বাংলারজমিন
কাজ করেনি সিন্ডিকেট খাতুনগঞ্জে মসলার বাজারে স্বস্তি
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবারঘনিয়ে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। এ ঈদে পশু কোরবানি করতে হয় বিধায় বাড়ে মসলার চাহিদাও। প্রতি বছর একটি সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে দিতো মসলার। কিন্তু এ বছর তার উল্টো চিত্র। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার বদলে উল্টো কমতে দেখা গেছে। বিপরীতে মসলার আমদানিও বেড়েছে।সোমবার দেশে ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ঘুরে জানা যায় এসব তথ্য। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার কিছুটা উল্টো ঘটনা ঘটছে দেশে। কোরবানির আগে দাম কমেছে এলাচসহ কয়েকটি মসলাজাত পণ্যের।প্রতিবছর কোরবানির ঈদের আগে একটি সিন্ডিকেট মাথাচাড়া দিয়ে বাজারে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে। যার ফলে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষেরা মসলা কিনতে হিমশিম খেতে হয়।এবার সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে সেই সিন্ডিকেট তেমন কারসাজি করতে পারেনি।এছাড়া আমদানিও ছিলো স্বাভাবিক।
কোরবানির আগে মসলাজাত পণ্যের দাম কমার বিষয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার-সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, বিভিন্ন কারণে খাতুনগঞ্জে পণ্যের বিক্রি কমে গেছে এখন। তাই চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি। আর সরবরাহ বেশি থাকায় কিছু পণ্যের দাম কমছে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়েও অনেক সময় নানা পণ্যের দাম কমে। এদিকে চলতি অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৭০ হাজার টন মসলাপণ্য আমদানির কথা জানালেন চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র।সংস্থাটির উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, চলতি অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে এক লাখ ৬৯ হাজার ৮৩৪ দশমিক ৪২ টন মসলা। এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে দেশে সবচেয়ে বেশি ৯৯ হাজার ৮৫৮ টন রসুন আমদানি করা হয়েছে। অন্যান্য মসলার মধ্যে এলাচ ১ হাজার ৬১৪ দশমিক ৬ টন, দারুচিনি ১০ হাজার ৫৪৩ টন, লবঙ্গ ২ হাজার ১৫৪ টন, জিরা ৩ হাজার ৭০২ টন, পেস্তাবাদাম ৮২৭ টন, কেশিয়া পাউডার ৩৭৫ টন, কিসমিস ৪ হাজার ৮২৩ টন, শাহী জিরা ২ টন, জয়ত্রী ২৯০ টন, কাবাব চিনি ২ টন, জারফল ২৭২ টন, কালিজিরা ৭ টন, গোল মরিচ ১ হাজার ৯ দশমিক ৭২ টন, মেথি ৭২ টন, আদা ২১ হাজার ১৯ টন, পেঁয়াজ ১৪ হাজার ৬৩ দশমিক ৬ টন, হলুদ ৪ হাজার ৩২৮ টন, শুকনো মরিচ ১৭৯ দশমিক ৭ টন, ওয়ালনট ১৭৫ টন, অনিয়ন পাউডার ৪৩৯ টন, জিনজার পাউডার ৩৭ দশমিক ৮ টন, গারলিক পাউডার ৭৩২ টন, পি-নাট ৮৮ টন, ড্রাই অনিয়ন লিভ ১৩৮ টন, কোকোনাট ফ্যাট ৮৮৮ টন, কেশিও নাট ৯৮৫ টন, মৌরি ৭১২ টন আমদানি করা হয়েছে।
মসলা গবেষণাকেন্দ্রের তথ্য অনুসারে দেশে বছরে মসলার চাহিদা ৩৩ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হয় ২৭ লাখ টনের বেশি। বাকি মসলা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। এরমধ্যে অধিকাংশ মসলা স্থলপথে আমদানি করা হয় প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে। আবার সমুদ্রপথে আসা মসলা দেশে প্রবেশ করে তিন বন্দর দিয়ে। অবশ্য সমুদ্রপথে আসা সিংহভাগ মসলা দেশে প্রবেশ করে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়েই। গেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে মসলাজাত পণ্যের মধ্যে এলাচের দাম ২০০ টাকার বেশি কমেছে কেজিপ্রতি। সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে ধনিয়া ও গোল মরিচের দাম। আবার দু-সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে জিরার দাম। পেঁয়াজের দামও কমতির দিকে খাতুনগঞ্জে। গেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে পণ্যটির দাম। মে মাসে শেষ সপ্তাহে খাতুনগঞ্জে কেজিপ্রতি এলাচ ৪ হাজার ৭০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ২৪০ টাকা, জিরা ৬০০ টাকা, ধনিয়া ১৫০ টাকা, দারুচিনি ৩৯০ টাকা, স্টার ৭৮০ টাকা, গোল মরিচ ১ হাজার ৮০ টাকা এবং জয়ত্রী ২ হাজার ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক মঞ্জুর ফারুক বলেন, আমদানিকারকরা এবারে বেশি মসলা আমদানি করেছে। যা বিগত ১০ বছরে করেনি। আর বন্দরে খালাস করতে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেগ পেতে হয়নি। কিছু পণ্যে যেমন- তেল ও চিনিতে ভ্যাট-ট্যাক্স মওকুফ করা হয়েছে। তবে যতটুকু আমদানি হয়েছে, ততটুকু পরিমাণ পাইকারি পর্যায়ে চাহিদা নেই বললেই চলে। ব্যবসায়ীরা চায়, দ্রুত মসলা বিক্রি করতে, তাই কম দামে ছেড়ে দিচ্ছেন তারা। আর এবারে কোনো নির্দিষ্ট পণ্য তেমন গুদামজাত করে রাখতে পারেনি প্রশাসন তৎপর থাকায়। দামও অনেকটা কম।