অনলাইন
মার্কিন কংগ্রেস সদস্য, কর্মকর্তা এবং এনজিও প্রধানদের উপর চীনের নিষেধাজ্ঞা
মানবজমিন ডিজিটাল
(২ সপ্তাহ আগে) ২২ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৬:৫২ অপরাহ্ন

চীনা ও হংকংয়ের কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জের। এবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান, সরকারি কর্মকর্তা ও কিছু বেসরকারি সংস্থার প্রধানদের বিরুদ্ধে পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো চীন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, হংকং-সম্পর্কিত বিষয়ে ‘জঘন্য আচরণ’ করা কিছু মার্কিন কংগ্রেস সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা এবং এনজিওর প্রধানদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গুও জিয়াকুন এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি যেভাবে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে, তা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। তারা চীনের মূল ভূখণ্ড ও হংকংয়ের ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এরই জবাবে চীন পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানাই। যুক্তরাষ্ট্রের এই অবৈধ একতরফা নিষেধাজ্ঞা হংকং বিষয়সহ চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে গুরুতর হস্তক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণকারী মৌলিক নিয়মের লঙ্ঘন। যদি তারা ভবিষ্যতেও হংকং সংক্রান্ত বিষয়ে ভুল পদক্ষেপ চালিয়ে যায়, চীন আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে।
জিয়াকুন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আমাদের বার্তা হল যে, হংকং চীনের অংশ। হংকং বিষয়ক কোনও বিষয়ে মার্কিন হস্তক্ষেপ মেনে নেয়া হবে না। হংকং-সম্পর্কিত ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভুল পদক্ষেপের বিষয়ে নিশ্চিতভাবেই চীন দৃঢ় প্রতিক্রিয়া জানাবে এবং পারস্পরিক প্রতিহতমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিষয়টির পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ৩১ মার্চ ঘোষিত এক নিষেধাজ্ঞা। ওই দিন ওয়াশিংটন চীনের জাতীয় নিরাপত্তা ও উচ্চপর্যায়ের ছয় সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ছিল, এই কর্মকর্তারা হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করে তাদের হয়রানি ও দমন করার চেষ্টা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, চীনের প্রণীত নতুন নিরাপত্তা আইন ‘এক দেশ, দুই নীতি’ নীতির পরিপন্থী। এটি হংকংয়ের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারীদের কণ্ঠরোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, এই আইনের অপব্যবহার করে চীন গণতান্ত্রিক নেতাদের হয়রানি করছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির লঙ্ঘন। চীন এই ‘নিষেধাজ্ঞাগুলির’ তীব্র বিরোধিতা করেছে। চীনের পাল্টা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান, সিনেট কমিটির সদস্য এবং কিছু বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) প্রধান। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই ব্যক্তিদের চীনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোনো প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির আর্থিক সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যদিও চীন আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেনি, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই তালিকায় রয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির কয়েকজন সদস্য এবং কিছু বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।
চীনের হংকং অ্যান্ড ম্যাকাও স্টাডিজের পরামর্শদাতা এবং একজন সিনিয়র নীতি উপদেষ্টা লাউ সিউ-কাই সোমবার গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চীনের পাল্টা ব্যবস্থা প্রত্যাশিত এবং অতীতে একই রকম ঘটনা ঘটেছে। লাউ উল্লেখ করেছেন, বিদেশি নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের আইন কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে, চীনের পদক্ষেপের দৃঢ় আইনি ভিত্তি রয়েছে। এই আইন পালন করা বাধ্যতামূলক। একই সঙ্গে চীন জানিয়ে দিতে চায় তারা মার্কিন নির্যাতনকে মুখ বুজে মেনে নেবে না। বরং ন্যায়বিচার সমুন্নত রেখে এবং সাহস প্রদর্শন করে বলপূর্বক প্রতিক্রিয়া জানাবে। HKSAR-এর একজন প্রবীণ ভাষ্যকার এবং হংকং ও ম্যাকাও স্টাডিজের চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য চু কার-কিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞাগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং এটি অযৌক্তিক । নিষেধাজ্ঞার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমাদের কাছেও প্রাসঙ্গিক আইন রয়েছে।
সূত্র : গ্লোবাল টাইমস