ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

বেহুদা প্যাঁচাল

সুড়ঙ্গের ওপাশে এখনো অন্ধকার

শামীমুল হক
১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার
mzamin

জামায়াতে ইসলামী আগামী রোজার আগে নির্বাচন দাবি করেছে। এক্ষেত্রে জামায়াত আর বিএনপি’র মধ্যে মাত্র দুই মাসের পার্থক্য। এ বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে শেষ করা যায়। তবে সব দলের কথার মধ্যে সংস্কার করার দাবি রয়েছে। তবে কতোটুকু সংস্কার করা হবে তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। এনসিপি চায় আগে গণপরিষদ নির্বাচন হোক। তারপর এই গণপরিষদ সংবিধান গঠন করে সরে গেলে জাতীয় নির্বাচন হবে। এমনটা করতে গেলে কতো সময়ের প্রয়োজন? আর গণপরিষদইবা লাগবে কেন? দলগুলো এক হলে একটি সনদে স্বাক্ষর করে জাতীয় নির্বাচন দিলেই হয়ে যায়। সেই নির্বাচনে যে দল ক্ষমতায় যাবে সনদের স্বাক্ষর অনুযায়ী তারা সংস্কার করতে বাধ্য।

বেশি কথায় সম্মান নষ্ট/বেশি হাসিতে অন্তর নষ্ট/বেশি আদরে সন্তান নষ্ট/বেশি চুনে পান নষ্ট/ বেশি নেতায় দেশ নষ্ট/বেশি লোভে জীবন নষ্ট/বেশি নুনে তরকারি নষ্ট/বেশি মসলায় স্বাদ নষ্ট/বেশি খাবারে পেট নষ্ট/বেশি আলোতে চোখ নষ্ট/বেশি সন্দেহে সম্পর্ক নষ্ট/বেশি কথায় দন্ত নষ্ট/ বেশি কথা বলিস না ভাই/বেশি কথা ভালো নয়-বাউল কবির এমন গান ছোটবেলায় অনেক শুনেছি। কিন্তু এ পর্যন্তই শেষ। মানুষ হিসেবে আমরা কতোটুকু প্রয়োগ করছি? নাকি উল্টো পথে হাঁটছি? সাম্প্রতিক সময়ে এমন অনেক বেশি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশ। বেশি বাড় বাড়ায় শেখ হাসিনাকে সিংহাসন ছেড়ে পালাতে হয়েছে। বেশি কথা বলায় এখন কাঠগড়ায় দুই হাজার চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সমন্বয়করা। বেশি বেশি নির্বাচন নির্বাচন করায় বিএনপিও প্রশ্নের মুখে। শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি বেশি আনুগত্য দেখানোয় জাতীয় পার্টি এখন রেললাইনের বাইরে। ৫ই আগস্টের পর জামায়াতের অতিরিক্ত রাজনীতি নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন। আবার নির্বাচনী রোডম্যাপ না দেয়া এবং বেশি বেশি সংস্কার করে আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারও। 

এক/এগোরোর সময় আলোচিত একটি কথা ছিল- সুড়ঙ্গের ওপাশে আলো দেখা যাবে কবে? রাজনীতি এখন সুড়ঙ্গের এপাশে। ওপাশে অন্ধকার। কিন্তু ওপাশে আলো দেখতে উদগ্রীব রাজনীতিকরা। সে লক্ষণ মোটেও এখন নেই। এ অবস্থায় দলগুলোও বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিএনপি ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করেছে। এরমধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করার কথা বলছেন তারা। কিন্তু বিএনপি’র সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। সংক্ষেপে যাকে এনসিপি বলা হয়। চব্বিশের আন্দোলনের ছাত্র নেতাদের গঠিত এনসিপি বলছে-  মৌলিক সংস্কার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। তাদের কথা সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের দিকে গেলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।  শুধু তাই নয়, সে নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি অংশগ্রহণ করবে কি-না, সেটাও বিবেচনাধীন থাকবে বলে মন্তব্য  করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। নাহিদ ইসলাম আরও বলেছেন, মাঠ প্রশাসন আমাদের কাছে মনে হয়েছে নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চলছে, সেই জায়গায় প্রশাসন নিশ্চুপ। প্রশাসন বিএনপি’র পক্ষে রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে যে চাঁদাবাজি চলছে সেখানেও প্রশাসন নিশ্চুপ। এই ধরনের প্রশাসন থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন, আমলাতন্ত্র এবং পুলিশ আমাদের ঠিক করতে হবে। 
চমৎকার কথা বলেছেন, নাহিদ ইসলাম। ষোল বছরের আওয়ামী প্রশাসন আট মাসে বিএনপি’র হয়ে গেল? এটা কীভাবে সম্ভব? নাহিদ সরকারের উপদেষ্টা থাকার সময় কি আওয়ামী প্রশাসনের সবাইকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছেন? না! এমন ঘটনা তো ঘটেনি। তাহলে কোন যুক্তিতে তিনি বলছেন, প্রশাসন বিএনপি’র পক্ষে কাজ করছে। অনেকে তো বলছেন, এই প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন হলে আর আওয়ামী লীগ নির্বিঘ্নে নির্বাচন করতে পারলে আওয়ামী লীগের পাল্লাই ভারী থাকবে। সে যাই হোক। ধরে নিলাম নাহিদের এটি রাজনৈতিক বক্তব্য। কিন্তু নির্বাচনে না যাওয়ার কথা কিসের ঈঙ্গিত দিলেন তিনি? নাহিদ আরও বলেছেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য নিরপেক্ষ প্রশাসন, আমলাতন্ত্র এবং পুলিশ ঠিক করতে হবে। নাহিদ ক্ষমতায় থাকতে তা করতে পারলেন না কেন? তাকে কি কেউ বাধা দিয়েছে? এখনো তো সরকারে ছাত্র প্রতিনিধি রয়েছে। তারাই বা এটা করছেন না কেন? এ প্রশ্ন কিন্তু এসে যায়। আর প্রশাসন বিএনপি’র পক্ষে বলে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন? 

ওদিকে সর্বশেষ নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে হতাশা প্রকাশ করেছে বিএনপি। শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার এবং সংস্কার কার্যক্রম দৃশ্যমান করে সংসদ নির্বাচন দিতে চায় সরকার। সরকারের তরফে বলা হয়েছে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করা হবে। বৈঠকে বিএনপি জানিয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এরপরে নির্বাচন হলে জটিলতা বাড়বে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেদিন বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনের ডেডলাইন দেননি। তিনি বলেছেন যে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন শেষ করতে চান। আমরা পরিষ্কার করেই বলেছি যে, ডিসেম্বরের মধ্যেই যদি নির্বাচন না হয় তাহলে দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে এবং সেটা তখন নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন হবে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়-ফ্যাসিবাদ দোসরদের বিচার ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের কার্যক্রম দৃশ্যমান না করা পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজন কঠিন। শিগগিরই এসব কার্যক্রমকে দৃশ্যমান করার উদ্যোগ ত্বরান্বিত করা হবে। জবাবে বিএনপি নেতারা সংস্কার নিয়ে বলেন, যে সমস্ত সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য হবে তার মধ্যে যে সকল সংস্কার নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন ততগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে এবং বাকিগুলো সনদ হিসেবে থাকবে। সেই সনদ বাস্তবায়নের জন্য যারাই ক্ষমতায় আসবে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। কিন্তু সংস্কার ও বিচারের দোহাই দিয়ে নির্বাচনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলতে পারবেন না। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের যে গতি, সংস্কারের যে গতি তাতে নির্বাচন নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে। বিএনপি পতিত ফ্যাসিবাদী দল ও সেই দলীয় সরকারের সঙ্গে যারাই যুক্ত ছিল তাদের বিচার দ্রুত করে রাজনীতির ময়দানকে জঞ্জালমুক্ত করারও দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে সরকারের সকল ইতিবাচক কর্মপ্রয়াসে সমর্থন প্রদান অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ যথাশিগগিরই ঘোষণার মাধ্যমে জনমনে সৃষ্ট সকল বিভ্রান্তি অবসানের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। 

ওদিকে জামায়াতে ইসলামী আগামী রোজার আগে নির্বাচন দাবি করেছে। এক্ষেত্রে জামায়াত আর বিএনপি’র মধ্যে মাত্র দুই মাসের পার্থক্য। এ বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে শেষ করা যায়। তবে সব দলের কথার মধ্যে সংস্কার করার দাবি রয়েছে। তবে কতোটুকু সংস্কার করা হবে তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। এনসিপি চায় আগে গণপরিষদ নির্বাচন হোক। তারপর এই গণপরিষদ সংবিধান গঠন করে সরে গেলে জাতীয় নির্বাচন হবে। এমনটা করতে গেলে কতো সময়ের প্রয়োজন? আর গণপরিষদইবা লাগবে কেন? দলগুলো এক হলে একটি সনদে স্বাক্ষর করে জাতীয় নির্বাচন দিলেই হয়ে যায়। সেই নির্বাচনে যে দল ক্ষমতায় যাবে সনদের স্বাক্ষর অনুযায়ী তারা সংস্কার করতে বাধ্য। অন্যথায় তাদের পরিণতিও আওয়ামী লীগের মতো হবে। তাই তারা সরকার গঠন করে সকল বিরোধী দলকে নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম চালাবে। এমনটা করলে খুব দ্রুত কাজ শেষ হবে। এ মুহূর্তে নির্বাচনের জন্য যেসব সংস্কার দরকার সেগুলো করে নিলেই হয়। এটাতে যত তাড়াতাড়ি দলগুলো একমত হতে পারবে তত তাড়াতাড়ি সরকার নির্বাচন দিতে পারবে। অন্যথায় সরকার সংস্কারের জন্য আগামী জুনেও নির্বাচন দিতে পারবে না। সময় আরও বেশি যাবে। আরেকটি কথা সরকার ছাড়া সকল দল এক টেবিলে বসে নিজেরা সংস্কার নিয়ে আলোচনা করে সেই সংস্কার সরকারের হাতে তুলে দিলে আরও ভালো হয়। যেহেতু সরকারের গঠিত সকল সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট এখন সরকারের হাতে। এ রিপোর্টগুলো নিয়ে একদিনে না সাতদিন বসে দলগুলো একমত হতে পারে। 

বেশি বেশি কথা না বলে কাজে মন দিলেই মীমাংসা হয়ে যাবে। আর বেশি কথা বললে পরিণতি যা হবার হবে। এ পরিণতি কেউ ঠেকাতে পারবে না। দলগুলোকে এ নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। একে অপরের বিরুদ্ধে কথা না বলে কাজের কাজ করতে হবে। সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সুড়ঙ্গের ওপারে দ্রুত আলো দেখতে চাইলে অবশ্যই সবাইকে একমত হতে হবে। আর ঐকমত্য কমিশনের কাছে গিয়ে বলতে হবে আমরা সবাই আপনাদের দেয়া সংস্কার প্রস্তাবের এসব ক্ষেত্রে একমত হয়েছি। আপনারা এ পর্যন্তই করুন। বাকিটা সনদ আকারে করুন। এতে আমরা সবাই স্বাক্ষর দেবো। তাহলে সরকারও কোনো অজুহাত দেখাতে পারবে না। তবে সবার আগে একটি কথা বলতে হবে পতিত স্বৈরাচারের গণহত্যার বিচার দ্রুত করতে হবে। গুম, খুনের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের বিচার দাবি অবশ্যই তুলতে হবে। ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। যাতে বিচার দ্রুত করা যায়। এটা করতে পারলে জীবনে আর কোনো দলই স্বৈরাচার হওয়ার সাহস দেখাবে না। যেমনটি আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেছিলেন আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন। এমনভাবেই সংবিধানকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। তিনি একবারও ভাবেননি প্রায় দুইশ’ বছর শাসন করে বৃটিশদেরও এদেশ ছেড়ে যেতে হয়েছে আন্দোলনের মুখে। আর পৃথিবীর কোনো স্বৈরশাসকেরই শেষটা ভালো হয়নি-এটাও ভুলে গিয়েছিলেন বিদেশি মিডিয়ায় খ্যাতি পাওয়া নিষ্ঠুরতম স্বৈরাচার শেখ হাসিনা।

 

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

সা ম্প্র তি ক প্রসঙ্গ/ এক যুগ আগে ড. ইউনূসকে যা বলেছিলাম

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status