শেষের পাতা
সিলেট নগর রক্ষার ৪৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা ঝুলছে
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৩১ মে ২০২৫, শনিবার
২০২২ সাল। বন্যা বিপর্যস্ত হয় সিলেট। এমনকি সিলেট নগরের অর্ধেক এলাকা ডুবে যায়। গোটা জেলার ৮০ ভাগ এলাকাই ছিল পানির নিচে। দেখা দেয় মানবিক বিপর্যয়। তীব্র সংকটের মুখে পতিত হয় সিলেট। আর আচড় এসে লাগে নগরেও। ঢলের তোড়ে তছনছ হয়ে যায় নগরের রাস্তাঘাট। এই অবস্থায় বিপর্যস্ত সিলেট সফর করেছিলেন রাষ্ট্রপ্রধান। তখন সিলেটের মেয়র ছিলেন বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। নগরকে বন্যা থেকে রক্ষা করতে তার কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ছিল। আরিফুল হক চৌধুরীর নির্দেশে নগর রক্ষায় একটি সমীক্ষা করা হয়। এজন্য ডাকা হয় এক্সপার্ট টিমকে। এই সমীক্ষার দায়িত্ব পায় আইডব্লিউএম নামে একটি সার্ভে কোম্পানি। এই কোম্পানি টানা কয়েক মাস নগরে সার্ভে পরিচালনা করে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে। এতে দেখা গেছে, বন্যা থেকে সিলেট নগর রক্ষা করতে হলে প্রায় ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ এ সমীক্ষায় সন্তুষ্ট হয়। নগরের প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, আরিফুল হক চৌধুরীর সময় শুরু করা এই সমীক্ষা শেষ হয় দেড় বছর আগে। পরে সেটি নিয়ে আরও পর্যালোচনা করা হয়। এরপর যখন সিটির মেয়র হন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, তখন এই প্রস্তাবটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। সেই প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয় ঘুরে প্ল্যানিং কমিশনে যায়। প্ল্যানিং কমিশন প্রস্তাবটি পর্যালোচনার পর প্রকল্প ব্যয়ের ব্যাপারে কিছু সুনির্দিষ্ট মতামত চায়। এর আলোকে সিলেট সিটি করপোরেশন থেকে প্রায় তিন মাস আগে প্ল্যানিং কমিশনের দেয়া নির্দেশনা মতো প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এখন সেটি মন্ত্রণালয়ে ঝুলছে।
প্রকৌশল বিভাগ জানায়, ২০২২ সালের বন্যার পর সিলেট নগরকে বন্যা ও জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে এক্সপার্ট দিয়ে সমীক্ষা করা হয়। যে সমীক্ষা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। ওই সমীক্ষায় কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নগরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ৯টি ছড়া ও আরও কয়েকটি উপ-ছড়া বা খাল পানিপ্রবাহের জন্য প্রশস্তকরণ, নগরের নিচু এলাকায় পানি সংরক্ষণাগার নির্মাণ, নগর এলাকায় সুরমা নদীর দুই তীরে বেড়িবাঁধ ও পানি প্রটেকশন দেয়াল নির্মাণ ও সব ক’টি ছড়া বা খালের সম্মুখে স্লুইচগেট নির্মাণ, পানি অপসারণের জন্য পাম্প ও রেগুলেটর স্থাপন। এর বাইরে আরও কয়েকটি কাজও এই প্রস্তাবনায় রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, বন্যা থেকে সিলেট নগর রক্ষার যে প্রকল্প দেয়া হয়েছে এই প্রকল্পের অনেক কাজই হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। ফলে বিষয়টি নিয়ে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও এ প্রকল্পে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সূত্র বলছে, ২০২২ সালের বন্যার পর সিলেট নগরকে বন্যা থেকে রক্ষা করতে সিলেট-১ আসনের সাবেক এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সুরমা নদী খননের জন্য ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ঢাকার দু’টি কোম্পানির নদী অংশ খনন করা হয়। কিন্তু বর্ষা এসে যাওয়ায় পরবর্তীতে তড়িঘড়ি করে ওই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করা হয়। এতে দেখা গেছে, প্রকল্পের অর্ধেক টাকাই লুটপাট করা হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এই কাজ শেষ হওয়ার পর ২০২৪ সালের বন্যায় সিলেট নগর ডুবে ছিল। ওই সময় প্রকল্পের কাজ নিয়ে বিতর্কিত হন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনও। পুরো টাকাটাই জলে গেছে। এই অবস্থায় নদী খননের বিষয়টিকে আপাতত গুরুত্ব না দিয়ে যে প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, সেটির দিকেই ফোকাস দিচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন। কর্মকর্তারা বলছেন, নগরকে রক্ষা করতে হলে কয়েকটি কাজ দ্রুতই করতে হবে। নতুবা প্রতি বছরই ডুববে নগরের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা। নগরকে বাঁচাতে হলে সুরমা নদী খনন করতে হবে। তবে, সেটি সিটি করপোরেশন নয়, করতে হবে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, সিলেট নগর এলাকায় নদী খনন এক মৌসুমে করা দুষ্কর হবে। এর কারণ সুরমার সিলেট নগর অংশে নদীর তলদেশে কয়েক স্তরের পলিথিন জমে গেছে। এই পলিথিন না সরালে নদীর নাব্য ফিরবে না। তারা বলেন, ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প চলার সময় কয়েক হাজার টন পলিথিন নদীর তলদেশ থেকে উদ্ধার করা হয়। এতে করে সময় বেশি লাগে। একাধিক ড্রেজার লাগিয়েও কাজ দ্রুত শেষ করা যায়নি। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, সিলেট নগর রক্ষার ৪৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা দ্বিতীয় দফায় প্রায় তিন মাস আগে পাঠানো হলেও এখনো কোনো ফলাফল আসেনি। মন্ত্রণালয়ে সেই প্রস্তাবনা রয়েছে। তবে, নগর রক্ষায় বর্তমানে বড় প্রকল্প ছাড়া সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। কারণ, সিলেট নগরে গত ৭-৮ বছর ধরে নিয়মিতভাবে প্রতি বছর বন্যা হচ্ছে। আর প্রতি বন্যায় নগরের তীরবর্তী এলাকায় বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়। সিটি করপোরেশনের সড়কসহ নানা খাতে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এজন্য প্রতি বছরই প্রকল্প নিতে হচ্ছে। সুতরাং স্থায়ী সমাধান হয়ে গেলে প্রতি বছর আর কোনো প্রকল্প লাগবে না।
পাঠকের মতামত
কোন সিটি কর্পোরেশনের অপেক্ষায় না থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে তাড়াতাড়ি ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিশেষ করে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহরের জলবদ্ধতা দূর করতে এবং ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সংশ্লিষ্ট সরকারের অন্যান্য যারাই থাকেন দ্রুত শুরু করে দিন জনগর্ভের আর মানুষ সহ্য করতে পারছে না। নির্বাচন এবং সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু খাওয়া পরা যাতায়াতের আগে কখনোই গুরুত্বপূর্ণ নয় সাধারণ জনগণের কাছে।