প্রথম পাতা
ইসি’র নির্দেশনা পেলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত সেনাবাহিনী
স্টাফ রিপোর্টার
৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে নির্দেশনা পেলে সেনাবাহিনী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। গতকাল দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস ‘এ’-তে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যদের ডেপুটেশনে পাঠালেও তাদের সেনাবাহিনী থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, সেনাবাহিনীতে থাকা সদস্যদের মধ্যে যারা বিভিন্ন সংস্থায় ডেপুটেশনে কর্মরত তাদের কয়েকজন গুমের সঙ্গে জড়িত। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তে যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আর ভুক্তভোগী পরিবারদের কেউ যদি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে সহযোগিতা চান, তাহলে আমরা যথাযথভাবে সহযোগিতা করবো। এ সময় থানাগুলোতে অস্ত্র লুটের বিষয়ে তিনি বলেন, দেশে যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ইতিমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ নির্বাচনের আগেই উদ্ধার হবে বলে আমরা আশাবাদী। কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে কর্নেল শফিকুল ইসলাম জানান, সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে ৪০০ জনেরও বেশি কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে অলিতে-গলিতে সেনাবাহিনী সব সময় থাকতে পারে না, তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গত দুই সপ্তাহে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার, অভিযান সম্পর্কে বর্ণনা দেন এই সেনা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনী ২৬টি অবৈধ অস্ত্র ও ১০০ রাউন্ড গুলির খোঁজ পেয়েছে। গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে মোট ৯ হাজার ৬৯২টি অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। একই সময়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৫৬২ জনসহ ৫ই আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার ৬৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। যাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, ডাকাতসহ অন্যান্য অপরাধী রয়েছেন।
কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী ২১শে জুন খুলনার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী বুলবুলকে তার চারজন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে। অভিযানে একটি অত্যাধুনিক বিদেশি পিস্তল, একটি দেশীয় পিস্তল, একটি শটগান এবং ২ রাউন্ড অ্যামোনিশন উদ্ধার করা হয়। ওই সন্ত্রাসী বুলবুল ‘বুলবুল গ্রুপ’ নামে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতা। গত ২৯-৩০শে জুন মীর হাজিরবাগ আল আমীন সন্ত্রাসী গ্রুপের দু’জন সক্রিয় সদস্য আনিছ ও হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ অভিযানে তিনটি বিদেশি পিস্তল, একটি বিদেশি রিভলবার, তিনটি ম্যাগাজিন ও ১১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়াও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে গত দুই সপ্তাহে ৪৫ জন মাদক ব্যবসায়ী এবং আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৫ হাজার ৫২১ জনকে সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনী মাদকের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে সফল অভিযান পরিচালনা করে।
এ ছাড়াও গত ১৭ই জুন টঙ্গি মাজার বস্তি এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মাদক ব্যবসা ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ২৪ জন ও গত ২৬শে জুন সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে অভিযান পরিচালনা করে ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে বলে জানান কর্নেল শফিকুল ইসলাম। চোরাচালান প্রতিরোধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গত ১৭ই জুন সুনামগঞ্জ জেলায় বিপুল পরিমাণে গলদা চিংড়ি উদ্ধার করে। একইসঙ্গে দুইজন চোরাকারবারিকে আটক করা হয়। এ ছাড়াও গত ১৯, ২১, ২৪শে জুন সিলেটের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ প্রসাধনী ও শাড়ি জব্দ করা হয়। যা আনুমানিক বাজারমূল্য ৪ কোটি টাকা। ভেজাল খাদ্য দ্রব্য তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনার অংশ হিসেবে গত ২৯শে জুন ফরিদপুর জেলায় ভেজাল শিশু খাদ্য তৈরির সঙ্গে জড়িত একটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানাসহ কারখানাটি সাময়িক বন্ধ ও মালিককে আটক করা হয়। গত ২২শে মে মাছের ঘেরে আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে অভয়নগরের কিছু বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ওই ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ওইসব বাড়ি সংস্কারসহ পুনঃনির্মাণ করে দেয়া হয়। গত ২২শে জুন উত্তরায় নিজ বাসভবনে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এ.কে.এম নূরুল হুদা মব ভায়োলেন্সের শিকার হন। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ২৩শে জুন র্যাব-পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত মো. হানিফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে সেনাবাহিনী। ওই ঘটনার মূলহোতা মোজাম্মেল হক ঢালি ২৫শে জুন আদালত থেকে আগাম জামিন গ্রহণ করে। গত ২৬শে জুন কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে সংঘটিত নারী নির্যাতন ও বর্বরতার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। ওই ঘটনার মূল আসামি ফজর আলীসহ ভিডিও ধারণকারী চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেনাবাহিনী ভুক্তভোগী পরিবারের সুরক্ষা ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় পূর্ণ সহযোগিতা করছে।