বাংলারজমিন
ফেনী সরকারি কলেজের কোটি টাকার সম্পত্তি বেদখলে
ফেনী প্রতিনিধি
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার
ফেনী সরকারি কলেজের কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করে রেখেছে একটি চক্র। বেআইনিভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে ওই জায়গা থেকে লাখ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করছে চক্রটি। কলেজ কর্তৃপক্ষ বারবার চেষ্টা করেও ওই জায়গা পুনরুদ্ধার করতে পারছে না। যুগ যুগ ধরে বেহাত হওয়া এসব জায়গা উদ্ধারে এবার মাঠে নেমেছেন বর্তমান অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট ভূমি কমিটিতে থাকা শিক্ষকরা। গতকাল দুপুরে ফেনী সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রধান ফটকের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক মুহাইমিন তাজিম, ফেনী পৌরসভার ছাত্র প্রতিনিধি সোহরাব হোসেনসহ কলেজ ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ। কলেজ সূত্র জানায়, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘদিন ধরে জায়গা দখল করে ভুয়া কাগজ তৈরি করে বিভিন্ন সময় বেচাকেনার নামে হাতবদল করে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু নেতাদের যোগসাজশে ওই চক্রটি ইতিপূর্বে কলেজের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। তবে দখলদার ও কিছু নেতারা বিরোধে জড়ানোয় সেটি সেই সময়ে বাস্তবায়ন হয়নি।
জানা যায়, ৫ই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর কলেজের ওই জায়গায় স্থানীয় একটি চক্র ফের ইমরাত নির্মাণের কাজ শুরু করে। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষের নজরে এলে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শহরের বারাহিপুর এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়া ও ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর এলাকার বাসিন্দা মনির আহাম্মদের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। আদালত গত ২রা ফেব্রুয়ারি স্থিতাবস্থার আদেশ দিয়ে সরজমিন তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দিতে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেন। সরজমিন দেখা গেছে, ফেনী জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটকের পাশে কালো প্লাস্টিক টাঙিয়ে পেছনে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটের গাঁথুনি দিয়ে দোকানঘর। তার পাশে কয়েকজন শ্রমিক নির্মাণকাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। শ্রমিকরা বলেন, দোকানঘর নির্মাণ করছেন স্থানীয় সৈয়দনগর এলাকার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন। সাহাব উদ্দিন জানান, কাগজপত্রের ভিত্তিতে দীর্ঘদিন জায়গাটি তার দখলে রয়েছে। ওই সূত্রে সেখানে দোকান পুনঃনির্মাণের কাজ করছেন।
কলেজ সূত্র জানায়, কলেজের ভূমি রক্ষায় রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নুরুল আজিম ভূঞার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। সম্পদের মালিকানার যাবতীয় কাগজপত্র কলেজের পক্ষে থাকলেও দুষ্টচক্র ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করে দখলের পাঁয়তারা করছে। গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রশাসনের সহযোগিতায় বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ এনামুল হক খোন্দকার বেহাত হওয়া জায়গা উদ্ধারে মাঠে নেমেছে। কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ এনামুল হক খোন্দকার জানান, ফেনী জেনারেল হাসপাতাল মোড়ের বিশাল অংশে কলেজের সম্পত্তি রয়েছে। একটি চক্র জায়গা দখল করে ইমারত নির্মাণের কাজ করায় ইতিমধ্যে দু’বার তাদেরকে বাধা দেয়া হয়েছে। তারপরও জোরপূর্বক দখল করে তারা নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছে। আইনি প্রক্রিয়ায় শিগগিরই কলেজের ১৬৪১ শতক জায়গা বুঝে নেয়া হবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের সহযোগিতা প্রত্যশা করেন তিনি।
সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজীব তালুকদার জানান, কলেজের জায়গা বেদখল ও নির্মাণকাজ বন্ধে স্থিতাবস্থা আদেশের বিষয়টি অবগত হয়েছি। দ্রুত সময়ে সরজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
ফেনী মডেল থানার ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরা জানান, আদালতের আদেশের কপি পুলিশের হাতে এসে পৌঁছেনি। বেদখল ও ইমারত নির্মাণের বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষও কিছু জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।