বাংলারজমিন
ইউপি চেয়ারম্যান মনছুরের উত্থান-পতনের গল্প
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক ইউপি চেয়ারম্যানের উত্থানের কাহিনী যেন আরব্য রজনীর গল্পকেও হার মানায়। এক সময়ের প্রবাসী দেশে এসে বনে যান প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা। বিপুল অর্থ ব্যয় করে বাগিয়ে নিয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কৃষক লীগের সদস্য পদ। ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও কেন্দ্রে হামলা করে হয়েছেন উপজেলার ২ নম্বর ধলই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। বিশাল সিন্ডিকেট করে করোনাকালীন সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ অসহায়দের মাঝে বিতরণের নামে নিজে সেজেছেন মানবিক নেতা। পরে হয়ে ওঠেন স্বঘোষিত মানবিক চেয়ারম্যান। নিজের পক্ষে সংবাদ প্রকাশের জন্য কিছু ইউটিউবার ও নামসর্বস্ব পত্রিকার সাংবাদিককেও নিযুক্ত করেছেন। তাদের কাজই হলো মনছুর চেয়ারম্যানের পক্ষে প্রচার চালানো। এদিকে ২৪ এর ১০ ফেব্রুয়ারি বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিনকে অপমান করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগে মানবজমিন পত্রিকায় ‘মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তোপের মুখে চেয়ারম্যান’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ওই মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে সমঝোতার কাগজ করেন ইউএনও কার্যালয়ে। ‘মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করে ক্ষমা চাইলো সেই চেয়ারম্যান’ শিরোনামে মানবজমিন পত্রিকায় আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, হত্যাসহ হাটহাজারী ও রাউজান থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে বিতর্কিত ইউপি চেয়ারম্যান আবুল মনছুরের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তার এড়াতে ধলই এলাকায় পাহারায় রেখেছেন তার বিশাল বাহিনী। পুলিশ বা যৌথবাহিনী তার এলাকায় পৌঁছালেই আগাম জেনে সটকে পড়েন তিনি। গত ৫ই ফেব্রুয়ারি জেলা ডিবি পুলিশ ও হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের সময় বাধার মুখে পড়েন পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে চেয়ারম্যান বাহিনীর সংঘর্ষ হলে পুলিশসহ সাতজন আহত হয়। পতিত স্বৈরশাসকের ক্যাডার আবুল মনছুরকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পথে তার বাহিনীরা পুলিশের মাইক্রোবাসটি ঘিরে ধরে তাকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইটপাটকেল ছুড়ে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং মনছুরকে নিয়ে থানায় পৌঁছায়। ওই সময় মনছুরের ক্যাডাররা হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে সেনাবাহিনী ও র?্যাব সদস্যরা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে স্থানীয়রা জানান। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সান্তু বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে দায়ের হওয়া পাঁচটি মামলার আসামি আবুল মনছুর। তাকে গ্রেপ্তার করে মাইক্রোবাসে তোলার সময় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দলের ওপর হামলা করে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে সমর্থকরা। তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী ও রাউজান থানায় মামলা রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা প্রদান, হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুরের অপরাধে জেলা গোয়েন্দা শাখার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ আবুল সেলিম রেজা বাদী হয়ে ধলই ইউপি’র গ্রেপ্তারকৃত চেয়ারম্যান আবুল মনছুরকে ১ নম্বর আসামি করে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১১ই ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) আদালতে আসামি মনছুরের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে এই মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।