায় বাংলাদেশ। আইরিশদের যখন ২ বলে ৪ রান দরকার, ডেলানি শট খেলতে গিয়ে আবারও ক্যাচ তোলেন। লং অফে দাঁড়ানো জান্নাতুল ফেরদৌস বলের গতিপথ বুঝতে পারেননি। ক্যাচ তো নিতেই পারেননি, উল্টো চার হয়ে যায়। ব্যাস ৪ উইকেটের হার! তীরে এসে তরী ডুবা নিয়ে শিবলু বলেন, ‘এখানেই বলেছি যে মানসিকভাবে পিছিয়ে আছে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি আরো পরিপক্ক হতে হবে দলকে।’