ঢাকা, ২৫ মে ২০২৫, রবিবার, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

হার্ভার্ডের বিদেশি শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার মুখে, আপাতত ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত স্থগিত

মানবজমিন ডেস্ক

(১ দিন আগে) ২৪ মে ২০২৫, শনিবার, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৩:৪৪ অপরাহ্ন

mzamin

ট্রাম্প প্রশাসনের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করেছেন এক বিচারক। আদালতের এই সাময়িক স্থগিতাদেশ এসেছে হার্ভার্ডের দায়ের করা একটি মামলার পর। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। বিশ্ববিদ্যালয়টি বলেছে, বৃহস্পতিবার প্রশাসনের বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি আইন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সরাসরি লঙ্ঘন। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, হার্ভার্ড ইহুদিবিদ্বেষ দমনে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি এবং তাদের নিয়োগ ও ভর্তি নীতিতে পরিবর্তন আনার দরকার ছিল। তবে এ অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়টি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। বিচারক অ্যালিসন বারোজ শুক্রবার এক সংক্ষিপ্ত রায়ে ওই সাময়িক স্থগিতাদেশ দেন। এর ফলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের বৃহস্পতিবারের সেই পদক্ষেপ স্থগিত থাকে। তারা হার্ভার্ডের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (এসইভিপি) অ্যাক্সেস বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছিল। এই প্রোগ্রামটি বিদেশি শিক্ষার্থীদের তথ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহৃত হয়। মামলার পরবর্তী শুনানি ২৯ মে, বোস্টনে হবে।

মামলায় হার্ভার্ড বলেছে, একটি কলমের খোঁচায় সরকার আমাদের ছাত্রসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ মুছে দিতে চাইছে। এই বিদেশি শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অমূল্য অবদান রেখে চলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বলেন, আমরা এই অবৈধ ও অযৌক্তিক পদক্ষেপের নিন্দা জানাই। এটি আমাদের একাডেমিক স্বাধীনতা বজায় রাখার কারণে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিহিংসামূলক আচরণ। 

ওদিকে হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অ্যাবিগেইল জ্যাকসন বলেন, যদি হার্ভার্ড তাদের ক্যাম্পাসে আমেরিকাবিরোধী, ইহুদিবিদ্বেষী ও সন্ত্রাসপন্থি পক্ষের সমর্থকদের দমন নিয়ে এতটাই উদ্বিগ্ন হতো, তবে আজ তাদের এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো না। বিচারকের রায়ের পর তিনি বলেন, এই অনির্বাচিত বিচারকদের ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন ও জাতীয় নিরাপত্তা নীতিতে হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই।

শুক্রবার হার্ভার্ড ক্যাম্পাস ছিল শান্ত। ক্লাস শেষ হয়ে গেছে, শুরু হয়েছে সমাবর্তনের প্রস্তুতি। ছাত্ররা গাউন ভাড়া নিচ্ছেন, পরিবারের সদস্যদের জন্য টিকিট নিচ্ছেন। এই সময়টা উৎসবের হওয়া উচিত। কিন্তু বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এটি এক দুঃস্বপ্নের মতো। তারা জানতে পারছিলেন না, তাদের তৎক্ষণাৎ দেশ ছাড়তে হবে কি না, বা তারা কি এখন থেকে বিতাড়নের ঝুঁকিতে? আয়ারল্যান্ডের করম্যাক স্যাভেজ পড়াশোনা করেছেন সরকার ও ভাষা নিয়ে। ছয় দিন পর তিনি স্নাতক হচ্ছেন। তিনি ব্রাসেলসে চাকরি নিচ্ছেন আংশিকভাবে মার্কিন অনিশ্চয়তার কারণে। তিনি বলেন, আপনি জানেন আগামী ৯০ দিন এখানে বৈধভাবে আছেন, কিন্তু জানেন না আপনি আবার ফিরতে পারবেন কি না, বা কাজ শুরু করতে পারবেন কি না। 

একজন জুনিয়র বৃটিশ ছাত্র রোহান বাটুলা বলেন, আমি ভয় পেয়েছিলাম যদি বাড়ি যাই, তবে আবার ফিরতে না পারি। তাই আমি ক্যাম্পাসেই থেকে গেছি। চার্লস নদীর পাশে কিছু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যখন খবর পেলেন যে আদালত সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে, তখন তাদের মুখে স্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে। বাটুলা বলেন, একটা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি বলেই আমি যেন অবৈধভাবে আছি- এই ভাবনাটা বাস্তবের মতো লাগে না। এ বছর হার্ভার্ডে ৬,৮০০ বিদেশি ছাত্র আছেন। এই সংখ্যা মোট ছাত্রসংখ্যার শতকরা ২৭ ভাগের বেশি। এদের এক-পঞ্চমাংশ চীন থেকে, এছাড়াও আছে কানাডা, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও বৃটেন থেকে। এমনকি বেলজিয়ামের ভবিষ্যৎ রানী এলিজাবেথও এখন হার্ভার্ডে পড়ছেন। লিও অ্যাকারম্যান আগস্ট থেকে হাভার্ডে পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। তিনি বলেন, আমি খুবই উদ্বেলিত ছিলাম, এখনও আছি। তবে এইভাবে সুযোগ চলে যাওয়া খুবই দুঃখজনক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি ছাত্ররা সাধারণত পুরো টিউশন ফি দেয়, যা আমেরিকান ছাত্রদের স্কলারশিপে সাহায্য করে। শুধু টিউশনই এ বছর হবে ৫৯,৩২০ ডলার (প্রায় ৪৩,৮৫০ পাউন্ড), আর অন্যান্য খরচ নিয়ে মোট ব্যয় ১০০,০০০ ডলারেরও বেশি।

সিয়েরা লিওনের ইসাক ব্যাঙ্গুরা স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে  হার্ভার্ডে গিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার বাচ্চারা বলছে, বাবা, আমাদের আবার দেশে ফেরত পাঠাবে? ওরা আসলে বিতাড়নের কথা বলছে। তিনি বলেন, আমি জানি আমেরিকানরা সমস্যার সময় সমাধান খুঁজে পায়। ট্রাম্প প্রশাসন শুধু হার্ভার্ড নয়, অন্যান্য বড় বিশ্ববিদ্যালয়কেও লক্ষ্য করেছে। তারা দাবি করছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইসরাইল-বিরোধী বা ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ দমন করতে হবে এবং রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি বৈষম্য বন্ধ করতে হবে। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, হার্ভার্ডকে তাদের পথ পরিবর্তন করতে হবে। তিনি আরও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দেন। এপ্রিল মাসে ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের ২.২ বিলিয়ন ডলারের তহবিল স্থগিত করে এবং ট্যাক্স ছাড় সুবিধা প্রত্যাহারের হুমকি দেয়।

আইন বিশেষজ্ঞ কার্ল টোবিয়াস বলেন, মামলার শুরুটা ম্যাসাচুসেটস ও নিউ ইংল্যান্ডের ফেডারেল আদালতে হবে, যেখানে অতীতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে রায় এসেছে। তবে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ালে ফলাফল অনিশ্চিত।

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status