শেষের পাতা
১৩ পুলিশ প্রত্যাহার
সিলেটে শারপিন টিলা নিয়ে ঘুম ভাঙলো পুলিশের
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার
সিলেটের শারপিন টিলা নিয়ে অনেক দেরিতে ঘুম ভাঙলো পুলিশের। ততক্ষণে গিলে খাওয়া হলো আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত ওই টিলাকে। এ নিয়ে গত ৬ মাস ধরে শুধু আফসোসই করছিলেন এলাকার মানুষ। কিন্তু পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে এই টিলা লুটেপুটে খেয়ে ফেলা হলো। ঠিক কতো টাকার পাথর এই টিলা থেকে লোপাট করা হয়েছে এ নিয়ে স্পষ্ট কিছু না পাওয়া গেলেও স্থানীয়দের ধারণা প্রায় ৪০০ কোটি টাকার পাথর এই টিলা থেকে এবার লুট করা হয়েছে। এতে জড়িত রয়েছে পুলিশ। এই অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ থানার ১৩ পুলিশ সদস্যকে গতকাল প্রত্যাহার করা হয়েছে। সিলেটের পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রাসেলুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাদেরকে কোম্পানীগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রত্যাহার হওয়া ১৩ পুলিশ সদস্যরা হলেন- কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই খোকন চন্দ্র সরকার ও মিলন ফকির, এএসআই শিশির আহমেদ মুকুল ও শামীম হাসান, কনস্টেবল নাজমুল আহসান, মুন্না চৌধুরী, নাইমুর রহমান, তুষার পাল, আবু হানিফ, সাখাওয়াত সাদী, সাগর চন্দ্র দাস, মেহেদী হোসেন, ও কিপেস চন্দ্র রায়। সিলেট জেলা পুলিশের সিনিয়র এএসপি ও মিডিয়া কর্মকর্তা সম্রাট তালুকদার গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- প্রাথমিকভাবে দায়িত্বে অবহেলার কারণে ওই পুলিশ সদস্যদের কোম্পানীগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে আসা হয়েছে। পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান তাদের ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- শারপিন টিলার ১৩৭ দশমিক ৫০ একরের এ টিলাটি এখন নিশ্চিহ্ন। টিলার কোনো অস্তিত্ব নেই। সমতল স্থান পরিণত করা হয়েছে বড় বড় গর্তে। হযরত শাহ আরেফিন (র.) এর মাজার ভেঙে ফেলা হয়েছে। খেলার মাঠ, বড় বড় গাছ সব কিছুই উজাড়। গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে নতুন করে এ টিলা কেটে পাথর উত্তোলন শুরু করে স্থানীয়রা। তারা জানিয়েছেন- স্থানীয় বিএনপি, যুবদল নেতারা একত্রে মিলে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলে এই টিলার পাথর লুটপাট করেছেন। আর পুলিশ পথে টোল বসিয়ে চাঁদাবাজি করতো। ফলে এই লুটের সঙ্গে পুলিশের মদত ছিল। এ কারণে এলাকার লোকজন কেউ ভয়ে মুখ খুলতেন না। প্রতিদিন দিনরাতে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাক্টর পাথর পরিবহনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আজির উদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে টিলায় প্রতি কোয়ারির গর্ত থেকে বিজিবি’র নামে ৫০০ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছেন। সেখান থেকে চিকাডহর মসজিদের সামনে থেকে বিজিবি নিজ হাতে নিচ্ছে ট্রাক্টর প্রতি ৩০০ টাকা। চিকাডহর গ্রামের আঞ্জু মিয়ার বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে ৫০০ টাকা নিচ্ছেন ইব্রাহিম ও শাহরিয়ার। পর্যায়ক্রমে নোয়াগাঁও ও বাবুলনগর মোড়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ নিজ হাতে ৫০০ টাকা নিচ্ছে। নোয়াগাঁও মাদ্রাসার সামনে ১০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। পাড়ুয়া উজানপাড়া পয়েন্টে রাসা নামের এক ব্যক্তি নিচ্ছেন ২০০ টাকা। রুস্তমপুর এলাকায় একটি পাথর খেকো চক্র নিচ্ছেন ২০০ টাকা করে। এভাবে একটি ট্রাক্টর টিপ প্রতি ২০০০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। এভাবেই প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। আর এসব চাঁদাবাজির অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে খাচ্ছেন প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা। এদিকে- শাহ আরেফিন টিলা থেকে মহাসড়ক পর্যন্ত পাথর পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাক্টর নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে পথে পথে বিভিন্ন নামে বেনামে দিতে হয় চাঁদা। কোম্পানীগঞ্জ বিএনপি’র সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন শারপিন টিলা ও বাঙ্কার এলাকা লুটের জন্য পুলিশকে দায়ী করেছেন। তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন- পুলিশ সড়কে বসে চাঁদা গ্রহণ করায় লুটপাটকারীরা মদত পেয়েছে। এ কারণে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে শারপিন টিলাকে। এ লুটে বিএনপি’ কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করেন তিনি।