ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

মনিরুলের আনা ২৫ কোটি টাকা গেল কোথায়?

মরিয়ম চম্পা
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবারmzamin

নিয়োগ, টেন্ডার বাণিজ্য, কেনাকাটা, নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ উঠছে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)-এর প্রধান কর্মকর্তা অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেষের দিকে পুরোটা সময় মনিরুল পুলিশ সদরদপ্তর ও ডিএমপি’র কন্ট্রোলরুমে কাটিয়েছেন। সূত্রমতে, আন্দোলন দমন-পীড়নের কাজে খরচের জন্য গণভবন থেকে সর্বশেষ গত ৪ঠা আগস্ট সকালে প্রায় ২৫ কোটি টাকা আনেন এই মনিরুল। পুরো টাকাটাই তার এসবি অফিসের নিজস্বকক্ষে সুরক্ষিত ছিল। ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর মনিরুল আর অফিস করেননি। এসবি সূত্র জানায়, এ সময় এসবি’তে কর্মরত তার হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে পরিচিত দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পুরো টাকাটাই গায়েব করে দেন। সূত্র জানায়, জঙ্গি অভিযান নাটকের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীতে নাম ছড়িয়ে পড়ে মনিরুলের। এ সময় তার প্রধান ও বিশেষ সহযোগী হিসেবে ছিলেন সাবেক কাউন্টার টেরোরিজম (সিটিটিসি) প্রধান এবং অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান ও পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অ্যাডমিন) পদে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা। সূত্র জানায়, গত ৪ঠা আগস্ট গণভবন থেকে ২৫ কোটি টাকা ছাত্র আন্দোলন দমাতে প্রণোদনা হিসেবে এসবি’র ডিউটিরত সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করতে এ টাকা আনেন মনিরুল। এসবি’র এসএস (অর্থ) এবং এসবি প্রধানের স্টাফ অফিসার পুরো বিষয়টি জানতেন। এসবি’র অতিরিক্ত ডিআইজিকে (প্রশাসন ও অর্থ) তারা বিষয়টি জানালে তিনজন মিলে সব অর্থ আত্মসাৎ করার সিদ্ধান্ত নেন। গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট আছে অজুহাতে এই টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর এসবি প্রধানের অফিস কক্ষ, তার বেইলি রোডের বাসা এবং সিটি এসবি’র ডিআইজি অফিসে তারা তিনজন তালা লাগান। ৬ই আগস্ট এসবি কার্যালয়ের সকল সিসিটিভি ও ডিশ লাইন কেটে দেন। ৬ই আগস্ট থেকে ১২ই আগস্ট পর্যন্ত এই সময়ের ভেতর এসবি প্রধান মনিরুলের দপ্তরে রাখা ২৫ কোটি টাকা তিনজন মিলে আত্মসাৎ করেছেন বলে জানিয়েছে সূত্র। 
এসবি’র একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সূত্র জানায়, মনিরের নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট ছিল। যেই সিন্ডিকেটে সাবেক মহানগর গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ, মনির, সারোয়ার নজরুলসহ একাধিক কর্মকর্তা ছিলেন। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুলিশের পোস্টিং, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য চালিয়েছেন। জানা গেছে, মনিরুলের কানাডায় নিজস্ব দু’টি বাড়ি এবং সিঙ্গাপুরে রয়েছে নিজস্ব ব্যবসা। ঢাকা, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বাজারের ব্যাগে করে টাকা আসতো মনিরুলের বাসায়। এসব টাকার ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করতেন এসবি’র বর্তমান এক ডিআইজি, এসএস ফাইন্যান্স এবং আরেক কর্মকর্তা। মনিরুলের ছিল স্থায়ী দুই রক্ষিতা। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় এক চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। সম্প্রতি তিনি এক নির্মাতাকে ঘটা করে বিয়ে করেন। এই অভিনেত্রীকে মনিরুল বেইলি রোডে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন। যেখানে মনিরুল নিয়মিত অবকাশ যাপন করতেন। আরেকজন বতর্মান সময়ের খ্যাতিমান বিজ্ঞাপন নির্মাতা এবং টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র পরিচালকের সাবেক স্ত্রী এবং অভিনেত্রী। সরজমিনে দেখা গেছে, রাজকীয়ভাবে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে এসবি প্রধান মনিরুলের নিজস্ব অফিস ও মিটিংরুম সাজিয়েছেন। মনিরুলের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার বাহাড়া গ্রামে। মনিরুলের বড় ছেলে ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করছেন এবং ছোট মেয়ে কানাডায়। তার স্ত্রী সংশ্লিষ্ট এক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব পদে কর্মরত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট গঠনে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন মনিরুল। এ ইউনিটের প্রধান হিসেবে তিনি পরবর্তীতে দায়িত্ব পালন করেন। ডিএমপি ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) এর প্রধান থাকা অবস্থায় জঙ্গি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে একদিকে যেমন সরকারের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। অন্যদিকে তার কপাল খুলে যায়। এ সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দমন-পীড়নের নামে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন মনিরুল। সিটিটিসিতে থাকা অবস্থায় তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন পুলিশ সদর দপ্তরের এক ডিআইজি (এডমিন)। মনিরুলের ঘনিষ্ঠ এক এসবি সূত্র জানায়, ৫ই আগস্ট পর্যন্ত মনিরুল, সাবেক পুলিশের মহাপরির্দক, গোয়েন্দা প্রধান হারুন, সিটিটিসি’র ডিআইজি মনির, ডিএমপি কমিশনার, সিআইডি প্রধানসহ একাধিক কর্মকর্তা পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপি’র অপারেশন কর্নার এবং কন্ট্রোলরুমে অবস্থান করেন। সরকার পতনের শেষের দিকে তারা এই দুই স্থানে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। ফিল্ডে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ধরনের দিক- নির্দেশনা দিতেন। ১লা আগস্ট থেকে অফিসে আসা বন্ধ করে দেন মনিরুল, সারোয়ার এবং নজরুল। মনিরুলের প্রতারণা থেকে বাদ যায়নি একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে একজন ঠিকাদারকে দিয়ে মনিরুল প্রায় ৪১ লাখ টাকার কাজ করালেও পরবর্তীতে তিনি বিল পরিশোধ করেননি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ঠিকাদার হতাশায় ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অভিযোগের বিষয়ে সম্প্রতি মানবজমিন’র সঙ্গে মনিরুলের হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। তিনি বলেন, ২৫ কোটি টাকা কোথা থেকে আসবে। ছাত্র আন্দোলনের সময় আমি আমেরিকায় ছিলাম একটি সেমিনারে। ২০শে জুন দেশে ফিরি। গণভবন থেকে টাকা আনার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ভিত্তিহীন। এটার কোনো সুযোগ নেই। কানাডায় ২টি বাড়ি, সিঙ্গাপুরে নিজস্ব ব্যবসা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি কখনো কানাডা যাইনি সেখানে বাড়ি থাকার প্রশ্নই আসে না। কানাডা কেন দেশেও আমার নিজ নামে কোনো ফ্ল্যাট নেই। নিয়োগ বাণিজ্য, ব্যাগভর্তি টাকা, টেন্ডার বাণিজ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিটি অভিযোগ মিথ্যা। বর্তমানে এসবিতে যারা কর্মরত আছেন বিশেষ করে ডিআইজি সারোয়ার তিনি এসব দেখে থাকেন। এগুলো আমার বিষয় না। তিনি বলেন, অভিনেত্রী-মডেলদের সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা বলে চরিত্র হননের চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমানে কোথায় আছেন জানতে চাইলে মনিরুল প্রথমে বলেন, ৫ই আগস্ট সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেন তিনি। বর্তমানে এক আত্মীয়ের বাসায় আছেন। 
 

পাঠকের মতামত

অবিলম্বে কুখ্যাত পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল এর এখনি গ্রেফতার চাই এবং উপযুক্ত বিচার চাই।

Tariqul islam
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৪:০২ পূর্বাহ্ন

Harun, monirul, biplob kumar & sorawar one group .need proper investigation for all crime and need to arrest them before they leave aboard ,Asap

Kamal
২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৮:২৪ পূর্বাহ্ন

মনিরুল এখনও গ্রেফতার হয়নি ?

SM. Rafiqul Islam
২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৩:৪৩ পূর্বাহ্ন

এখন ই সময় অনুসন্ধানই সাংবাদিকদের দিয়ে জাতির সামনে একটা সত্যের আয়না প্রতিষ্ঠা করা

MD Rezaul Karim
২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন

রাঘব বোয়ালরা কি সবসময় সুবিধা ভোগ করবে? আরাফাতের গ্রেফতারের কোন ভিডিও চোখে পরেনি, মনিরুলও হয়ত একইভাবে চলে যাবে।

Md Chowdhury
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৯:৪৬ অপরাহ্ন

মানবজমিন কে মনে রাখো জাতি।

Morsidul alam
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৯:১৯ অপরাহ্ন

গ্রেফতার এ এত দেড়ি কেন?

হাসান
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৬:০৮ অপরাহ্ন

মনিরুলকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি কেন?

Md Shamsul Islam
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৩:০১ অপরাহ্ন

এত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এই দুধর্ষ দের এখনও কেন গ্রেফতার করা হয় না !!!!!!!!

SHEIKH AMINUL ISLAM
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন

Change all A. League POLICE.

NADIM AHAMMED
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:২১ পূর্বাহ্ন

এদের এত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কেন এখনো গ্রেফতার হয় না

Ohab Abdullah
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

এই সুযোগ একমাত্র আওয়ামীলীগের সরকার ই তাদের দিতে পারে । তাই সব পুলিশ চায় আওয়ামীলীগের সরকার। লুটপাটের অবাধ লাইসেন্স। এরা স্বচ্ছ বাংলাদেশ সমর্থন করবে কি ?

Kazi
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৮:৫৬ পূর্বাহ্ন

একটা ডিআইজি লেভেলের পুলিসকে ২৫ কোটি টাকার জন্য এভাবে হেয় করে প্রতিবেদন লেখার বেপার টা মানতে পারলাম না। পুলিশদের মধ্যে যারা হাজার কোটি ক্লাবে নেই, বা কমপক্ষে শ' কোটি ক্লাবে নেই তাদের নিয়ে প্রতিবেদন লেখা আর সময় নষ্ট একই বেপার।

মেঘকুন্ড দাস
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

We want JUSTICE........

Towhidul HASSAN
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৭:৫০ পূর্বাহ্ন

অবিলম্বে কুখ্যাত পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল এর গ্রেফতার এবং উপযুক্ত বিচার চাই।

ফখরুল ইসলাম।
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৭:৪৯ পূর্বাহ্ন

এই ক্রিমিন্যালকে গ্রেফতার করতে হবে।

আইয়ুব
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৫:১২ পূর্বাহ্ন

নারায়ণগঞ্জে এসবি তে,অতিরিক্ত এস পি মাহাবুবর রহমান শামীমের সম্পদের অনুসন্ধান করা দরকার সে সাবেক এমপি এবং পুলিশের ঢাকা জেলার এক বড় কর্তার ছায়া তলে থেকে হাজার কোটি টাকার সম্পদ করেছেন।অনেক বার অভিযোগ দেয়ার পরও কাজ হয়নি।এখন সময় এই দুর্নীতি পরায়ন অফিসারে বিরুদ্ধে অভিযান চালানো।

বনি
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৩:১১ পূর্বাহ্ন

হোয়াটসঅ্যাপ যেহেতু এক্টিভ আছে সরকার চাইলেই ধরতে পারে। কিন্তু এদের ধরবে না...ধরবে ৮০ বছরের আওয়ামী লীগ নেতাদের।

নুরুল
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ২:৩৩ পূর্বাহ্ন

ডিম দিয়ে আপ্যায়ন করলে সব তথ্যই বের হবে।

আবুবকর
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১২:২৪ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status