বাংলারজমিন
নিষেধাজ্ঞার প্রজ্ঞাপন বহাল, তবু প্রকাশ্যে চলছে রাজনীতি
বাকৃবি প্রতিনিধি
১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবারবাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সবধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও তা কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। উপরন্তু ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়নসহ সব সংগঠনই ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছে দলীয় কার্যক্রম। প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে ক্রমেই সক্রিয় হচ্ছে সংগঠনগুলো- এমনটিই অভিযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর ২৮শে আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সকল ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। এরপর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. হেলাল উদ্দীন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবে সিদ্ধান্ত ঘোষণার এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সেই নির্দেশনার বাস্তব প্রতিফলন ম্লান হয়ে গেছে। এমনকি রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রদল, শিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রভৃতি সংগঠনে যোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী জানান, নিষেধাজ্ঞা জারি করেই দায় শেষ করেছে প্রশাসন। কেউ নিয়ম ভাঙলেও দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এতে করে রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা কেবলই কাগজে-কলমে থেকে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা নিয়মিত হলে হলে গিয়ে সদস্য ফরম বিতরণ করছেন এবং কর্মী সংগ্রহ করছেন। তারা বিভিন্ন হলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারেরও চেষ্টা করছেন। এ ছাড়াও মিছিল ও শোডাউন নিয়মিত চলছে। ধীরে ধীরে আগের সেই ছাত্রলীগের ধারার রাজনীতিতেই ফিরে যাচ্ছেন তারা বলে অভিযোগ ওই হলের শিক্ষার্থীদের। এদিকে, ইসলামী ছাত্রশিবির সরাসরি মিছিল না করলেও দলীয় পরিচয়ে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিবির কর্মীরা শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিভিন্ন সময় খাবারের আয়োজন করছেন এবং কর্মী সংগ্রহ করছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা আগেও ক্যাম্পাস রাজনীতি চায়নি, এখনো চায় না। গণ-অভ্যুত্থানের পরেও লেজুড়বৃত্তির এই রাজনীতি আমাদের সামনে নেয়ার বদলে পিছিয়ে দিচ্ছে। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ থাকুক, যেখানে শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলার মতো প্রতিনিধি থাকবে। রাজনৈতিক কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি আমরা চাই না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, আমরা কখনো ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে নই। ছাত্রলীগের নোংরামি দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজনীতি বিমুখ হয়েছে। যারা গোপনে রাজনীতি করে, তারাই রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে অন্যদের দমন করতে চায়। বাকৃবি ছাত্রদল বিশ্বাস করে, সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চা হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, বিগত ১৫ বছর ছাত্র রাজনীতির যে ভয়াবহ রূপ দেখেছি আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে আর দেখতে চাই না। বাকৃবি প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধের যে প্রজ্ঞাপন দিয়েছিল, আমরা তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ক্যাম্পাসে একাধিক ছাত্র সংগঠন আগের মতোই রাজনৈতিক কার্যক্রম চলমান রাখে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যপারে নীরবতা পালন করে।
এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বাকৃবি শাখার সভাপতি সঞ্জয় রায় বলেন, আমরা বলেছিলাম ছাত্র রাজনীতি একটি উচ্চতর হৃদয়বৃত্তি যদি শিক্ষা, শিক্ষার্থী তথা ক্যাম্পাস, দেশ ও দশের স্বার্থে হয়। প্রত্যেকেরই সেই ছাত্রবান্ধব রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। আবার যদি কেউ রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে না চায়, তার সেই অংশগ্রহণ না করার অধিকারও আছে। যদি আগামী দিনের ছাত্র রাজনীতি ছাত্রবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হয়, তবে আমাদের প্রশাসনের উচিত ব্যাপক রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি, হল, ক্যাম্পাসে সকল প্রকার দমনমূলক অপরাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ করে, সুষ্ঠু ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনির্মাণ করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘সিন্ডিকেট সভায় নেয়া রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত এখনো বহাল রয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডে প্রশাসন অত্যন্ত বিরক্ত। তারা কোনো কর্মসূচির জন্য প্রশাসনিক অনুমতিও নিচ্ছে না। বারবার বলা সত্ত্বেও তারা নিয়ম মানছে না। আমি সকলকে আবারো স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সবার জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ। জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেলে এরপর একে একে বাকসু ও শিক্ষক সমিতি নির্বাচন নিয়ে ভাবা হবে।