খেলা
ক্রিকেটাররা তাহলে ৩৫০ রান করা শিখবে কোথায়?
সৌরভ কুমার দাস
২৪ মার্চ ২০২৫, সোমবার
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এখন এগিয়েছে অনেকখানি। ওয়ানডে টি-টোয়েন্টি থেকে টেস্ট- সবখানেই এখন বড় রানের খেলা হচ্ছে। বাংলাদেশ দল এই আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে পিছিয়ে পড়ছে অনেক জায়গাতেই। ওয়ানডেতে যেখানে এখন সব দলের লক্ষ্য থাকে অন্তত ৩৫০ রানের সেখানে বাংলাদেশ থেমে যায় ২৫০ থেকে ২৬০ রানের মধ্যে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত কয়েকদিন আগে বলছিলেন, ‘এখন নিয়মিত ৩৫০ রান তোলা হয়। আমরা এখনো ২৫০-২৭০ রান গড় স্কোর ধরে রাখছি, যা বদলাতে হবে। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩৫০ রান তোলার জন্য ক্রিকেটারদের অনুশীলনের সবচেয়ে বড় যে মঞ্চ, ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ- সেখানেই তো চলছে রান খরা! গেলো চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ দুটি ম্যাচ খেলতে পেরেছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। ভারতের বিপক্ষে ২২৮ ও পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩৬ রান করে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। দুটি ম্যাচেই প্রতিপক্ষ সহজে জয় পায়। একই টুর্নামেন্টে ৩৫১ রান করেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিততে পারেনি ইংল্যান্ড। ৩২৫ রান করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৮ রানে জয় পায় আফগানিস্তান। বিশ্ব যেখানে ৩৫০ রানে পৌঁছে গেছে সেখানে বাংলাদেশ আটকে যায় ২৫০ রানে! প্রতিপক্ষকে বড় রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া বা বড় রান তাড়া করা দুটোর কোনোটাই পারছে না বাংলাদেশ।
এর আগে ২০২৩ বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে একবারই ৩০০ পার করে বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩০৬ রান করেছিল টাইগাররা, সেটা আবার অজিরা তাড়া করে ৫.২ ওভার বাকি রেখে। ভারতের বিপক্ষে ২৫৬ আর পাকিস্তানের বিপক্ষে করেছিল ২০৪ রান! পাকিস্তান তাড়া করেছিল ৩২ ওভারে আর ভারত ৪১ ওভারে! রান তাড়ায়ও একই অবস্থা, দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৮২ রান তাড়ায় থামে ২৩৩ রানে। নেদারল্যান্ডসের দেওয়া ২২৯ রান তাড়া করে ১০০ রানে হারে সাকিব-শান্তরা।
এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই বড় রান করা ও বড় লক্ষ্য তাড়া করা শেখার জায়গা কোনটা...নিশ্চয়ই ঘরোয়া ক্রিকেট। আর সেখানে বাংলাদেশের ওয়ানডে ফরম্যাটের শীর্ষ লীগ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ (ডিপিএল)। এই টুর্নামেন্টেই বড় রান করা ও সেটা তাড়া করা শেখার কথা ক্রিকেটারদের। অথচ সেখানেই বড় রানের দেখা মেলে না নিয়মিত। সেই আগের মতো ২৫০ রানও চেজ হয় শেষ বলে আবার তার কম রান করেও জয় পায় কোনো কোনো দল।
এবারের লীগে এখন পর্যন্ত হয়েছে সাত রাউন্ড। যেখানে ৪২ ম্যাচের মধ্যে ৪০টি মাঠে গড়িয়েছে আর দুটি বৃষ্টি ও আলোকস্বল্পতায় পরিত্যক্ত হয়। এর মধ্যে ৩০০ বা তার বেশি রান হয়েছে মাত্র ৮ ইনিংসে। সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়া ৪২২ রান করে প্রাইম ব্যাংক। এক ম্যাচেও ৩০০ বা তার বেশি রান তাড়া করে জেতেনি কোনো দল। ২৫০ থেকে ২৯৯ এর মধ্যে রান হয়েছে ২১ ইনিংসে, যার বেশিরভারই ২৬০-২৭০। আড়াইশ বা তার কম রান হয়েছে ২৫ ইনিংসে। আর সবচেয়ে বেশি ২৬ ইনিংসে ২০০ এরও কম রান করেছে দলগুলো। এর মধ্যে ৪ ইনিংসে তো ১০০ রানও করতে পারেনি দলগুলো।
তাহলে এবারের লীগের উইকেট ভালো হচ্ছে না নাকি ক্রিকেটাররা খেলতে পারছেন না! শীর্ষ ক্লাবের এক ক্রিকেটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক মানবজমিনকে বলেন, ‘উইকেট আসলে রেগুলার ভালো হচ্ছে না, মিক্সড বলতে পারেন। মিরপুরে ২-১টা বাদে কোনো ম্যাচেই উইকেট ভালো ছিলো না। বিকেএসপিতে ৪ নম্বর মাঠেও উইকেট নিয়মিত ভালো হচ্ছে না। শুধু ৩ নম্বর মাঠে তুলনামূলক উইকেট ভালো হচ্ছে।’
তাহলে বড় রান তাড়া করা শিখবে কোথায় ক্রিকেটাররা, এমন প্রশ্নে ওই উইকেটরক্ষক ব্যাটার বলেন, ‘বলেছিল (গ্রাউন্ডস কমিটি) যে এবার উইকেট ভালো হবে। বিপিএলেও ভালো হয়েছিল উইকেট ক্রিকেটাররা রান করেছে। কিন্তু এখানে (ডিপিএল) ভালো হচ্ছে না কেনো সেটা তো আমরা বলতে পারবো না। তবে এখানে উইকেট ভালো না হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও আমরা বড় রান করতে পারবো না।’
শুধু রান হচ্ছে নাএমন নয়, ক্রিকেটারদের স্ট্রাইক রেটও কম। শীর্ষ ১০ রান সংগ্রাহকের মধ্যে শুধু দুজনের স্ট্রাইক রেট ১০০ এর বেশি, নাঈম শেখ (১২০) ও তামিম ইকবাল (১০২)। ৪৫৯ রান করা নাঈমের রান সবচেয়ে বেশি আর ৪ নম্বরে থাকা তামিম ইকবালের সংগ্রহ ৩৬৮ রান। দুইয়ে থাকা নুরুল হাসান সোহানের স্ট্রাইক রেট ৯৭ আর তিনে থাকা বিজয়ের ৯৯। মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবসরের পর মিডল অর্ডার ফাঁকা হচ্ছে জাতীয় দলে। সেখানে বিবেচনায় আছেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনও। মোহামেডানের হয়ে খেলা এই ক্রিকেটারের এবার লীগে স্ট্রাইক রেট ৬৬! তাওহীদ হৃদয়ের ১০০, পারভেজ হোসেন ইমনের ৯০।
পাঠকের মতামত
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ছয় মাসের জন্য আইনাঘরে রেখে কোচ মেজর জিয়াউল হককে দিয়ে কোচিং করালেই ৪০০/৫০০ করে রান বের হবে। অন্য কোনো উপায় নাই।
কখনই শিখবে না।
চেষ্টা করেন - এখন তো আপার দোষ দিলে চলবে না রে ভাই