দেশ বিদেশ
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ‘রিঅ্যাডজাস্টমেন্ট’ হচ্ছে- পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবারভারতের সঙ্গে ‘ভেঙে যাওয়া’ সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস বা পুনর্গঠন চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এমনটাই জানালেন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বৃহস্পতিবার সেগুনবাগিচায় অনানুষ্ঠানিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বিগত সরকারের আমলে যেভাবে ছিল সেভাবে নেই, এটা স্বীকার করেই বলছি- ‘সম্পর্কটি রিঅ্যাডজাস্টমেন্টের পর্যায়ে আছে।’ উপদেষ্টা ‘রিঅ্যাডজাস্টমেন্ট’- শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দিতে চাননি। প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের শীতল সম্পর্কের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল উপদেষ্টার। জবাবে তিনি বলেন- ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ‘শীতল’ এটা আমি কখনোই মনে করি না। তাছাড়া রোহিঙ্গা সংকট ছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গেও বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নেই। চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সমপ্রতি পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে কুনমিং বৈঠক বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন- এটা রাজনৈতিক পর্যায়ের কোনো বিষয় নয়। বৈঠকটি আনুষ্ঠানিক কোনো কাঠামোর আওতায়ও হয়নি। সেখানে যোগাযোগসহ সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কোনো জোট গঠন হয়নি। এ ধরনের বৈঠক আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হরহামেশা হয়ে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, কুনমিং বৈঠকটি নিয়ে যেসব কথা হচ্ছে, তা দেশগুলোর নামের কারণে। এ বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। এ বৈঠকের তেমন বিশেষত্ব নেই বলেও দাবি করেন উপদেষ্টা। ভারতের দিক থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, দিল্লিকে কোণঠাসা করতে তাদের টার্গেট করে কুনমিংয়ে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। বিষয়টি কি তাই? এমন প্রশ্নে উপদেষ্টার সাফ জবাব- অবশ্যই অন্য কোনো দেশকে টার্গেট করে কুনমিং বৈঠকটি হয়নি। বা দেশ দু’টির সঙ্গে কোনো জোট গঠন করা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনো জোট গঠন করছি না আমরা।’ বৈঠকটি কর্মকর্তা পর্যায়ে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা তৃতীয় কোনো দেশকে টার্গেট করে হয়নি। সেখানে এসব নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এ সময় উপদেষ্টা বলেন- ভারতও যদি নেপালসহ একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করতে চায়, বাংলাদেশ তা করবে।
উল্লেখ্য, গত ১৯শে জুন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে নিয়ে চীন কুনমিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হয়। ‘নবম চায়না-সাউথ এশিয়ান এক্সপজিশন অ্যান্ড দ্য সিক্সথ চায়না-সাউথ এশিয়া কো-অপারেশন’- শীর্ষক বৈঠকের সাইডলাইনে তিন দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের ওই বৈঠক হয়। এ নিয়ে ৩ দেশ ৩ ধরনের বক্তব্য দিয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে সরকারের চেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রেসপন্স প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, প্রত্যাবাসনই এই সংকটের একমাত্র সমাধান। এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায় একমত। কিন্তু এটির বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায় নয় বরং মিয়ানমারকেই করতে হবে। ইস্যুটি যাতে বিশ্বের অন্যান্য সমস্যার ভিড়ে হারিয়ে না যায় সেজন্য এ নিয়ে দুনিয়ার যেখানেই আলোচনার সুযোগ রয়েছে ঢাকা তা গ্রহণ করে। যুদ্ধের কারণে ইরান ছেড়ে আসা ২৬ জন বাংলাদেশি কিছু সময়ের মধ্যেই পাকিস্তান সীমান্তে পৌঁছাবেন জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন- পাকিস্তান সরকার তাদের করাচি পর্যন্ত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবে। এরপর তারা আকাশপথে দেশে ফিরবেন। যুদ্ধবিরতি হওয়ায় আপাতত অনেকেই আর দেশে ফিরতে চান না বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।