বাংলারজমিন
ভৈরবে শিক্ষককে লাঞ্ছিতের অভিযোগ যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবারকিশোরগঞ্জের ভৈরবে অফিস কক্ষে ঢুকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মো. আজিম রানা ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত রোববার রাতে ভৈরব থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক একে এম মাসুদ। এর আগে ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী পূর্বকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লাঞ্ছিত ও মারধরের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা পলাতক রয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভৈরব সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব। জানা যায়, অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা রানা গজারিয়া ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পূর্বকান্দা গ্রামের মো. এলাছ উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে। সরজমিন বিদ্যালয়ে সোমবার সকালে দেখা যায় পুলিশি পাহাড়ায় বিদ্যালয় পরিচালনা করা হচ্ছে। এসময় প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ে কর্মরত অন্যান্য শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, বিগত দুই বছর ধরে আজিম রানা বিদ্যালয়ে এসে আধিপত্য বিস্তার করতো। বিভিন্ন সময়ে স্কুলের বেঞ্চ ও অন্যান্য জিনিসপত্র জোর করে নিয়ে যেত। প্রতিবাদ করলেই সে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও মারতে আসতো। এমন ঘটনা আরো আগেও ঘটেছে। বিদ্যালয়ের পাশে ওই যুবলীগ নেতার বাড়ি হওয়ায় তার ভয়ে চুপ থাকতে হয়। গত ছয় মাস আগেও বিদ্যালয় থেকে বেঞ্চ নিয়ে গেলে দপ্তরিকে নিয়ে বেঞ্চ আনতে গেলে সে গালিগালাজ করে ও হুমকি দেয়। গেলো ঈদের বন্ধের সময় সে কাউকে না জানিয়ে বিদ্যালয়ের পানির ট্যাংক থেকে পাইপ লাগিয়ে পুকুরে পানি দেয়। যার কারণে বিদ্যালয়ের একমাত্র পাম্পটি পুড়ে যায়। তাছাড়া সে একজন মাদক সেবনকারী। প্রায় সময়ই দপ্তরির রুমে এসে জোর করে মাদক সেবন করতো। বিদ্যালয়ে মাদক সেবনে বাধা দিলে সে উগ্র হয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতো। তার অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তার মায়ের কাছে বিচার দেয়ার জেরে ২৯ জুন রোববার দুপুরে বিদ্যালয়ে অফিস রুমে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে এবং একপর্যায়ে আমার শার্টের কলার ও গলায় চিপ দিয়ে ধরে মারধর করে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক শিক্ষা অফিসার মহোদয়কে জানালে তখন তিনি থানায় যোগাযোগ করে পুলিশ পাঠায়। পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে এবং সবকিছু নোট করে নিয়ে যায়। রাতে আমি ভৈরব থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সে যুবলীগ নেতা। তার বাবা বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ছিলেন। এখন তার ভাই বিএনপির নেতা ও দাতা সদস্য। আমিসহ আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি অপরাধীর কঠোর বিচার চাই।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রানা একজন মাদকসেবী। তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা রয়েছে। তার আরেক ভাই মাসুদ ভূঁইয়াকে কিছু দিন আগে ডাকাতির অভিযোগে থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ছিদ্দিকুর রহমান জানান, বিদ্যালয় চলাকালীন আজিম রানা অফিস রুমে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও মারধর করে। এই ঘটনায় যুবকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ভৈরব সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব বলেন, ওই শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও মারধর সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে জড়িত যুবককে এখনো আটক করা যায়নি। এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।