অনলাইন
আইএমএফের পূর্বাভাস
মালয়েশিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে, ধাক্কা লাগতে পারে অর্থনীতিতে
স্টাফ রিপোর্টার, মালয়েশিয়া
(১ দিন আগে) ২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৭:৩৭ অপরাহ্ন

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দেশ মালয়েশিয়ার অর্থনীতির জন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে এনেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এতে করে মালয়েশিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে এবং ধাক্কা লাগতে পারে অর্থনীতিতে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলটি।
মালয়েশিয়ার বার্তা সংস্থা বারনামা ও স্থানীয় পত্রিকা দি এজের বরাতে জানাগেছে, সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৫ সালে মালয়েশিয়ার প্রকৃত মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৪.১ শতাংশ হারে বাড়বে। জানুয়ারী মাসে আইএমএফ ৪.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। শুধু মালয়েশিয়াই নয়, আইএমএফ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমিয়েছে।
আইএমএফের প্রকাশিত "নীতি পরিবর্তনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ" শীর্ষক বিশ্ব অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে ২০২৬ সালে মালয়েশিয়ার জিডিপি ৩.৮ শতাংশ বাড়বে বলে জানানো হয়েছে। আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে, ইন্দোনেশিয়ার ২০২৫ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪.৭ শতাংশ করা হয়েছে। ফিলিপাইনের প্রবৃদ্ধি ৬.১ শতাংশের আগের পূর্বাভাসের তুলনায় ৫.৫ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। থাইল্যান্ডের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও ২.৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১.৮ শতাংশ করা হয়েছে।
বিশ্ব অর্থনীতির প্রসঙ্গে আইএমএফ জানিয়েছে, নীতিগত বড় ধরনের পরিবর্তন বিশ্ব বাণিজ্যের গতিপথকে নতুন রূপ দিচ্ছে এবং আবারও অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে। সংস্থাটি মনে করছে, এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
আইএমএফ বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি তাদের বাণিজ্য অংশীদারদের বিরুদ্ধে একাধিকবার শুল্ক আরোপ করেছে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় কিছু দেশ পাল্টা ব্যবস্থাও নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে বাজার এই ঘোষণাকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও, ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সকল পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের পর প্রধান শেয়ার বাজারে বড় ধরনের পতন এবং বন্ডের সুদের হারে উল্লম্ফন দেখা যায়। যদিও পরবর্তীতে কিছু ছাড় ঘোষণার পর বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে।
সংস্থাটি আরও বলেছে, দীর্ঘ এবং কঠিন সময় পার করার পর ২০২৪ সালের বেশিরভাগ সময় জুড়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার লক্ষণ দেখা গেলেও, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। মুদ্রাস্ফীতি কমে এলেও তা এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার উপরে রয়েছে। শ্রমবাজার স্বাভাবিক হলেও উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় উদীয়মান বাজারগুলোতে উৎপাদন কার্যক্রম বেশি সম্প্রসারিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, পণ্যের বাজারে আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছে যে ২০২৫ সালে জ্বালানি তেলের দাম ৭.৯ শতাংশ কমতে পারে, যার প্রধান কারণ অপরিশোধিত তেল এবং কয়লার দাম হ্রাস। তবে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অশোধিত তেল বহির্ভূত অন্যান্য পণ্যের দামও ২০২৫ সালে ৪.৪ শতাংশ বাড়তে পারে।
মালয়েশিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই নিম্নমুখী পূর্বাভাস দেশটির অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন মতামত দিচ্ছেন। তবে এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমাটাও সামগ্রিকভাবে একটি উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছু প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, কারণ মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।