ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে বিএনপি’র র‌্যালিতে নেতা কর্মীদের ঢল

স্টাফ রিপোর্টার
১১ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতার প্রতিবাদে এবং নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে রাজধানীতে বিশাল র‌্যালি করেছে বিএনপি। একইসঙ্গে সারা দেশের বিভাগীয় শহরেও এই কর্মসূচি পালিত হয়। রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত প্রতিবাদ ও সংহতি র‌্যালিতে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। র‌্যালিতে ফিলিস্তিন নাগরিকের রক্তাক্ত প্রতীকী লাশ নিয়ে ইসরাইলি বাহিনীর নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরা হয়। র‌্যালিপূর্ব বক্তব্যে ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নেতারা। তারা বলেন, আমরা বিশ্বে সব মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই, ঐক্যবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর। এ ছাড়া ইসরাইলি পণ্য বয়কটের জন্য আহ্বান জানান নেতারা। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র উদ্যোগে র‌্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনে থেকে এই র‌্যালি শুরু হয়। র‌্যালিটি কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মগবাজার, বাংলামোটর হয়ে সোনারগাঁও হোটেলের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। নয়াপল্টনে র‌্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে আমরা ভাবতে পারি, এটা ফিলিস্তিনি মুসলমানদের প্রতি অত্যাচার করা হচ্ছে, নিধন করার চক্রান্ত হচ্ছে। আসলে বিষয়টা তা নয়, ওরা (ইসরাইল) সারা বিশ্বের মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়ছে। মুসলিম বিশ্বের যে সকল মোড়ল দেশ নিজেদের রাজত্ব বাঁচানোর জন্য এবং নিজেরা বেঁচে থাকার জন্য আজকে নেতৃত্ব দিচ্ছে না- তাদের প্রতি আল্লাহ’র অভিশাপ নেমে আসবে। মুসলিম বিশ্বকে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ করতাম, যদি মুসলিম বিশ্ব আজকে কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হতো তাহলে ইসরাইলিরা এই অত্যাচার করতে পারতো না। সারা বিশ্বের মুসলিমরা আজকে আমরা খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গেছি। তিনি বলেন, যদি জাতিসংঘ কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, যারা এই অপকর্মের সহযোগী তাদের বিরুদ্ধে আমরা যদি ব্যবস্থা না নেই তাহলে ইসরাইলের এই অত্যাচার চলতেই থাকবে। একে একে তারা মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ধ্বংস করে দেবে। শুধু ইসরাইলে নয়, আমাদের প্রতিবেশী দেশেও (ভারত) মুলসমানদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। আমরা সেটাও প্রতিবাদ করি না। আমার রাষ্ট্র প্রতিবাদ করে না, আমরাও প্রতিবাদ করি না। আমরা এটার প্রতিবাদ করতে চাই। বিশ্বের যেখানেই মুসলমানদের ওপর অত্যাচার হবে, ইনশাআল্লাহ আমরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবো, প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করবো।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমার দেশে এখন একটা সরকার আছে। সরকারের মনোভাব কি ফিলিস্তিনি সম্পর্কে, আমরা কেন কোনো আওয়াজ এখনো পেলাম না। সারাবিশ্ব আজকে, মুসলিম বিশ্ব বিভক্তের কারণে ইসরাইলের অত্যাচারটা ফিলিস্তিনিদের ওপর বেশি মাত্রায় নৃশংসভাবে করছে। এই মানবতাবিরোধী অপরাধে জাতিসংঘও অসহায়। তারও কোনো কার্যকর ভূমিকা নাই। ইন্দো-মার্কিন যৌথভাবে এই কাজটা করছে। ইন্দো মানে হলো প্রতিবেশী ভারত। আর সারা বিশ্ব কেন ইসরাইলিদের এ ধরনের মানবতা ও নৃশংস কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে না কেন? আমরা তাদের স্বাধীনতার পক্ষে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে। আমরা এই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে।   

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সমগ্র বিশ্ব প্রতিবাদ জানায়, কিন্তু ইসরাইলকে প্রতিরোধ করার উদ্যোগ নেয় না। আমি আজকে এই সভা থেকে দাবি করছি, নৃশংস অত্যাচারী ইসরাইল সরকার এবং তার বাহিনীগুলোকে প্রতিহত করার ব্যবস্থা নেয়া হোক। নিরাপদ নারী, পুরুষ ও শিশুদের হত্যার এই নৃশংসতা অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। আমরা বিশ্বে সব মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই, ঐক্যবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো দরকার।


নজরুল ইসলাম খান বলেন, অব্যাহতভাবে একটা জাতিসত্ত্বাকে নিঃশেষ করার জন্য এই খুন ও নৃশংসতা চালিয়ে যাওয়া হবে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা দাবি করবো, ইসরাইলের এই মানবতাবিরোধী অপরাধ দমন করার জন্য যা কিছু করার প্রয়োজন, তা করা উচিত। 

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সারা বিশ্বের মুসলমানরা এবং মুসলমান নেতৃবৃন্দ ও ইসলামী বিশ্বের ভূমিকা দেখেছি প্রশ্নবিদ্ধ। যদিও ৬০-এর দশকের শেষের দিকে একটি যুদ্ধ হয়। তারপর কয়েকবার প্রতিবাদ হয়। এরপর থেকেই মুসলিম বিশ্বের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা সারা বিশ্বের মুসলমানদের সংহতি ও সমর্থন প্রকাশ করতে দেখি, কিন্তু যারা মুসলিম বিশ্বের মোড়ল তারা সক্রিয়ভাবে কখনো ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আজকে যেহেতু ইসরাইলের বিপক্ষে আপনাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ, মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দেয়ার দাবি আপনারা করতে পারেন না। ইন্দো-মার্কিন ষড়যন্ত্রের কারণে এই ফিলিস্তিনে গণহত্যাসহ নির্যাতন-নিপীড়নের স্বীকার হচ্ছে। জাতিসংঘের রেজুলেশনের তোয়াক্কা ইসরাইলরা করে না, জাতিসংঘের কোনো সিদ্ধান্তকে তারা মেনে নেয় নাই। যদিও জাতিসংঘে বিভিন্ন রকমের সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে নেয়া হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি পরাশক্তি যার বিরুদ্ধে, সেগুলো কার্যকর করতে দেয়নি। আমরা তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।    

কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বেলা ২টা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, ফিলিস্তিনি পতাকা এবং দলীয় পতাকা সহকারে ব্যানার ও ফেস্টুনসহ খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। মিছিল থেকে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু’র সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমিনুল হক। এ ছাড়া কর্মসূচিতে বিএনপি’র এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকসহ দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশের শুরুতে গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতার নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া এবং আহতদের আশু সুস্থতায় বিশেষ দোয়া করা হয়।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status