প্রথম পাতা
আজ উদ্বোধন, বিনিয়োগ সম্মেলনে বড় লক্ষ্য
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৭ এপ্রিল ২০২৫, সোমবারবাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে আজ সোমবার থেকে চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ শুরু হচ্ছে। সম্মেলনে আয়োজক বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ অর্ধশতাধিক দেশের ৬ শতাধিক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা অংশ নেবেন। আগামী ৯ই এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিনিয়োগ সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন। সম্মেলন অনুষ্ঠানটি ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারিত হবে। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ইন্টারভিউ নিতে মিডিয়া কর্নার থাকবে।
গতকাল রাজধানীর বেইলী রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সম্মেলনে কী কী ইভেন্ট থাকছে তা তুলে ধরেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ এ নাসার সঙ্গে চুক্তি হবে। সম্মেলনে দেশি-বিদেশি পাঁচজন বিনিয়োগকারীকে পুরস্কার দেয়া হবে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী শীর্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের (চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আগত) সঙ্গে পৃথক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ৯ই এপ্রিল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গত বছরের ৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও শিল্প কারখানায় সংঘাতের পর বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। এই পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য একটি সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে বৈশ্বিক বিনিয়োগের দুয়ার খুলতে ৭ থেকে ১০ই এপ্রিল চার দিনব্যাপী রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিডা আয়োজনে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হবে।
সামিটের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরা, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংস্কার প্রদর্শন এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সংযোগ তৈরি করা। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরাও এ সামিটের লক্ষ্য।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দিতে ইচ্ছুক একটা বড় অংশ যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন, আমরা এবার তাদের স্থান দিতে পারিনি। সেজন্য আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। আমরা এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছি বিদেশি যারা দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন এখানে এবং অনিবাসী বাংলাদেশি (এনআরবি) যারা। সেটা করতে গিয়ে বাংলাদেশি অনেককেই আমরা জায়গা দিতে পারিনি। মূল অনুষ্ঠানে আমরা বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং স্থানীয় বিনিয়োগকারীর কথা শুনবো। অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বক্তৃতা করবেন। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে একটা বড় বিনিয়োগ আসে আমাদের এখানে। তারা সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা করেন, সেটা আমরা শুনবো। প্রধান অতিথির উপস্থিতিতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পাঁচটি পুরস্কার দেয়া হবে। একজন স্থানীয় বিনিয়োগকারী, একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী, পরিবেশগত, সামাজিক এবং শাসন (ইএসজি) ক্ষেত্রে আমরা একটি সংস্থাকে সম্মাননা দেবো, একটি পুরস্কার দেয়া হবে উদ্ভাবনীর জন্য। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগের সঙ্গে দীর্ঘ অনেক বছর ধরে অনেক বিদেশি নাগরিক আছেন- এরকম একজনকে আমরা সম্মানিত নাগরিকত্বের অফার করবো। তিনি আরও বলেন, সম্মেলনে অনেক সমঝোতা স্মারক সই হবে। বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে। আইএলও’র সঙ্গে শ্রম বিষয়ে একটা দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করার চিন্তা করছি। আমরা নাসা’র সঙ্গে একটি চুক্তি সই করার কথা চিন্তা করছি। বেসামরিক মহাকাশ অনুসন্ধান নিয়ে এই চুক্তি সই হতে পারে। চুক্তি সই হওয়ার পর আমরা এর বিস্তারিত জানাতে পারবো।
বিনিয়োগ সম্মেলনে যা থাকছে: সম্মেলনের বিস্তারিত তুলে ধরে চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, প্রথম দিন দুটি ট্র্যাকে অনুষ্ঠানটি হবে। প্রথম ট্র্যাকে ৬০ জনের বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীকে নিয়ে একটি স্পেশাল ফ্লাইট চট্টগ্রাম যাবে। সেখান থেকে কোরিয়ান ইপিজেড ও মিরসরাইতে স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শন শেষে রাতে ফিরে আসবেন তারা।
বিডার নির্বাহী পরিচালক আরও জানান, যারা যাচ্ছেন তারা হলেন সেই সব উদ্যোক্তা যারা মনে করছেন তাদের সেখানে একটি ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে হবে। তাদের জায়গা জমি লাগবে। তাদের জন্য আমরা কী ধরনের সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করতে পারি তা তারা সরজমিন দেখবেন।
অন্যদিকে সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্টার্টআপ কানেক্ট নামে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচি রয়েছে। সেখানে যেসব আরলি স্টেজ স্টার্টআপ এবং ভেঞ্চার বিনিয়োগকারী আসছেন তাদের মধ্যে ম্যাচ মেকিং ইভেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও প্যানেল হবে। সারাদিন স্টার্টআপ ইভেন্টকে ফোকাস করা হবে।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ৮ই এপ্রিল প্রথম বেলায় বিনিয়োগকারীদের নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে যেখানে জাপানি ইকোনমিক জোন রয়েছে সেখানে সরজমিন পরিদর্শন করবেন। তারা সেখানকার ফ্যাক্টরির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে কী ধরনের কর্মকাণ্ড হচ্ছে তা বুঝে তাদের বিনিয়োগের জন্য কতোটুকু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা দেখবেন। দ্বিতীয় ধাপে বিশ্বব্যাংক ও আইএলও-এর সঙ্গে কিছু অ্যাংগেজমেন্ট আছে। তাদের এফডিআই রিলেটেড কিছু ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায় সে ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ৯ই এপ্রিল বুধবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটুকু ছাড়া সারাদিনই একাধিক (৩/৪টা) প্যারালাল অনুষ্ঠান চলবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিছু বিনিয়োগকারীকে পুরস্কৃত করা হবে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন। একইসঙ্গে কিছু সংখ্যক বিদেশি বিনিয়োগকারী বক্তব্য দেবেন। সেখান থেকে আমরা বোঝার চেষ্টা করবো আর কী করলে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য বেটার ডেস্টিনেশন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। পরবর্তীতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ইয়ুথ এন্টারপ্রেনারশিপ মেলার আয়োজন থাকবে। উপদেষ্টা সেখানে আরলি স্টেজ কোম্পানির সঙ্গে কথা বলবেন। দ্বিতীয় ধাপে রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে কথা হবে। বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। তারা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।