ঢাকা, ৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১২ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রথম পাতা

সানেমের জরিপ

আগামী নির্বাচনে বিএনপি ৩৯%, জামায়াত ২১% এনসিপি ১৬% ভোট পাবে

স্টাফ রিপোর্টার
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার

আগামী নির্বাচনে বিএনপি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাবে জামায়াত। এর পরে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি। সোমবার সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) প্রকাশিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে জরিপের এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

তরুণদের ওপর চালানো জরিপ অনুযায়ী, বিএনপি ৩৮.৭৬ শতাংশ ভোট পাবে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে জামায়াত, যারা পাবে ২১.৪৫ শতাংশ ভোট। অন্যান্য ধর্মীয় দলগুলো ৪.৫৯ শতাংশ ভোট পেতে পারে বলে মনে করেন তারা। এ ছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ১৫.৮৪ শতাংশ, জাতীয় পার্টি ৩.৭৭ শতাংশ এবং অন্যান্য দল ০.৫৭ শতাংশ ভোট পেতে পারে। আর গত ৫ই আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে ১৫ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেতে পারে।

১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ২ হাজার তরুণ-তরুণীর অংশগ্রহণে পরিচালিত জরিপটিতে মোট ১৭টি কেস স্টাডি অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাতে তরুণদের অভিজ্ঞতা ও মতামতের বিভিন্ন দিকগুলো উঠে আসে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি’র নিচে ৪০ শতাংশ, এসএসসি বা এর উপরে ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে শহরের ছিল ৫০ শতাংশ এবং গ্রামের ৫০ শতাংশ।

উল্লেখ্য, জরিপে অংশগ্রহণকারী পুরুষদের মধ্যে ৪০ শতাংশ বিএনপিকে, ২২.২১ শতাংশ জামায়াতে ইসলামীকে এবং ১৪.৪৪ শতাংশ এনসিপিকে ভোট দেয়ার কথা জানিয়েছেন। অপরদিকে, নারী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৭.০৩ শতাংশ বিএনপি, ২০.৫৭ শতাংশ জামায়াত এবং ১৭.৪৭ শতাংশ এনসিপিকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। অর্থাৎ জরিপ অনুযায়ী, এনসিপি’র প্রতি নারী ভোটারদের সমর্থন পুরুষ ভোটারদের তুলনায় কিছুটা বেশি।

জরিপে আরও দেখা গেছে, বিএনপিকে ভোট দেয়ার বিষয়ে গ্রামীণ অঞ্চলের ৩৭.৭২ শতাংশ এবং শহর অঞ্চলের ৩৯.৭৭ শতাংশ উত্তরদাতা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। জামায়াতের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন গ্রামে ২১.২৫ শতাংশ এবং শহরে ২১.৬৬ শতাংশ। এনসিপি’র ক্ষেত্রে এ হার গ্রামে ১৫.৩৮ শতাংশ এবং শহরে ১৬.২৮ শতাংশ।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার কথা বলেছেন গ্রামীণ অঞ্চলের ১৬.৬২ শতাংশ এবং শহর অঞ্চলের ১৩.৪৬ শতাংশ ভোটার। অর্থাৎ জরিপ অনুযায়ী, দলটির প্রতি গ্রামীণ ভোটারদের সমর্থন শহরের তুলনায় কিছুটা বেশি।

জরিপে আরও দেখা গেছে, চাকরির বাজার সম্পর্কে তরুণদের উপলব্ধি বেশ গভীর ইঙ্গিত দেয়। তরুণদেরকে শিক্ষা কতোটা চাকরির জন্য প্রস্তুত করেছে, এমন প্রশ্নে মাত্র ১৪.৫৪ শতাংশ নিজেদের ভালোভাবে প্রস্তুত মনে করেছে, অন্যদিকে ৩০.৭৮ শতাংশ মনে করে তাদের শিক্ষার চাকরির প্রস্তুতিতে কোনো অবদানই নেই। ক্যারিয়ার চাহিদার ক্ষেত্রে, ৩৬.৯৯ শতাংশ সরকারি চাকরিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, আর ২৬.৪১ শতাংশ উদ্যোক্তা হতে চায়। লিঙ্গভিত্তিকভাবে দেখা গেছে, নারীদের মধ্যে ৪১.৭৫ শতাংশ সরকারি চাকরিকে পছন্দ করে, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এই হার ৩২.৮৭ শতাংশ।

চাকরির বাজারে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ৫৪.৭২ শতাংশ তরুণ ঘুষ ও স্বজনপ্রীতিকে চিহ্নিত করেছে। 

জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী রাজনীতি ও সংস্কার নিয়ে তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গিও জরিপে তুলে ধরা হয়েছে। রাজনৈতিক সচেতনতার দিক থেকে দেখা যায়, মাত্র ২৩.৩৭ শতাংশ তরুণ নিয়মিত রাজনীতি অনুসরণ করে, ৩৯.০৯ শতাংশ মাঝে মাঝে করে, আর ৩৭.৫৪ শতাংশ একেবারেই আগ্রহী না। নারীদের মধ্যে ২৪.২৭ শতাংশ জাতীয় রাজনীতিতে আগ্রহী না, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এ হার ১৬.৪৮ শতাংশ। 

রাজনৈতিক দলের কার্যকারিতা নিয়ে তরুণদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি স্পষ্ট। মাত্র ১১.৮২ শতাংশ মনে করে, রাজনৈতিক দলগুলোর এজেন্ডা দেশের প্রকৃত সমস্যা প্রতিফলিত করে, যেখানে ৪৯.৪২ শতাংশ একেবারেই এ বিষয়ে একমত নন। অর্ধেক তরুণ (৫০.১ শতাংশ) মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সঙ্গে কোনো সংযোগ স্থাপন করতে পারেনি, আর বিপরীতে মাত্র ১৬.১ শতাংশ তরুণ মনে করেন যে দলগুলো তরুণদের সঙ্গে যুক্ত।

রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়েও তরুণদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। মাত্র ৩.৩ শতাংশ মনে করেন সংস্কার ছাড়াই পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব। তবে ৫৬.৪ শতাংশ বিশ্বাস করেন, যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে পরিবর্তন সম্ভব। অপরদিকে, ১১.৩ শতাংশ তরুণ ভবিষ্যতে পরিস্থিতির আরও অবনতি দেখছেন এবং ১৩.১ শতাংশ মনে করেন, কিছুই পরিবর্তন হবে না।

এই পরিস্থিতির প্রতিফলন দেখা যায় রাজনীতিতে ভবিষ্যতে অংশগ্রহণ নিয়ে তরুণদের মনোভাবেও। ৮২.৭ শতাংশ তরুণ কোনোভাবেই রাজনীতিতে যুক্ত হতে আগ্রহী নন। ১১.৫ শতাংশ তরুণের মধ্যে কিছুটা আগ্রহ আছে এবং মাত্র ১.৬ শতাংশ বর্তমানে কোনো না কোনোভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন।

দেশের তরুণদের মধ্যে ৯৩.৯৬ শতাংশই আশাবাদী যে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। তবে ৬.০৪ শতাংশ ইতিমধ্যেই নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে ভোট দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ৭৬.৭৮ শতাংশ তরুণ, অন্যদিকে ৪.১৪ শতাংশ তরুণ ভোট দিতে অনাগ্রহী।

সংস্কার কোন খাত থেকে শুরু হওয়া উচিত, এই প্রশ্নে ৯৪ শতাংশ তরুণ একমত যে শিক্ষা খাত থেকেই পরিবর্তন শুরু করা দরকার। এরপর তরুণদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে স্বাস্থ্য খাত (৯২%), শ্রমবাজার (৯০%), মানবাধিকার (৮৯%), প্রাতিষ্ঠানিক শাসন (৮৫%), এবং নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা (৬৭%)। তবে ৩.৯৯ শতাংশ মনে করেন তাদের অগ্রাধিকারগুলো জরিপে একেবারেই প্রতিফলিত হয়নি, আর ১২.১৩ শতাংশের মতে এগুলো খুব সামান্যই উঠে এসেছে।

 

পাঠকের মতামত

ভূয়া, মানুষ নব্য চাঁদা বাজদের ভোট দিবে না, বার বার আবু সাঈদ ও মুগ্ধ সাহেবরা জীবন দিবে না।

রহমান
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ৬:১৯ অপরাহ্ন

জামাত ও সকল ইসলামি দল আর এনসিপি জোট হলেও মেজরিটি বলার কোন সুযোগ নেই। আর ইতি মধ্যে এনসিপি জনগণের সাথে প্রথম থেকেই চাঁদাবাজী, ধান্দাবাজ, দূর্নীতি শুরু করেছে, ভোট আদায় করা এত সহজ নয়। আর জামাত ও ইসলামি দলগুলোর মতলব জণগন অনেক আগেই বুঝে গেছে ।জোট হলেও 15%- 17% ভোট পেতে পারে!!

সাজিদ
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ৫:০৫ অপরাহ্ন

Jamat+NCP+all islamic party(together) will get 9-10%,BNP(alone) will get 45-50%, another all party will get 12-15% and balance 20-25% voter will not go for vote. Actually survey and practical situation is not same. Practically people Love and have sympathy for BNP very cordially.pls wait for election.

shafik
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩:০৪ অপরাহ্ন

দেশের সর্বস্তরের জনগণ পূর্বের চেয়ে বহুগুণ সচেতন। জনগণ চাঁদাবাজ, ধান্দাবাজ, দখলবাজ দূর্নীতিবাজ, হত্যা-খুন, দর্ষণের মত ঘৃণিত অপরাধের সাথে যারা জাড়িত নির্বাচনে তাদেরকে প্রত্যাখান করবে। এসব জরিফ আর বাস্তবতার মধ্যে বিরাট ফরাক রয়েছে!

মোঃ সাইফুল ইসলাম
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন

This survey is not correct Jamat can get 10-12% NCP can get 3-5% BNP-45-50%

chowdhury monibur ra
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন

জামাত, ইসলামি দলগুলো আর এনসিপি জোট হলে তারাই হবে মেজরিটি । আর ভোট কী রকম হয় দেখেন না !!

এস এ আজাদ
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন

মনে হয় না,এই রকম হবে।

Md.Nahid Hasan Iqbal
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ৮:৩১ পূর্বাহ্ন

ভুয়া জরিপ

হোসাইন
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:১৩ পূর্বাহ্ন

a rubbish survey.

পাঠক
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:০১ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status