শেষের পাতা
জিয়াউর রহমানের সমাধিতে বিএনপি’র শ্রদ্ধা
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি
স্টাফ রিপোর্টার
৩১ মে ২০২৫, শনিবার
বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুস্থ ও অসহায়দের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী ও বস্ত্র বিতরণ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ২৩টি স্পটে এবং উত্তরে ১৩টি স্পটে দুস্থদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী ও বস্ত্র বিতরণ করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। কর্মসূচিগুলোতে অংশ নিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা। বলেছেন, জুন মাসে যদি নির্বাচনের কথা বলেন, এই নির্বাচন কখনো বাংলাদেশে হবে না। সুতরাং নির্বাচন যদি করতে হয় ডিসেম্বরের মধ্যেই করতে হবে।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ দলের সিনিয়র নেতারা শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধি প্রাঙ্গণে যান। পুষ্পমাল্য অর্পণের পর প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন তারা। পরে সমাধি প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে দোয়া মাহফিলে অংশ নেন নেতারা। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ এবং আগামীকালও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি’র উদ্যোগে রাজধানীতে দুস্থদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী ও বস্ত্র বিতরণ করা হবে।
দুপুরে গুলশান থানা বিএনপি’র উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে গণতন্ত্র হুমকির মুখে। বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। কিন্তু এখনো গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে নাই। এই সরকার বলেছে যে, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেয়াটাই তাদের প্রধান দায়িত্ব। জনগণের অধিকারের মধ্যে ভোটের অধিকার প্রধান। গত ১৬ বছর ধরে দেশের মানুষ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত। সুতরাং জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীতে আমাদের শপথ হোক, এদেশে আমরা একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করবো।
মির্জা আব্বাস বলেন, খুব দুঃখের সঙ্গে বলছি, দেখলাম ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব জাপানে বসে বিএনপি’র বদনাম করছেন। একটু লজ্জাও লাগলো না দেশের সম্পর্কে বিদেশে বসে বদনাম করতে। তিনি বললেন, একটি দল নির্বাচন চায়। আর আমরা বলতে চাই, একটি লোক নির্বাচন চায় না, সে হলো ড. ইউনূস। উনি নির্বাচন চান না।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি বরাবরই নির্বাচন চেয়েছে ডিসেম্বরের মধ্যে এবং এই ডিসেম্বরের কথা কিন্তু ইউনূস সাহেব স্বয়ং বলেছেন। আমরা বলি নাই, তারই এই প্রস্তাব। পরবর্তীতে তিনি শিফট করে চলে গেলেন জুন মাসে। জুন মাসে যদি নির্বাচনের কথা বলেন, এই নির্বাচন কখনো বাংলাদেশে হবে না। সুতরাং নির্বাচন যদি করতে হয় ডিসেম্বরের মধ্যেই করতে হবে। আর নির্বাচন যদি করতে না চান, সেটা ইউনূস সাহেবের দায়-দায়িত্ব, আমাদের দায়-দায়িত্ব নয়। আমরা জাতি-জনগণ এই নির্বাচন আদায় করবো, নইলে এদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ঠিক থাকবে না।
আব্বাস বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করতে হবে জাতিকে বিভিন্ন কারণেই। আপনারা লক্ষ্য করেছেন সংস্কার সংস্কার করতে করতে বর্তমান সরকার বহু লোককে আমদানি করেছেন সংস্কার করার জন্য। আমি আজকে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহু সংস্কার করেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কিন্তু বিদেশ থেকে কোনো পরামর্শক আনেন নাই।
গতকাল সকালে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে জিয়াউর রহমানের সমাধি প্রাঙ্গণে নেতা-কর্মীদের আসতে দেখা গেছে। এ সময় তাদের পোশাকে দেখা গেছে কালোব্যাজ। মিছিলে নেতাকর্মীরা ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম’, ‘জিয়া তোমায় ভুলিনি, ভুলবো না, স্বাধীনতার অপর নাম জিয়াউর রহমান’সহ ইত্যাদি স্লোগানও ধরেন। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, মুক্তিযোদ্ধা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, তাঁতীদল, মৎস্যজীবী দল, ডক্টরস এসোসিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদাভাবে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বনানীতে ২০ নং ওয়ার্ড বনানী থানা বিএনপি’র উদ্যোগে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আজকে যে সরকার, তারা বিভিন্ন কথা-বার্তা বলছে। আমি তাদের সমালোচনা করতে চাই না। আমি একটি কথা শুধু তাদের স্মরণ করে দিতে চাই, আপনারা নির্বাচনকে কেন ভয় পাচ্ছেন? আপনারা জানেন জনগণ আপনাদের পছন্দ করে না। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আপনারা আর থাকতে পারবেন না। সেই ভয় পাচ্ছেন? সেটা খোলাখুলি বলেন না কেন?
দুপুরে হাইকোর্টের মাজারগেটে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুস্থ ও অসহায়দের মধ্যে তবারক বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জাতির মধ্যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে এবং জাতির প্রত্যাশার ওপর আমরা আমাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছি। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি প্রতিচ্ছবি মন্তব্য করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের জন্ম হয়েছিল এ দেশের স্বাধীনতার জন্য। জিয়াউর রহমানকে শাহাদাতবরণ করতে হয়েছে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে গেছেন।
রাজধানীর ফকিরাপুলে ১০ নং ওয়ার্ড মতিঝিল থানা বিএনপি’র উদ্যোগে স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের বিরুদ্ধে, বিএনপি’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এখনো চলমান। বিগত ১৭ বছরের আন্দোলনে আমাদের শত শত নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউর টিএন্ডটি কলেজ, গুলশান ২ নং ঢাকা সিটি করপোরেশনের মার্কেট, জোরপুকুর খেলার মাঠ, সেগুনবাগিচা হাই স্কুল মাঠ, বাসাবো খেলার মাঠ, কদমতলা সংসদ সংলগ্ন বালুর মাঠ, ধানমণ্ডি আবাহনী মাঠ, ধানমণ্ডি কেএফসি, কলাবাগান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মালিবাগ, আজিমপুর বটতলা, কামরাঙ্গীরচর, সূত্রাপুর, নিউমার্কেট, শেরেবাংলা নগর, গুলশান, দারুসসালাম, মিরপুর, তুরাগ, মোহাম্মদপুর, আদাবর, বাড্ডা, কাফরুল, পল্লবী, ভাটারা, নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন জায়গায় দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণের কর্মসূচি ও মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
পাঠকের মতামত
সংস্কার, সংস্কার বলে সংস্কারকে গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত করে ফেলেছে। অথচ সময়ের চাহিদানুযায়ী ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। তাই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের মাধ্যম জনপ্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করে আপনাদের যার যার স্বাচ্ছন্দ্য কর্মে ফিরে যান। ইতিহাস আপনাদের সারাজীবন বিতর্কের উর্ধ্বে স্মরণ করবে।