আমীর খসরু’র বক্তব্যে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যযুক্ত: জনতা পার্টি

‘৫ই আগস্টের পর আত্মপ্রকাশ করা নতুন রাজনৈতিক দলগুলো ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না’-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর এই বক্তব্যে নিরতিশয় দুঃখজনক, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যযুক্ত এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচারের লংঘনও বটে বলে মন্তব্য করেছে জনতা পার্টি বাংলাদেশ। রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে জনতা পার্টি বাংলাদেশের নির্বাহী চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন ও মহাসচিব শওকত মাহমুদ এ মন্তব্য করেন। এতে বলা হয়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সামপ্রতিক একটি বক্তব্যের প্রতি জনতা পার্টি বাংলাদেশের মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে। গত শনিবার এক আলোচনা সভায় আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবির পাশাপাশি তিনি মন্তব্য করেছেন যে, ৫ই আগস্টের পর আত্মপ্রকাশ করা নতুন রাজনৈতিক দলগুলো ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না। গত ২৫শে এপ্রিল জন্ম নেয়া জনতা পার্টি বাংলাদেশ মনে করে, বিএনপি বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। সেই দলের শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর এই পর্যবেক্ষণটি নিরতিশয় দুঃখজনক, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যযুক্ত এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচারের লংঘনও বটে। কে কখন নির্বাচন চায়, এটি একান্তই দলীয় নিজস্ব বিষয়।
নেতৃদ্বয় বলেন, যারা নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কিছু বলেনি, তারা সেই নির্বাচন তার মতো করে চায় কিনা, প্রসঙ্গবর্হিভূতভাবে এই বিষয় সম্পর্কে বলাটা বাঞ্ছনীয় নয়। তার বক্তব্যের পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, ৫ই আগস্টের পর জন্ম নেয়া রাজনৈতিক দলগুলো কোনো দল নয়। অথবা তাদের জন্মই যেন আজন্ম পাপ। অথবা নতুন দলগুলো কেন বিএনপি নির্বাচনী দাবির পিছু পিছু হাঁটছে না-এমন উষ্মা প্রকাশের মধ্যদিয়ে যেন তাদেরকে এ দাবিতে বাধ্য করার প্রয়াস।
নেতৃদ্বয় আরও বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা উদার নৈতিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির অন্যতম অনুষঙ্গ। বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধ, বিপ্লব এবং গণঅভ্যুত্থানের পর ওইসব চেতনায় নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ একটি অনিবার্য বিষয়। স্বাধীনতার পর মহান যুদ্ধে অংশ নেয়া যোদ্ধারা আওয়ামী লীগের বাইরে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। ’৭৫-এর ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লবের পর বিএনপিসহ ৭০টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন অধ্যাদেশের অধীনে নিবন্ধন নিয়েছিল। আমরা বিস্মিত যে, একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থার বিপরীতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক হিসেবে ইতিহাস স্রষ্টা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার (জিয়াউর রহমান) দলের একজন নেতার এহেন উপলব্ধি দুর্ভাগ্যজনক।
তারা বলেন, বাকশাল, মহাজোটের নামে বাকশাল এবং ভবিষ্যতে নির্বাচনের পরে জাতীয় সরকারের নামে নতুন বাকশাল হয় কিনা তা নিয়ে মানুষ শঙ্কায় ভুগছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে যে দল জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল, সেই দর্শনের হালচাল সম্পর্কে এখন আলোচনায় না যাওয়াই শ্রেয়। মূলত বিশ্ব-কাঁপানো সামপ্রতিক গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের অসহিষ্ণুতা, মব জাস্টিস, পরমতের প্রতি অশ্রদ্ধা বা ঘৃণা উস্কে দেয়ার যে হীন প্রয়াস পরিলক্ষিত হচ্ছে যা বিএনপি নেতৃত্বের ভগ্নাংশকেও গ্রাস করেছে। ড. ইউনূস (অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস) কোনো মহামানব নন, তিনি ছাড়া সবাই নির্বাচন চায়’ অথবা পেশাবে ভাসিয়ে দেয়া, এ ধরনের মন্তব্য তার প্রমাণ। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার কিছু কিছু পর্যবেক্ষণ, কতিপয় উপদেষ্টার বাগাম্বর, জামায়াত এবং এনসিপির কোনো কোনো নেতার মন্তব্যও শিষ্টাচারের ব্যত্যয়।
নেতৃদ্বয় বলেন, জনতা পার্টি বাংলাদেশ একাত্তরের আদর্শ এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় গঠিত একটি মধ্যপন্থি দল। আমরা অবশ্যই নির্বাচিত গণতন্ত্রে দ্রুত উত্তরণে বিশ্বাসী। আমরা মনে করি, সংস্কার, ফ্যাসিবাদীদের বিচার এবং জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য জাতি দৃঢ়সংকল্প।