প্রথম পাতা
শুল্ক আরোপ
ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে চিঠি দেবে বাংলাদেশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৭ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রেক্ষিতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দুটি চিঠি পাঠানো হবে। একটি চিঠি দেয়া হবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে। আরেকটি চিঠি দেয়া হবে বাণিজ্য উপদেষ্টার পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআরকে। গতকাল সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের
সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বৈঠকে চারজন উপদেষ্টা, একজন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি, একজন স্পেশাল অ্যাম্বাসেডর, দশজনের মতো সচিব এবং বড় ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে চারজন প্রতিনিধি ছিলেন।
প্রেস সচিব বলেন, প্রতিনিয়ত তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি) সঙ্গে আমরা কথা বলছি। ঢাকায় তাদের দূতাবাসের কর্মকর্তা ছাড়াও ইউএসটিআরের কর্মকর্তারা রয়েছেন। আমাদের যেটা ডিসিশন, আমরা দুটি চিঠি দেবো। দুটিই আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যাবে। একটা চিঠি যাবে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। আরেকটা চিঠি যাবে আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টার তরফ থেকে ইউএসটিআরের কাছে।
চিঠিতে কী থাকবে- সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, চিঠিতে কী কী থাকবে, কী ধরনের ভাষা ব্যবহার করা হবে সেটা নিয়েই আজ আলোচনা হয়েছে। চারজন উপদেষ্টা ছিলেন, একজন হাইলি রিপ্রেজেন্টার ছিলেন, একজন স্পেশাল অ্যাম্বাসেডর, আমাদের প্রায় দশজনের মতো সেক্রেটারি ছিলেন, যারা বড় ব্যবসায়ী তাদের মধ্য থেকে চারজন প্রতিনিধি ছিলেন। সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুটি চিঠি যাবে।
তিনি আরও বলেন, চিঠিতে যাই থাকুক সেটা আমাদের বিজনেসবান্ধব হবে। আমাদের বাংলাদেশের বিজনেসের স্বার্থটা দেখা হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে কম্পিটিটিভ যেসব দেশ আছে তাদের চেয়ে আমরা আরও বিজনেসবান্ধব হবো, এই চিঠিটা যাবে। আরও বেশি বিজনেসবান্ধব হবে, যাতে ইউএসএ এবং আমাদের জন্য উইন উইন সিচুয়েশন হয় এবং আমাদের জন্য মার্কেট এক্সেসটা আরও বাড়ে। প্রেস সচিব বলেন, ইউএসএ পৃথিবীর লার্জেস্ট মার্কেট, সেখানে আমাদের আরও অনেক বিলিয়ন ডলার রপ্তানির সুযোগ আছে।
প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেন, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিসে কথা বলেছেন। সেখান থেকে যে সংকেত পাওয়া গেছে, তাতে বাংলাদেশের চিন্তাধারার সঙ্গে তাদের সাজুয্য রয়েছে। আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে করণীয়গুলো চূড়ান্ত করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, শুল্ক আরোপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিয়েছে, চীনসহ বড় বড় অর্থনৈতিক শক্তির দেশগুলোও পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাতে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটা জানা নেই।
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক যেন রক্ষা পায়, সেই চেষ্টা করা হবে জানিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকের মজুরি সর্বনিম্ন্ন জায়গায় আছে। এর থেকে কমানো যাবে না। শ্রমিকের দিক থেকে খরচ না কমিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপরে জোর দেয়া হবে। একইসঙ্গে অশুল্ক বাধা দূর ও বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।’
ব্যবসায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ককর আরোপের পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তাতে ব্যবসায়ী সমপ্রদায়ে স্বস্তি এসেছে। বোঝা যাচ্ছে, সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে বাংলাদেশ আর কী কী জিনিস কিনতে পারে সেই বিষয়ে নজর দেয়ার তাগিদ দেন তিনি। একইসঙ্গে বাংলাদেশের জন্য পোশাক খাতের বাইরে নতুন অনেক দুনিয়া আছে উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী বলেন, সেসব খুঁজে বের করতে হবে।
এদিকে ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আরোপিত নতুন শুল্কারোপে অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়বে, তা সামাল দেয়া কঠিন হবে না। তিনি বলেন, ‘সরকার শুল্কের বিষয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে।
অর্থনীতি স্থিতিশীল, আইএমএফের সন্তোষ প্রকাশ: অর্থ উপদেষ্টা
এদিকে বাংলাদেশ সচিবালয়ে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের সামপ্রতিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। আইএমএফ প্রতিনিধিদল মনে করছে যে, দেশের অর্থনীতি বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে ও সঠিক পথেই এগোচ্ছে। ড. সালেহউদ্দিন আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ শিগগিরই আইএমএফ-এর ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে পাবে। উল্লেখ্য, মোট ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় ইতিমধ্যে তিনটি কিস্তি ছাড় হয়েছে। আইএমএফ দল কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার ও ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।