বাংলারজমিন
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প
এনপিসিবিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা থেকে
১৬ মে ২০২৫, শুক্রবারপাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল হাসানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এনপিসিবিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তারা ঈশ্বরদী শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। আর এই আন্দোলনকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক শক্ত হাতে দমনপীড়নের অভিযোগ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল পর্যন্ত এনপিসিবিএলের ২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন তিনি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে পাবনার ঈশ্বরদীতে কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২৮শে এপ্রিল থেকে এ আন্দোলন শুরু করে। তবে এনপিসিবিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল হাসানের দাবি তারা অযৌক্তিকভাবে এই আন্দোলন করছেন। তিনি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের স্বার্থে সংবাদটি প্রচার না করতে অনুরোধ করেন।
জানা যায়, পাবনা রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের (এনপিসিবিএল) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থল ত্যাগ করে গত সপ্তাহে উপজেলা সদরে এসে অবস্থান নেন। পরে সেখানে তারা হাতে হাত ধরে দীর্ঘ মানববন্ধন তৈরি করে। প্রায় ৩০ মিনিটের মানববন্ধনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল হাসানের অপসারণ দাবিতে বিভিন্ন পোস্টার ব্যানার প্রদর্শন করা হয়। মানববন্ধন শেষ করে বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অপসারণ দাবি করে বিভিন্ন সেøাগান দেয়। এনপিসিবিএলের জ্যেষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক ফাহিম শাহরিয়ার জানান, প্রকল্প পরিচালক জাহেদুল হাসান প্রতিষ্ঠানে একাধিক দায়িত্ব পালন করছেন যা অত্যন্ত অস্বাভাবিক। তিনি একাধারে প্রকল্প পরিচালক, এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা, প্রধান অর্থ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং স্টেশন ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যা নজিরবিহীন বলে দাবি করেন তিনি। তিনি অভিযোগ করেন, প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল হাসান প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং প্রশাসনিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। এনপিসিবিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তন্ময় চৌধুরী, নাইমুস শাকিব, আসিফ খান দাবি করেন, জাহেদুল হাসান তাদের কাজের পরিবেশ নষ্ট করছেন, এবং তার শাসনব্যবস্থায় দুর্নীতি ও অনিয়ম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও প্রশাসনিক কর্তৃত্ববাদী আচরণের অভিযোগ তুলেন। এনপিসিবিএলের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ্ আল নোমান ও মো. আকরাম জানান, প্রকল্প পরিচালক জাহেদুল হাসান প্রতিষ্ঠানে একাধিক দায়িত্ব পালন করছেন যা অত্যন্ত অস্বাভাবিক। আমরা তার অপসারণ দাবি করছি। এদিকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল হাসান, চাকরিবিধি না মানায় পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন। একইসঙ্গে নিরাপত্তার স্বার্থে চাকরিচ্যুতদের রূপপুর প্রকল্প ও গ্রিনসিটি বহুতল আবাসিক এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অব্যাহতিপত্রে বলা হয়, এনপিসিবিএল- কোম্পানিতে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এনপিসিবিএলের চাকরি হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আপনারা নোটিশ পেমেন্ট বাবদ তিনমাসের বেতন ভাতা পাবেন। রূপপুর প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এনপিসিবিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, এটা তার স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ। তিনি অনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থের দাপটে আমাদের নিষ্পেষিত করছেন। আমরা প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। প্রকল্পের কর্মীরা দাবি করছেন, তাদের এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও কর্মপরিবেশের স্বার্থে। তারা আশা করছেন, কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, যাতে প্রতিষ্ঠানটিতে স্বচ্ছতা ও উন্নয়ন সাধিত হয়।
এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল হাসান জানান, তিনি মাত্র চার মাস ধরে দায়িত্ব পালন করছেন এবং আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তিনি অবসরে চলে যাবেন। তার ভাষ্যমতে, কর্মচারীরা কিছু অনৈতিক দাবি তুলেছেন, যা তিনি মেনে নিতে পারেননি, তাই তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠেছে। তবে তিনি মানবজমিনকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের স্বার্থে নিউজটি প্রচার না করতে অনুরোধ করেন।