বাংলারজমিন
ভারতীয় গরু না থাকায় খুশি খামারিরা
রাজশাহীতে জমে উঠেছে পশুর হাট
রাজশাহী প্রতিনিধি
৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবাররাজশাহীতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাটগুলো। ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে হাট। হাটগুলোতে দেশি গরু-ছাগলসহ সব ধরনের পশু উঠেছে। এবার ভারতীয় গরুর প্রভাব না থাকায় স্বস্তিতে দেশি খামারিরা। দামও ভালো পাচ্ছেন বিক্রেতারা। ঈদ ঘনিয়ে আসতেই হাটগুলোতে বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর দাম তুলনামূলক কম। তবে, বিক্রেতারা ন্যায্য দামও পাচ্ছেন। রাজশাহীতে পশু কেনাবেচার জন্য বেশ কয়েকটি হাট রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দামকুড়া হাট, তাহেরপুর, ভবানীগঞ্জ, বানেশ্বর, পুঠিয়া ও কাটাখালি।
সরজমিন কোরবানির পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ পশুর হাট রাজশাহীর সিটিহাটে ছোট, বড়, মাঝারি ধরনের গরু কেনা-বেচা জমজমাট হয়ে উঠেছে। কাক ডাকা ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ব্যবসায়ী ও খামারিরা এ হাটে গরু-মহিষ নিয়ে আসছেন। কেনা-বেচা চলছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। বছরের অন্য সময়গুলোতে সিটিহাট রোববার ও বুধবার সপ্তাহে দুইদিন বসলেও ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন কেনা-বেচা চলছে এ হাটে। এ হাটে মাঝারি ধরনের গরু বেশি দেখা যাচ্ছে। ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে মাঝারি সাইজের গরু। যার কারণে মাঝারি সাইজের গরুর দিকে ঝুঁকছে ক্রেতারা। এসব গরু মূলত ১ লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারির চেয়ে একটু বড় গরু বিক্রি হচ্ছে ২ লাখ থেকে ২ লাখ ২০ হাজারের মধ্যে। আর ছোট সাইজের গরু ৬৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে এবার নাম ডাকের মতো বড় গরু হাটে অনেক কম উঠছে। সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকার উপরে গরু ওঠেনি। এবার মহিষের দামও কিছুটা কম। সিটিহাটে মাঝারি সাইজের মহিষ বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে তিন লাখের মধ্যে।
হাটে কেনা-বেচা করতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। শিবপুর থেকে সিটিহাটে গরু নিয়ে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, আমি বেশ কয়েকটি গরু নিয়ে এসেছিলাম সব বিক্রি হয়ে গেছে। দাম ভালো পেয়েছি, লোকসান হয়নি। ক্রেতারাও খুশি।
চারঘাট উপজেলার গরু ব্যবসায়ী মোসাব্বের হোসেন জানান, ভারত থেকে এবার গরু-মহিষের আমদানি নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবি’র তৎপরতায় এবার ভারতীয় গরু-মহিষ নেই। তারপরও গত বছরের তুলনায় এবার ক্রেতা এখনো কিছুটা কম। ক্রেতা কমের সঙ্গে এবার দামও কম। তিনি বলেন, এবার দেশীয় জাতের পর্যাপ্ত গরু-মহিষ কোরবানির জন্য রয়েছে। খামারিরা আগে থেকেই এসব গরু লালন-পালন করেছেন। কিন্তু দাম কম হলে তারা তো লোকসানের মুখে পড়বে। সিটিহাটে গরু কিনতে আসা তাছের আলী বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার দাম একটু কম হওয়ায় আগেই গরু কিনে নিলাম। সামনে দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দেরি না করে কোরবানির গরু কিনলাম।
গত শুক্রবার তাহেরপুর হাটে গরু বিক্রি করতে যাওয়া খামারি সাইফুল ইসলাম বলেন, এবার তার খামারে ৩৫টি মাঝারি সাইজের গরু রয়েছে। তাহেরপুর হাটে তিনি সাতটি গরু তুলেছেন। কিন্তু যে দাম হাঁকা হচ্ছে তাতে লাভ হবে না। তিনি বলেন, অনেক আশা করে এবার খামারে গরু পালন করেছি। সেই গরু যদি লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয়, তাহলে খামারে অবশিষ্ট বলে কিছু থাকবে না।
সিটিহাট ইজারাদার খাইরুল ইসলাম বলেন, এই হাটে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী টিম। জাল টাকা শনাক্তকরণে বসানো হয়েছে মেশিন। ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতার দিকে নজর রেখে এবার হাট পরিচালনা করা হচ্ছে।
পবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, রাজশাহীর কোরবানির হাটগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় গঠন করা হয়েছে ২১৩টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম। এসব টিম কোরবানির হাটে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কাজ করছেন। অসুস্থ গরু, ছাগল, মহিষের স্বাস্থ্যগত সমস্যা শনাক্ত হলেই সেটি ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তবে, এখন পর্যন্ত কোরবানির কোনো হাট থেকে কোনো পশু ফেরত পাঠানো হয়নি।
প্রসঙ্গত, এ বছর রাজশাহী জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৩টি গবাদি পশু। যা জেলার চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের দাবি- ভারতীয় গরু শেষ পর্যন্ত না ঢুকলে দেশি খামারিরা লাভবান হবেন।