নির্বাচিত কলাম
সা ম্প্র তি ক প্রসঙ্গ
বিনিয়োগ সম্মেলনে কী পেলো বাংলাদেশ?
এম এম মাসুদ
১২ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার
ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে একটা অন্যরকম পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫’। বলা যায়, বিদেশি বিনিয়োগকারীর সামনে বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে তুলে ধরতে এবারের আয়োজন ছিল অন্য বছরের চেয়ে ব্যতিক্রম। বিশেষ করে পতিত আওয়ামী লীগের পতনের মাত্র ৮ মাসের মাথায় একটি সফল আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন সম্পন্ন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা ছিল, তা থেকে বিনিয়োগকারীকে নতুন ধারণা দিতে আয়োজকদের প্রাণান্ত চেষ্টা ছিল লক্ষণীয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ইউএইসহ রেকর্ডসংখ্যক ৪২টি দেশের বাংলাদেশ সহ ছয়শ’র অধিক খ্যাতনামা বিনিয়োগকারী এতে অংশ নেন।
চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জানান, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সনদপত্র পেতে ভোগান্তি, আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় এনবিআরের অসহযোগিতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও দুর্নীতি বড় বাধা। আরেকটি বড় বাধা হলো নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা। তবে বিনিয়োগকারীদের এসব সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো।
পাশাপাশি বিনিয়োগ পরিবেশের সীমাবদ্ধতা কাটাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) থেকে তুলে ধরা হয়েছে বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ। প্রথা ভেঙে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ বিষয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা দিতে সফররত বিনিয়োগকারী বা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে সরজমিন দেশের তিন প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে নিয়ে যায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বকে বদলে দিতে বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে আসার জন্য বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান। সম্মেলনে অংশ নিয়ে নামি-দামি বিদেশি কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানান, বদলে গেছে বাংলাদেশ; পরিণত হয়েছে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ গন্তব্য। পেয়েছেন নতুন বাংলাদেশের বার্তা। বাংলাদেশের ভোক্তা বাজার ধরতে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস, ফার্মাসিউটিক্যালস ও লাইন ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী তারা।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মতে, বিনিয়োগ নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে নেয়া বিভিন্ন সংস্কার অব্যাহত থাকলে আশা করা যায়, দেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে মিলেছে বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি। দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তিও করছে বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া এই বিনিয়োগ সম্মেলনে নতুন নতুন কর্মসংস্থানেরও পথ খুলছে।
অংশগ্রহণকারী ১০ বড় কোম্পানি: চীনের ই-কমার্স জায়ান্ট, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি আলিবাবা এবারের সম্মেলনে যোগ দেয়। লন্ডনভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রফেশনাল সার্ভিসেস ফার্ম ডেলোয়েট প্রতিনিধি এ সম্মেলনে ছিল। সম্মেলনে বিশ্বের অন্যতম বড় ইলেকট্রনিকস উৎপাদক প্রতিষ্ঠান স্যামসাং, বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে প্রভাবশালী কোম্পানি টয়োটা ট্যুসো করপোরেশন, বিশ্ব জুড়ে পেমেন্ট নেটওয়ার্ক সেবা প্রদানকারী কোম্পানি ভিসা, রাইড শেয়ারিং এবং লজিস্টিক সেক্টরে সুপরিচিত কোম্পানি উবার, চীনের সরকারি মালিকানাধীন বড় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং, চীনের শক্তি এবং অবকাঠামো নির্মাণে বিশেষায়িত কোম্পানি পাওয়ার-চায়নার প্রতিনিধিরা সম্মেলনে যোগ দেন।

শিল্পনগর পরিদর্শন: বিডা আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনে আসা প্রথমেই যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪০টি দেশের অর্ধশতাধিক বিনিয়োগকারী চট্টগ্রামের কেইপিজেড ও মিরসরাই স্পেশাল ইকোনমিক জোন (শিল্পনগর) পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিএসইজেড) পরিদর্শন করেছেন। তারা এসব অঞ্চলে বিনিয়োগকারী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে পরিবেশ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছেন। পরিদর্শনকালে, সুইডিশ কোম্পানি নীলর্নের বাংলাদেশ ইউনিট নীলর্ন বাংলাদেশ লিমিটেড সেখানে একটি কারখানা স্থাপনের জন্য বিএসইজেড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে। পরে বিভিন্ন প্যানেল আলোচনা, সেমিনার, বিটুবি ও বিটুজিতে অংশ নেন। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তারা সরাসরি আলোচনা করেন।
রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ: দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রদের নতুন দল এনসিপি’র শীর্ষ নেতারা বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।
ব্যাপক সাড়া: বিনিয়োগ সম্মেলনটি শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ও ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সম্মেলনের শেষ দিনে এসে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের মনে প্রশ্ন, বহুল আলোচিত এ বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রাপ্তি কতোটুকু? সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কতো মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে? যদিও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব-নিকাশ নিয়ে মোটেই উদ্বিগ্ন নন। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। সেটা দূর করা। বিনিয়োগ সম্মেলনের তাৎক্ষণিক প্রাপ্তিতে তিনি বিশ্বাসী নন। আগামী ১০-১৫ বছর পর এ সম্মেলনের ফলাফল পাওয়া যাবে। গত ৯ই এপ্রিল বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে চৌধুরী আশিক আগামী ১০ বছর পর বাংলাদেশ কীভাবে বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে সে সম্পর্কে একটি তথ্যপূর্ণ উপস্থাপনা বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরেন।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর: সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিশ্বখ্যাত নামি-দামি ব্র্যান্ড ইন্ডিটেক্স গ্রুপ, ডিপি ওয়ার্ল্ড, জিওডারনো ও এক্সিলারের এনার্জিসহ কোম্পানির অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছেন। এরইমধ্যে বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত বিনিয়োগকারী কোম্পানির শীর্ষ নীতি নির্ধারকরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে বিনিয়োগ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। আন্তর্জাতিক মহাযান সংস্থা নাসার সঙ্গে চুক্তির বিষয়টিও বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতে মোট চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, দ্য এন্টারপ্রেনারস গ্রুপ এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
উদ্যোক্তাদের জন্য ৪ তহবিল ঘোষণা: বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকার, জাইকা ও ইনসেপ্টার উদ্যোগে তরুণদের ব্যবসায়িক ধারণায় অর্থায়ন নিশ্চিত করতে চারটি তহবিল গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগিরই উদ্যোক্তাদের জন্য ৮০০ কোটি টাকা ও ৪০০ কোটি টাকার দু’টি তহবিল খুলবে। বাংলাদেশ সরকার ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) যৌথভাবে একটি তহবিল গঠন করছে। এ ছাড়া দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ইনসেপ্টা ১০ লাখ ডলারের একটি তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে।
চীনের বিনিয়োগ আকর্ষণে ৪,০৬৫ কোটি টাকার প্রকল্প: চট্টগ্রামের আনোয়ারায় প্রায় ৮০০ একর জমিতে জি-টু-জি ভিত্তিতে চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে ৪,০৬৫ কোটি টাকার পুনর্গঠিত বিনিয়োগ প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের বিনিয়োগ আকর্ষণে চীনা অর্থনৈতিক ও শিল্প অঞ্চলের (সিইআইজেড) অবকাঠামো দ্রুত উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
কার্যক্রম সম্প্রসারণে আগ্রহী যুক্তরাজ্য: সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অধিবেশনে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূত ডনকাস্টার ডিবিইর ব্যারোনেস উইন্টারটন বাংলাদেশকে একটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক’ ভবিষ্যতের দিকে ‘শান্তিপূর্ণ উত্তরণ’ রূপরেখায় যুক্তরাজ্যের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দু’দেশের বন্ধন পুনর্নবীকরণ এবং আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রেরণা জোরদার হয়েছে।
সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ: নবায়নযোগ্য জ্বালানি- সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। সম্মেলনে করপোরেট বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (সিপিপিএ) পাইলট প্রকল্প হিসেবে এ নিয়ে পোশাক বিপণনকারী সুইডিশ ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম (হেন্স অ্যান্ড মরিটজ) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সঙ্গে চুক্তি করেছে শিল্প গ্রুপটি।
অর্থনৈতিক সহযোগিতায় আগ্রহ প্রকাশ জার্মানির: ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দেয়া জার্মানির ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই অর্থনৈতিক সহযোগিতায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের মতে, জার্মানি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে ৯.৮১ বিলিয়ন ডলার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মন্তব্য: বিনিয়োগ সম্মেলনে কথা হয় মার্কিন কোম্পানি বাংলা ইউএস এলএলসি’র সিওও ড. মুমতাজুর রহমান দাউদের (রয়) সঙ্গে। তিনি জানান, ২৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে বাংলাদেশে হাসপাতাল ও সার কারখানা গড়ে তোলা হবে। ১৬০ কোটি ডলার মানে ১৯ হাজার ২শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগে ৩শ’ শয্যার হাসপাতাল করা হবে। যাতে থাকবে উন্নতমানের সব সেবা। আর ৬০ কোটি ডলার ব্যয়ে চট্টগ্রামে একটি সার কারখানা করা হবে জানিয়ে ড. মুমতাজুর রহমান দাউদ আরও বলেন, পরে বিনিয়োগ হবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায়।
‘টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল’ শীর্ষক একটি সেশনে মূল প্রবন্ধে কোরিয়ান ইপিজেডের প্রতিষ্ঠাতা কিহাক সুং বলেন, সঠিক কৌশল ও সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ একক দেশ হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশের অবস্থানে রয়েছে। মোট কথা, এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নেয়া বিভিন্ন দেশের কোম্পানির প্রতিনিধিরা প্রাধান্য দিয়েছেন ওষুধ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও কৃষি খাতকে। ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ পরিবেশ পেয়ে অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশের কৃষি ও জ্বালানি খাতকে বেছে নিচ্ছে নেদারল্যান্ডের আর্থিক প্রতিষ্ঠান এফএমও। প্রতিষ্ঠানটির এশিয়া অঞ্চলের কৃষি, খাদ্য ও পানি বিনিয়োগ কর্মকর্তা প্রিসেন প্রহলাদসিং বলেন, আমরা বাংলাদেশ সম্পর্কে যা জেনেছি, তাতে এখানে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত।
একনজরে বিনিয়োগ সম্মেলনের অর্জন: দুবাইভিত্তিক বৈশ্বিক লজিস্টিকস কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড বন্দর ও লজিস্টিক অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগেও তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সিমেন্ট খাতে বাংলাদেশের অন্যতম বিনিয়োগকারী হোলসিম গ্রুপ বিনিয়োগ বাড়ানোর আগ্রহ দেখিয়েছে। এ গ্রুপের এশিয়া অঞ্চলের প্রধান মার্টিন ক্লিয়েনজার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের কার্বন সংরক্ষণ প্রকল্প চালুর আগ্রহ দেখিয়েছে। স্পেনভিত্তিক পোশাক খাতের বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ইনডেটেক্সের সিইও ওস্কার গার্সিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধি দল। নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক চলতি বছরে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। টেক্সটাইল খাতে ১৫ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীনভিত্তিক হান্দা ইন্ডাস্ট্রিজ। জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে অ্যাকসেসরিজ কারখানা স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। শপআপ ১১ কোটি ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে। এ ছাড়া প্রাণ গ্রুপের সঙ্গে বিদেশি একটি কোম্পানির বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে। শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএলওর সঙ্গেও হয়েছে একটি এমওইউ। এ ছাড়া মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে বাংলাদেশের একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
আগামী মাসে চীন থেকে ২০০ জনের একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসবে। তারা বিনিয়োগ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন।
সম্মেলনে বিনিয়োগে অবদানের জন্য চার ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলো- ওয়ালটন, বিকাশ, স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস ও ফেব্রিক্স। এ ছাড়া বিশেষ ক্যাটাগরিতে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং-কে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়া হয়। গত ৭ই এপ্রিল শুরু হয় ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন’। চলে ১০ই এপ্রিল পর্যন্ত।
বিডা’র বক্তব্য: শেষ দিনে সংবাদ সম্মেলন করে বিডা’র ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের প্রস্তাব কিংবা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাদের সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগ রাখা হবে। বিনিয়োগ বিষয়ে ভবিষ্যতে তাদের প্রতিক্রিয়া নেয়া হবে। সব মিলিয়ে সম্মেলন অনেকটা সফল।
পাঠকের মতামত
Nirvasan Sara Kono golfo chal bena
এখনও পাওয়ার সময় হয় নাই। তবে ড.ইউনূস কে আজীবন খমতায় রাখার রাজাকারী খায়েস পুরনের পক্ষে বয়ান পাওয়া গেছে।