বাংলারজমিন
জোবায়দুরের এত সম্পদের উৎস কী
প্রতীক ওমর, গাইবান্ধা থেকে ফিরে
১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
‘নিয়োগ বাণিজ্যে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ জোবায়দুর’ এ শিরোনামে গত বছর ২০২৪ সালের ১লা অক্টোবর দৈনিক মানবজমিনে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপর থেকে জোবায়দুর রহমানের দ্বারা প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা মুখ খুলতে শুরু করেন। নিয়োগ বাণিজ্যের টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। স্থানীয় একাধিক সূত্র বলেছে জোবায়দুর তার পিতার থেকে মাত্র ১০ শতাংশ জমি পেয়েছিলেন। পৈতৃক সম্পত্তির উল্লেখযোগ্য না থাকলেও তিনি বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে অনেক জমি কিনেছেন। আলিশান বাড়িও করেছেন। স্থানীয়রা বলেছেন, জোবায়দুর স্কুলটির প্রধান শিক্ষক হওয়ার পরই তার সম্পদ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। তার আয়ের উৎস এবং সম্পদের খোঁজ নিলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন অনেকেই। পবন তাইড়, সাঘাটা, ঝাড়াবর্ষা এমনকি তার শ্বশুরবাড়ি এলাকাতেও তিনি বহু জমি কিনেছেন। সাঘাটায় দুইটা জায়গা প্রায় কোটি টাকায় কিনেছেন বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী। জোবায়দুর গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পবনতাইড় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে তার অনেক ক্ষমতা ছিল। কখনো তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার মরহুম ফজলে রাব্বির লোক ছিলেন, কখনো সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান রিপনের লোক হিসেবে দাপট দেখাতেন। পবনতাইড় আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি ওই সময় ব্যাপক অনিয়ম করেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি ওই স্কুলের সঙ্গে জড়িত আছেন। প্রধান শিক্ষক হওয়ার সুবাদে তিনি শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার নাম করে এলাকার বহু মানুষের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অভিযোগের পাহাড় নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামান নি তিনি। আওয়ামী লীগের দলীয় শক্তি প্রয়োগ করেছেন সব সময়। ২০ জনেরও অধিক চাকরি প্রত্যাশী তার হাতে টাকা দিয়ে জিম্মিদশায় পড়েছেন। চাকরি তো দূরের কথা পথের ফকির বানিয়েছেন অনেককে। প্রতিকার চেয়ে একাধিকবার বার প্রশাসনের উচ্চপদের কর্তাদের নিকট অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয়নি। উল্টো জোবায়দুরের দাপটের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে।
আলী আজম নামের একজন সহকারী শিক্ষক (মৌলভি) যোগদান করেন ১২ই এপ্রিল ২০১৫। তিনি বলেন, নিয়োগ দেয়ার নামে প্রধান শিক্ষক জোবায়দুর রহমান তার কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করেন। তার দাবিকৃত টাকা দিতে না পারার কারণে শেষ পর্যন্ত চাকরি হয়নি। তার জায়গায় অন্য একজনের কাছে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা নিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এরকম অনেক জনের থেকে জোবায়দুর টাকা নিয়ে কাউকে চাকরি দিয়েছেন আবার কাউকে চাকরি দেননি। টাকাও ফেরত দেননি। এসব টাকা দিয়ে তিনি বাড়ি করেছেন এবং বিভিন্ন জায়গায় জমিজমা কিনেছেন।
মতিউর রহমান। সহকারী শিক্ষক ইংরেজি। যোগদান করেন ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। স্কুলের ঘর নির্মাণ, কাগজপত্র তৈরিসহ নানা অজুহাতে ২০০৪ সাল থেকে ২০২২ সাল এমপিও হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তার থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এরপর প্রতিষ্ঠান এমপিও হয়ে গেলে অধ্যক্ষ জোবায়দুর তার কাছে আরও ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। মতিউর রহমান সেই টাকা দিতে না পারায় তাকে আর নিয়োগ দেননি। পরে ওই পদে ২০ লাখ টাকায় অন্য একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। দীর্ঘ ১৮ বছর প্রতিষ্ঠানটির পেছনে সময় দিয়ে শেষ পর্যন্ত জোবায়দুরের অনৈতিক দাবির কাছে হেরে যান মতিউর। তিনি তার জীবনের কষ্টগুলো মানবজমিনের কাছে ব্যক্ত করেন এভাবেই।
স্থানীয় বাসিন্দা এটিএম আসাদুল্লাহ বলেন, জোবায়দুর আপদমস্তক একজন দুর্নীতিবাজ। শিক্ষক নিয়োগে তিনি ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন। ব্যান বেইজ পর্যালোচনা করলে তার দুর্নীতির বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তিনি বলেন, তার বিদ্যালয়ের পাশে আমার নিজের জমি ৩ শতাংশ জোর করে দখল করে নেন তিনি। বিষয়টি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হলেও কোনো সুরাহা মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জোবায়দুর রহমান বলেন, শত্রুপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা ছড়ায়। আমার নিজের কিছু লোকজন আছে যাদের সঙ্গে আমার জমিজমা নিয়ে বিরোধ তারাই মূলত আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করে আসছে। অভিযোগগুলোর সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। বিভিন্ন জায়গায় জমিজমা কেনার বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি।