বাংলারজমিন
ব্রহ্মপুত্রের থাবায় বিলীন শত শত বসতবাড়ি
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
চরাঞ্চলের মানুষগুলোর সাজানো গোছানো সংসার যেন নিমিষেই শেষ হয়ে যায় নদীর ভাঙনে। কিন্তু ভাঙনে নিঃস্ব পরিবারগুলো দিশাহারা হয়ে পড়লেও নেই সঠিক কোনো পদক্ষেপ। ফলে প্রতি বছর হাজারো একর ফসলি জমিও বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে, শত শত পরিবার হচ্ছে নিঃস্ব, বাড়ছে দ্রারিদ্যের হার। চরাঞ্চলের মানুষ ভাঙন থেকে বাঁচতে চায়, চায় সুখের সংসারে স্বপ্ন বুনতে, ফসল ফলিয়ে দেশ-বিদেশে রপ্তানি করতে। ত্রাণ নয়, তারা চর বাঁচাতে চায়। জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রামের চিলমারী নয়ারহাট, চিলমারীসহ যুগযুগ ধরে টিকে থাকা চরাঞ্চল ভাঙছে। ভাঙনের তাণ্ডব শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্র। গত ১ মাসে পানি কমা-বাড়ায় চিলমারী ইউনিয়নের দু’টি গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার, নয়ারহাটসহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। বহু পরিবার বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নিয়ে করছেন মানবেতর জীবনযাপন। ভাঙনে পরিবারগুলো শুধু বসতবাড়ি আর সাজানো সংসার হারায়নি, হারিয়েছে দীর্ঘদিনের একসঙ্গে কাটনো বন্ধন। ভাঙনের শিকার আতারুল মিন্টু জানান, প্রায় ৩০ বছর থেকে শাখাহাতি চরে বাস আমাদের কিন্তু নদীর ভাঙন সব কেড়ে নিয়ে আমাদের আশ্রয়হীন করে দিলো। ত্রাণ আসলে বা কি আর না আসলে বা কি? ত্রাণ না দিয়ে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করলে আর চরের ফসলি জমি রক্ষা করলে এই অঞ্চল থেকে বাহিরে ত্রাণ দেয়া যাবে বলে জানালেন চরবাসী। আ. মজিদ আক্ষেপ করে বলেন, চিলমারীর বিভিন্ন চরে যে ফসল ফলে কোটি কোটি টাকা আয় করে রপ্তানি করা সম্ভব কিন্তু চর রক্ষায় কখনো পদক্ষেপ দেখলাম না। চিলমারী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, চরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদ্যুৎ দেয়া হলো, বিভিন্ন স্থাপনাও দেয়া হচ্ছে, হাজার হাজার পরিবারের বসতবাড়ি কিন্তু চরগুলো রক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেই। তিনি আরও জানান, কতোবার পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা আমলে না নিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য কিছু জিওব্যাগ দিলেও এটি ডাম্পিং করতে কোনো খরচ দেয়া হয় না। তিনি আরও বলেন, চরগুলো রক্ষা করা না গেলে এক সময় লাখ লাখ টন ভুট্টা, মসলা, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন কমে গিয়ে খাদ্যসংকটও দেখা দিতে পারে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক জানান, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। ভাঙনের শিকার পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও প্রকৃত তালিকা করে তাদের সহায়তা করা হবে।